উদ্যোক্তাদের মধ্য থেকে অর্থ সংগ্রহ করে ১২৫ কোটি টাকার আদায়কৃত মূলধন দিয়ে ব্যবসা শুরু করতে হবে এমন শর্ত দিয়ে ডিজিটাল ব্যাংকের নীতিমালা অনুমোদন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ডিজিটাল ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় ছাড়া দৃশ্যমান কোনো কার্যালয় থাকবে না। বুধবার (১৪ জুন) কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভায় এ নীতিমালা অনুমোদন করা হয়েছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র (ভারপ্রাপ্ত) আবুল বশার বলেন, ‘‘বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত পরিচালক পর্ষদের সভায় ডিজিটাল ব্যাংক গঠন সংক্রান্ত নীতিমালা অনুমোদন করা হয়।’’ ডিজিটাল ব্যাংকের প্রাথমিক ন্যুনতম আদায়কৃত মূলধন ১২৫ কোটি টাকা হবে উল্লেখ করে বলা হয়, এ অর্থ আবেদনকারী, উদ্যোক্তা ও স্পন্সরগণ সরবরাহ করবেন। ব্যাংকটির পরিচালনা সংক্রান্ত কার্যক্রম সম্পর্কে বলা হয়, ব্যাংক-কোম্পানী আইন, ১৯৯১ এর ধারা ৩১ এর আওতায় প্রতিটি ডিজটাল ব্যাংককে বাংলাদেশ ব্যাংক হতে লাইসেন্স গ্রহণ করতে হবে এবং পরিশোধ সেবা (পেমেন্ট সার্ভিস) পরিচালনার জন্য বাংলাদেশ পেমেন্ট অ্যান্ড সেটেলমেন্ট সিস্টেম রেগুলেশন, ২০১৪ এর বিধান অনুসরণ করতে হবে। নীতিমালায় ডিজিটাল ব্যাংকের কোন শাখা, উপশাখা, এজেন্ট, উইন্ডো থাকবে না। নিজস্ব কোন এটিএম/সিডিএম/সিআরএম থাকতে পারবে না উল্লেখ করে বলা হয়, শুধু প্রধান কার্যালয় থাকবে। এছাড়া স্পর্শযোগ্য কোনো স্থাপনা থাকবে না। প্রচলিত ব্যাংকের মতো ডিজিটাল ব্যাংকগুলো সরাসরি কাউন্টারে গ্রাহকদের কোন সেবা প্রদান করতে পারবে না। বৈদেশিক বাণিজ্য ঋণ, বৃহত্ত ও মাঝাড়ি শিল্পে মেয়াদি ঋণে অর্থায়ন করতে নিষেধাজ্ঞা দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। কোন ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে বর্তমান ঋণ খেলাপী কোন প্রতিষ্ঠান, কোম্পানী, ব্যক্তি বা তার পরিবারের কোন সদস্য এই ব্যাংকের উদ্যোক্তা হতে পারবে না। ডিজিটাল ব্যাংকের ব্যবসা শুরুর পর ৫ বছরের মধ্যে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে হবে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) এর মাধ্যমে। তবে এখানে শর্ত দেওয়া হয়, আইপিওর মাধ্যমে সংগৃহীত অর্থের পরিমাণ উদ্যোক্তাদের সরবরাহ করা প্রাথমিক মূলধনের কম হতে পারবে না। অর্থাৎ আইপিও’র মাধ্যমে কমপক্ষে ১২৫ কোটি টাকা বা ওই সময়ে উদ্যোক্তাদের সরবরাহকৃত অর্থের সমপরিমাণ মূলধন সংগ্রহ করতে শেয়ার ছাড়তে হবে পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীদের মাঝে। উদ্যোক্তাদের শেয়ার ৫ বছরের পূর্বে হস্তান্তর করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নিতে হবে। আর বাংলাদেশ ব্যাংক ৩ বছরের পূর্বে অনুমোদন দিতে পারবে না। ব্যাংকের স্পন্সরের (উদ্যোক্তা) হতে ন্যূনতম ৫০ লাখ টাকার শেয়ার ধারণ করতে হবে। ডিজিটাল ব্যাংকগুলো প্রচলিত ব্যাংকের মতো জামানত রেখে ঋণ প্রদান করতে পারবে। ঋণ দিতে অস্থাবর সম্পত্তি জামানত রেজিস্ট্রিতে অন্তর্ভুক্ত সম্পত্তি গ্রাহকের সহায়ক জামানত হিসেবে গ্রহণ করতে পারবে। ঋণ বিতরণে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক সময়ে সময়ে প্রদত্ত কৃত্রিম বুধিমত্তা ভিত্তিক বিকল্প ঋণ স্কোরিং গাইডলাইন অনুসরণ করবে। আর্থিক অন্তর্ভুক্তি কার্যক্রমকে আরো সমৃদ্ধ করতে অনলাইন প্রযুক্তি নির্ভর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, মেশিন লার্নিং, ব্লকচেইন এবং চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের অন্যান্য অগ্রসরমান প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হবে ডিজিটাল ব্যাংকগুলোকে। দৈনন্দিন লেনদেনের বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য গ্রাহক অবহিত করুক বা না করুক, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি নির্ভর একটি স্বয়ংক্রিয় বিবাদ মীমাংসা ব্যবস্থা সর্বদা সক্রিয় রাখতে হবে। প্রস্তাবিত ডিজিটাল ব্যাংকের শক্তিশালী, পরিশীলিত, পরিচালনাযোগ্য আইসিটি অবকাঠামো এবং অ্যাপ্লিকেশন সিস্টেম থাকতে হবে। এ ব্যবস্থায় কমপক্ষে টিয়ার থ্রি ডেটা সেন্টার (ডিসি) এবং ভিন্ন সিসমিক জোনে ডিজাস্টার রিকভারি সাইট (ডিআরএস) থাকতে হবে। লেনদেনের জন্য কোন প্রকার স্পর্শযোগ্য ইনস্ট্রুমেন্ট ইস্যু করতে পারবে না। একই পরিবার থেকে ব্যাংক-কোম্পানী আইন, ১৯৯১ অনুযায়ী নির্দেশিত তিন জনের অধিক পরিচালক থাকতে পারবে না। ডিজিটাল ব্যাংকের পর্ষদে কমপক্ষে শতকরা পঞ্চাশ ভাগ সদস্য প্রযুক্তিভিত্তিক ব্যাংকিং, উদীয়মান প্রযুক্তি, সাইবার আইন ও রেগুলেশন বিষয়ে পর্যাপ্ত শিক্ষা, জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা সম্পন্ন হতে হবে এবং অবশিষ্ট সদস্যগণ ব্যাংকিং, ই-কমার্স এবং ব্যাংকিং আইন ও রেগুলেশন ইত্যাদি বিষয়ে পর্যাপ্ত জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা সম্পন্ন হতে হবে। ডিজিটাল ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার (সিইও) প্রযুক্তিভিত্তিক ব্যাংকিং, ব্যাংকিং রেগুলেশন ও নির্দেশনা, ইত্যাদি বিষয়ে কমপক্ষে পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতা সহ ব্যাংকিং পেশায় কমপক্ষে ১৫ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। সিইও নিয়োগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক সময়ে সময়ে জারিকৃত রেগুলেশন ও নির্দেশনা পরিপালন করতে হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে এই নীতিমালায়।