×

অর্থনীতি

বাংলাদেশের উন্নতি বৈশ্বিক লজিস্টিকস সূচকে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৬ এপ্রিল ২০২৩, ০৮:৫৯ এএম

বাংলাদেশের উন্নতি বৈশ্বিক লজিস্টিকস সূচকে

ছবি: সংগৃহীত

বিশ্বব্যাংকের লজিস্টিকস পারফরম্যান্স সূচক- ২০২৩ এ বাংলাদেশের উন্নতি হয়েছে। গত শনিবার প্রকাশিত এ সূচকে দেখা যায়, বাংলাদেশের স্কোর ২ দশমিক ৬ এবং অবস্থান ১৩৯টি দেশের মধ্যে ৮৮তম। এর আগে ২০১৮ সালে এ সূচকের ফলাফল প্রকাশিত হয়। ২০১৮ সালে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১০০তম। তবে ওই বছর ১৬০টি দেশ অন্তর্ভুক্ত ছিল। ২০১৮ সালে বাংলাদেশের স্কোর ছিল ২ দশমিক ৫৮।

৬টি মানদণ্ডের আলাদা স্কোর যোগ করে গড় স্কোর নির্ণয় করা হয়। সূচক নির্ণয়ের জন্য যে জরিপ করা হয়েছে, তাতে ‘খুব কম’ পারফরম্যান্স বলতে ‘১’ এবং ‘খুব ভালো’ বলতে ‘৫’ স্কোর বোঝানো হয়েছে। পণ্য ও সেবার উৎপত্তিস্থল থেকে শুরু করে সর্বশেষ ভোক্তার কাছে পৌঁছানো পর্যন্ত সামগ্রিক ব্যবস্থাপনা বাণিজ্যের ক্ষেত্র ‘লজিস্টিকস’ নামে পরিচিত।

কোন দেশের লজিস্টিকস পরিস্থিতি কেমন, তা জানার জন্য বিশ্বব্যাংক ২০০৭ সাল থেকে লজিস্টিকস পারফরম্যান্স ইনডেক্স (এলপিআই) প্রকাশ করে আসছে। সর্বশেষ প্রকাশিত এ সূচকে বাংলাদেশের স্কোর এবং বিশ্বের দেশগুলোর মধ্যে অবস্থানের উন্নতি হয়েছে। বিশ্বব্যাংক ৫ বছর পর এ সূচক প্রকাশ করল, যার মধ্যে করোনা মহামারির কারণে দীর্ঘদিন বিশ্বে পণ্য সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হয়েছে।

বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, লজিস্টিকস পারফরম্যান্স জানার জন্য গত বছরের ৬ সেপ্টেম্বর থেকে ৫ নভেম্বর পর্যন্ত ২ মাস সময়কালে একটি জরিপ পরিচালনা করা হয়েছে। বিশ্বব্যাপী আন্তর্জাতিক লজিস্টিক অপারেটর অর্থাৎ ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার এবং এক্সপ্রেস ক্যারিয়ারদের কাছ থেকে অনলাইনে নির্দিষ্ট প্রশ্নমালার উত্তর নেয়া হয়েছে। জরিপের বাইরে সমুদ্রে জাহাজ চলাচল এবং কনটেইনারের অবস্থান জানা (ট্র্যাকিং), ডাক এবং পণ্য পরিবহনসংক্রান্ত বিভিন্ন উপাত্ত সূচক নির্ণয়ের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়েছে।

কোন মানদণ্ডে বাংলাদেশের অবস্থান কেমন : মোট ৬টি মানদণ্ডের মধ্যে ৩টিতে বাংলাদেশ ২০১৮ সালের চেয়ে এগিয়েছে। দুটিতে পিছিয়ে গেছে এবং একটি অপরিবর্তিত রয়েছে। কাস্টমস মানদণ্ডে বাংলাদেশের স্কোর ২ দশমিক ৩। ২০১৮ সালেও একই স্কোর ছিল। কাস্টমস মানদণ্ডে বাংলাদেশের অবস্থান ১০১তম। কাস্টমসসহ সীমান্ত নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থার মাধ্যমে পণ্য ছাড়ের প্রক্রিয়ার কার্যকারিতা এখানে যাচাই করা হয়েছে। অবকাঠামো মানদণ্ডে বাংলাদেশের স্কোর ২ দশমিক ৩, যা ২০১৮ সালে ২ দশমিক ৩৯ ছিল। বন্দর, রেলপথ, রাস্তা এবং তথ্যপ্রযুক্তির মান অবকাঠামোর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত।

অবকাঠামো মানদণ্ডে বাংলাদেশের অবস্থান ১৩৯টি দেশের মধ্যে ১০৮তম। আন্তর্জাতিক শিপমেন্ট বা পণ্যের জাহাজীকরণে প্রতিযোগিতামূলক দর পাওয়ার মানদণ্ডে স্কোর দাঁড়িয়েছে ২ দশমিক ৬, যা ২০১৮ সালে ছিল ২ দশমিক ৫৬। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের বৈশ্বিক অবস্থান ৯১তম। লজিস্টিকস সেবার সক্ষমতা এবং মানে বাংলাদেশের অবস্থান ৮১তম। এ মানদণ্ডে স্কোর ২ দশমিক ৪৮ থেকে বেড়ে ২ দশমিক ৭ হয়েছে। কনটেইনারের অবস্থান এবং গতিপথ জানার মানদণ্ডে বাংলাদেশের স্কোর ২ দশমিক ৭৯ থেকে কমে ২ দশমিক ৪ হয়েছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের বৈশ্বিক অবস্থান ১০৫তম।

পণ্য খালাসের নির্ধারিত বা প্রত্যাশিত সময়ের মধ্যে গন্তব্যে পৌঁছানোর মানদণ্ডে বাংলাদেশের স্কোর ২ দশমিক ৯২ থেকে বেড়ে ৩ হয়েছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের বৈশ্বিক অবস্থান ৮৭তম।

অন্যদের সঙ্গে তুলনা : সর্বাধিক ৪ দশমিক ৩ স্কোর করে লজিস্টিকস পারফরম্যান্স সূচকে প্রথম স্থান অর্জন করেছে সিঙ্গাপুর। এরপরে শীর্ষ ৫ এর মধ্যে রয়েছে ফিনল্যান্ড, জার্মানি, নেদারল্যান্ডস এবং সুইজারল্যান্ড। দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে আছে ভারত ও শ্রীলঙ্কা। পিছিয়ে আছে ভুটান ও আফগানিস্তান। পাকিস্তান, নেপাল ও মালদ্বীপ তালিকার মধ্যে নেই।

ভারতের বৈশ্বিক অবস্থান ৩৮তম এবং শ্রীলঙ্কার ৭৩তম। অন্যদিকে আফগানিস্তান ও ভুটানের অবস্থান যথাক্রমে ১৩৮ এবং ৯৭তম। পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান এবং বিশ্বব্যাংক গ্রুপের সাবেক সিনিয়র ইকোনমিস্ট ড. এম মাসরুর রিয়াজ বলেন, লজিস্টিকস পারফরম্যান্স সূচকে বাংলাদেশের স্কোর কিছুটা বেড়েছে, যা উৎসাহব্যঞ্জক। বাংলাদেশের অবস্থান ১২ ধাপ বেড়েছে, যার অন্যতম কারণ এবার কিছু দেশ এ সূচকে অন্তর্ভুক্ত হয়নি।

তবে অবস্থানে এগিয়ে যাওয়ার পেছনে সূচকে অগ্রগতির প্রভাব রয়েছে। ড. মাসরুর রিয়াজের মতে, বাংলাদেশের অগ্রগতি আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগে এ দেশের জন্য ইতিবাচক বার্তা দেবে। তবে সামগ্রিকভাবে লজিস্টিকসে আরো বড় ধরনের উন্নতি দরকার।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App