×

অর্থনীতি

ভূ-অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সক্ষম বাংলাদেশ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৭:২৫ পিএম

ভূ-অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সক্ষম বাংলাদেশ

ছবি: ভোরের কাগজ

বর্তমান ভূ-অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সক্ষমতা আছে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা চেম্বারের সভাপতি ব্যারিস্টার মো. সামীর সাত্তার।

বৃহস্পতিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা চেম্বার আয়োজিত ‘বেসরকারিখাতের দৃষ্টিতে ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথমার্ধে (জুলাই-ডিসেম্বর ২০২২) বাংলাদেশের অর্থনীতির সামগ্রিক পর্যালোচনা’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। বর্তমান ভূ-অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে নানাবিধ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় করতে হচ্ছে, তবে বিদ্যমান পরিস্থিতি মোকাবেলায় আমাদের অর্থনীতির যথেষ্ট সক্ষমতা রয়েছে বলে মনে করেন, ঢাকা চেম্বারের সভাপতি ব্যারিস্টার মো. সামীর সাত্তার।

ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘বেসরকারিখাতের দৃষ্টিতে ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথমার্ধে (জুলাই-ডিসেম্বর ২০২২) বাংলাদেশের অর্থনীতির সামগ্রিক পর্যালোচনা’ শীর্ষক সেমিনার অদ্য ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ তারিখে অনুষ্ঠিত হয়। সেমিনারে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ প্রধান অতিথি যোগদান করেন। এছাড়া, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) সচিব (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মোহসিনা ইয়াসমিন বিশেষ অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করেন।

ডিসিসিআই সভাপতি ব্যারিস্টার মো. সামীর সাত্তার ওই সেমিনারে ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকের অর্থনীতির সার্বিক প্রেক্ষাপটের ওপর মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। মূল প্রবন্ধে তিনি স্থানীয় অর্থনীতিতে বৈশ্বিক অর্থনীতির প্রভাব, এলডিসি উত্তরণ পরবর্তী চ্যালেঞ্জ, জাতীয় বাজেট ও মুদ্রানীতির বাস্তবায়ন অবস্থা, মুদ্রাস্ফীতি, বেসরকারি বিনিয়োগ, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, দক্ষতা উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান, কৃষি, উৎপাদন ও সেবা খাত নিয়ে বিস্তারিত আলোকপাত করেন। এলডিসি উত্তরণ পরবর্তী সময়ে রপ্তানি সম্প্রসারণে পণ্যের বহুমুখীকরণ ও উদ্যোক্তাদের সক্ষমতা বাড়ানো এবং সম্ভাবনাময় দেশ ও আঞ্চলিক বাণিজ্যিক ব্লকগুলোর সঙ্গে পিটিএ ও এফটিএ স্বাক্ষর তরান্বিতকরণ, ব্যবসা-বিনিয়োগ সহায়ক পরিবেশ নিশ্চিকরণ, মুদ্রানীতির যথাযথ বাস্তবায়ন, বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে সংশ্লিষ্ট নীতিমালায় সংষ্কারসহ প্রয়োজনে নতুন নীতিমালা প্রণয়নের ওপর জোরারোপ করেন ডিসিসিআই সভাপতি। তিনি বলেন, খেলাপী ঋণ কমাতে সুশাসন নিশ্চিকরনের সঙ্গে সঙ্গে কঠোর নজরদারির কোনো বিকল্প নেই। এছাড়াও ডিসিসিআই সভাপতি বৈদেশিক বিনিয়োগে বহুমুখীকরণ, ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ শিল্পের ভ্যালু অ্যাডিশন ৯০ শতাংশে উন্নীতকরণ, ওষুধ শিল্পের জন্য এপিআই শিল্পপার্কের দ্রুত বাস্তবায়ন, হালকা ও প্রকৌশল শিল্পের জন্য পৃথক শিল্পাঞ্চল ও পাট পণ্যের বহুমুখীকরণের জন্য নগদ সহায়তার প্রস্তাব করেন। কৃষি খাতের আধুনিকায়ন ও কৃষি পণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণের ওপর আরো বেশি হারে গুরুত্বারোপের পাশাপাশি বিশেষকরে এখাতে বিনিয়োগ ও রপ্তানি বৃদ্ধিকল্পে অন্তত একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল বরাদ্দ দেয়ার আহ্বান জানান ব্যারিস্টার সাত্তার। চামড়াজাত পণ্যের রপ্তানি বৃদ্ধিতে আন্তর্জাতিক কমপ্লায়েন্স অনুসরণ, হালকা প্রকৌশল খাতে দক্ষতা উন্নয়ন ও নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানো, মানবসম্পদের দক্ষতা বাড়াতে শিক্ষা কার্যক্রমের আধুনিকায়নের পাশাপাশি কারিগরি শিক্ষায় আরো বেশি হারে জোরে দেয়া প্রয়োজন বলে অভিমত ব্যক্ত করেন ঢাকা চেম্বারের সভাপতি। সিএমএসএমই থেকে মিডিয়াম এন্টারপ্রাইজকে পৃথকীকরণের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, এর মাধ্যমে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প উদ্যোক্তারা আরো সহজে ঋণ সহায়তা প্রাপ্তিতে সক্ষম হবে।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, ‘এলডিসি উত্তরণ নিয়ে আমাদের ভয় পাওয়ার কিছু নেই, তবে সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় নিজেদেরকে প্রস্তুত করতে হবে, বিশেষকরে এলডিসি পরবর্তী সময়ে রপ্তানি পণ্যের শুল্কমুক্ত সুবিধা পেতে হলে ভ্যালু এডিশনের উপর আরো বেশি হারে জোর দিতে হবে, এলক্ষ্যে বিশেষ করে ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ খাতে দক্ষতা বৃদ্ধিতে আরো বেশি হারে মনোনিবেশ করা প্রয়োজন। বাণিজ্য সচিব বলেন, এলডিসি পরবর্তী সময়ে রপ্তানির চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সম্ভাবনাময় রপ্তানিমুখী পণ্যের বহুমুখীকরণ একান্ত অপরিহার্য। তপন কান্তি ঘোষ বলেন, মানবসম্পদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে দেশের শিক্ষার মান উন্নয়ন এবং সার্বিকভাবে ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহায়ক পরিবেশ নিশ্চিত করা এখন অতীব জরুরি।’

তিনি আরো বলেন, ‘বাংলাদেশকে একটি উন্নত দেশে রপান্তরে সরকারের একক উদ্যোগ যথেষ্ট নয়, এর জন্য প্রয়োজন সরকার ও বেসরকারি খাতের কার্যকর সমন্বয়।’

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিডার সচিব মোহসিনা ইয়াসমিন বলেন, ‘বিডার ওয়ান স্টপ পোর্টালের মাধ্যমে বর্তমানে ১৮টি সেবা অনলাইনে প্রদান করা হচ্ছে ও আগামীতে ৪০টি সংস্থার প্রায় ১৫০টি সেবা এ কার্যক্রমের মাধ্যমে প্রদান করা হবে। তিনি উল্লেখ করেন, আমাদের উদ্যোক্তাদের এ ধরনের সেবা গ্রহণের হার খুবই কম, যার ফলে সেবা প্রাপ্তিতে কোন ধরনের সমস্যা থাকলে তা নিরসনে বিডা কার্যকর উদ্যোগ নিতে পারছেনা। তিনি উদ্যোক্তাদের বিডা পোর্টাল ব্যবহার করে অনলাইনভিত্তিক সেবা গ্রহণের বাড়ানোর জন্য উদ্যোক্তাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।’

সেমিনারের নির্ধারিত আলোচনায় সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান, মিউচুয়্যাল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ মাহবুবুর রহমান ও পিএইচপি ফ্যামিলির পরিচালক (ফিন্যান্স ও অ্যাডমিন) মোহাম্মদ আলী হোসেন অংশগ্রহণ করেন।

সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান বলেন, ‘শুধুমাত্র মাথাপিছু আয় বৃদ্ধিই উন্নয়নের একমাত্র পরিমাপক নয়, আমাদেরকে দেশের অর্থনৈতিক সক্ষমতার উপর গুরুত্ব দিতে হবে। বৈশ্বিক ও স্থানীয় চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় দেশের অর্থনীতি কতটা সক্ষম তা নির্ধারণে নিজেদের হোমওয়ার্ক অতীব জরুরী বলে তিনি অভিমত জ্ঞাপন করেন।’

ড. রায়হান আরো বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি, রিজার্ভ সংকট, আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমে স্থবিরতা প্রভৃতি সামষ্টিক অর্থনীতির বিষয়গুলো আমাদের সামাজিক খাত বিশেষকরে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর ওপর প্রভাব ফেলেছে, যা মোকবেলায় সকলকে আরো কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। তিনি বলেন, ‘বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো (এসইজেড) আমাদের অর্থনীতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক, তাই সকল সেবার অন্তভূক্তির মাধ্যমে যথাসময়ে এগুলোর কার্যক্রম শুরু করার প্রতি সরকারকে আরো মনোযোগী হতে হবে।’

মিউচুয়্যাল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, আর্থিক খাতে সুশাসন, স্বচ্ছতা ও সম্পদের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিতকরণ খুবই জরুরী। তিনি বলেন, রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে দক্ষ মানব সম্পদ তৈরির উপর আরো বেশি হারে জোরারোপ করতে হবে। তিনি বলেন, খেলাপী ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে স্থবিরতা আসবে, যা বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান, মূল্যস্ফীতিসহ সর্বোপরি জনজীবনে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে এবং খেলাপী ঋণ হ্রাসে রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও খেলাপী ঋণের সাথে সম্পৃক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিতের আহ্বান জানান তিনি।

পিএইচপি ফ্যামিলির পরিচালক মোহাম্মদ আলী হোসেন বলেন, আমাদের বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা অত্যন্ত উদ্যমী, তবে প্রয়োজন সরকারের যথাযথ নীতি সহায়তা। এছাড়া, ঘন ঘন শুল্ক বিধিমালা পরিবর্তন না করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

ঢাকা চেম্বারে উর্ধ্বতন সহ-সভাপতি এসএম গোলাম ফারুক আলমগীর (আরমান) ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। ডিসিসিআই সহ-সভাপতি মোঃ জুনায়েদ ইবনে আলী সহ পরিচালনা পর্ষদের সদস্যবৃন্দ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App