×

অর্থনীতি

রপ্তানিমুখী শিল্পকারখানায় বিদ্যুৎ-গ্যাস সরবরাহের অনুরোধ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১০ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০১:৩৪ পিএম

বিশ্বব্যাপী চলছে জ্বালানি সংকট। স্থানীয় পর্যায়ে গ্যাস-বিদ্যুতের সংকটের প্রভাব আমাদের পোশাক শিল্পেও পড়ছে বলে জানিয়েছে বিজিএমইএ। সংগঠনের সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, গ্যাস-বিদ্যুতের সংকটে শিল্পে ব্যয় বাড়ছে দুইভাবে। বিদ্যুতের অপ্রতুলতার কারনে কারখানাগুলোতে ডিজেল দিয়ে জেনারেটরগুলো চালানো হচ্ছে। অন্যভাবে, অধিক সময় জেনারেটর চালানোর কারণে জেনারেটরগুলো ঘনঘন বিকল হচ্ছে। এতে করে শিল্পে উৎপাদন ব্যয় বাড়ছে।

তিনি আরও বলেন, সরকারের কাছে আমাদের একান্ত অনুরোধ, রপ্তানিমুখী শিল্পকারখানাগুলোতে বিশেষ ব্যবস্থায় চাহিদা অনুযায়ী নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহ করা হোক। সেই সঙ্গে আমাদের আরেকটি অনুরোধ, আমাদের উৎসে কর যা এ বছরে এক শতাংশ করা হয়েছে, সেটি পূর্ববর্তী বছরের ন্যয় একই পর্যায়ে রাখা হোক।

ফারুক হাসান বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি ভারত সফর করেছেন। সফরকালে গত বুধবার সকালে নয়াদিল্লির একটি হোটেলে বাংলাদেশ-ভারত ব্যবসায়িক ফোরাম অনুষ্ঠিত হয়। ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাষ্ট্রিজ (এফবিসিসিআই) এবং কনফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান ইন্ডাষ্ট্রি (সিআইআই) এ বৈঠকের আয়োজন করে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে প্রধানমন্ত্রী শিল্প উৎপাদন, জ্বালানি, অবকাঠামো ও পরিবহনখাতে আরও বেশি বিনিয়োগের আহবান জানিয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, এই বৈঠকে উভয় দেশের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। ফোরামে বিনিয়োগ ও দ্বিপাক্ষিক বানিজ্য বৃদ্ধির বিষয়ে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়। আলোচনাকালে উভয় পক্ষ একমত হয়েছি যে দ্বিপাক্ষিক বানিজ্য সম্প্রসারনের যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। আমরা বিনিয়োগের সম্ভাব্য ক্ষেত্রগুলো নিয়ে আলোচনা করেছি। ভারতীয় ব্যবসায়ীদেরকে এদেশে বিশেষকরে নন-কটনখাতে বিনিয়োগ ও নন-কটনের জন্য কাঁচামাল আমদানিতে সহযোগিতা প্রদানের অনুরোধ করেছি। ভারতীয় ব্যবসায়ীরা আইটি সেক্টর এবং অ্যাগ্রো প্রসেসিংসহ অন্যান্য খাতে বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।

বৈঠকে অবকাঠামো ও কানেক্টিভিটির দুর্বলতা, বন্দর দুর্বলতার বিষয়গুলোও গুরুত্বের সঙ্গে উঠে এসেছে। বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, আপনারা জানেন, বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানিকারকগণ ভারত হতে উল্লেখযোগ্য পরিমানে কাঁচামাল আমদানি করে থাকেন এবং ভারত থেকে বাংলাদেশে কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রে ট্রানজিট টাইম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন। তবে ভারতীয় শুল্ক পয়েন্টে বনগাঁ- বেনাপোল সীমান্ত অতিক্রম করতে কাঁচামালবাহী ট্রাকগুলো দীর্ঘ সময় নেয়। আবার আমাদের স্থলবন্দরগুলোতে ওয়্যার হাউজ সংকট রয়েছে। এতে করে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য ব্যাহত হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, যেহেতু ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বানিজ্যের ঘাটতি বিপূল, তাই সরকারের প্রতি আমাদের অনুরোধ ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য বৃদ্ধির সকল সুযোগ কাজে লগানোর জন্য বেনাপোল স্থল বন্দরের আধুনিকায়ন ও দক্ষতা বাড়ানো প্রয়োজন। সেইসাথে বেনাপোল বন্দরের ওপর থেকে চাপ কমানোর জন্য অন্যান্য স্থল বন্দর দিয়ে সম্পূর্ণ কিংবা আংশিক সূতা আমদানির অনুমোদন দেয়া হলে শিল্প উপকৃত হবে।

বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন যে, তার দেশ বাংলাদেশের রপ্তানির জন্য এশিয়ার বৃহত্তম বাজার এবং এই প্রবৃদ্ধি আরও তরান্বিত করতে শীঘ্রই তারা বিলেটারাল কম্প্রিহেন্সিভ ইকোনোমিক পার্টনারশিপ অ্যাগ্রিমেন্ট (সেপা) নিয়ে আলোচনা করবেন। প্রস্তাবিত চুক্তির মূল লক্ষ্য হলো বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বিশাল বানিজ্য ব্যবধান কমানো এবং সংযোগ, নতুন বাজার, সহযোগিতা ও অংশীদারিত্বসহ নতুন অর্থনৈতিক সুযোগ উন্মুক্ত করা। আমরা আশা করি চুক্তিটি এমনভাবে হবে, যাতে করে উভয় পক্ষ লাভবান হবে।

ফারুক হাসান বলেন, আমরা বর্তমান বোর্ড দায়িত্ব গ্রহনের পর গত বছরের আগষ্ট থেকে চলতি বছরের আগষ্ট পর্যন্ত পোশাকশিল্পে টানা প্রবৃদ্ধি হয়েছি- যেটি উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি ছিলো। যে কারনে গত অর্থবছরে এ শিল্পখাত থেকে রপ্তানি হয়েছে ৪২.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এ অর্থবছরের প্রথম দুইমাসে, জুলাই-আগষ্টে প্রবৃদ্ধি ভালো ছিলো। কিন্তু দুইমাসে আমরা উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছি ক্রয়াদেশ ক্রমশ কমছে।

তিনি আরও বলেন, আমাদের অন্যতম রপ্তানিবাজার‘ ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতি ও সমূহ মন্দার কারনে আগামী মৌসুমের জন্য কার্যাদেশ প্রায় ২০ থেকে ৩০ শতাংশ কমে এসেছে। খুচরা বিক্রেতারা ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতির বিশ্ববাজারের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে সংগ্রাম করছে। অনেক ব্র্যান্ডের খুচরা বিক্রয় হ্রাস পেয়েছে, যা তাদের টহংড়ষফ ঝঃড়পশ বাড়িয়েছে। এসব বিবেচনা কওে আগামী মাসগুলোতে আমাদের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ঋনাত্মক হতে পারে।

পরিশেষে এই নেতা বলেন, ফাস্ট ফ্যাশনের এই যুগে আমাদের বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হয়। ফাস্ট ফ্যাশন কনসেপ্টে সাপ্লাই চেইন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ- যেখানে ঘড়ির কাঁটা ধরে উৎপাদন, জাহাজীকরণ, পণ্যের উৎপাদন করতে হয়, অর্থাৎ উৎপাদন থেকে সব ধাপে সম্ভাব্য নূন্যতম সময়ের মধ্যে কাজগুলো করতে হয়। তাই, বর্তমান পরিস্থিতিতে রপ্তানি তরান্বিত করার জন্য আমদানি-রপ্তানি প্রক্রিয়াগুলো সহজীকরন, বিশেষ করে কাষ্টম, বন্দও এবং বন্ড সংক্রান্ত প্রক্রিয়াগুলো আরও সহজীকরন করা জরুরি। এগুলো করা হলে আমরা ফাস্ট ফ্যাশনের সুযোগগুলো গ্রহন করতে সক্ষম হবো।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App