×

অর্থনীতি

টাস্কফোর্স গঠনের দুই বছরেও হয়নি বিদেশি কর্মীর ডাটাবেজ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৩ মার্চ ২০১৮, ০১:৫৪ পিএম

টাস্কফোর্স গঠনের দুই বছরেও হয়নি বিদেশি কর্মীর ডাটাবেজ
গার্মেন্টসসহ দেশের বিভিন্ন খাতে কর্মরত রয়েছেন লক্ষাধিক বিদেশি। এদের অধিকাংশেরই নেই বৈধ ওয়ার্ক পারমিট। ভ্রমণ ভিসায় এসে বছরের পর বছর কাজ করে অবাধে নিজেদের দেশে অর্থ পাঠাচ্ছেন বিদেশিরা। অনেক ক্ষেত্রে এ দেশীয় নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষও কর ফাঁকি দিতে সহায়তা করছেন তাদের। ফলে প্রতিবছরই বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। বিদেশি এসব কর ফাঁকিবাজ ধরতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) দুই বছর আগে একটি টাস্কফোর্স গঠন করলেও অগ্রগতি হয়েছে সামান্যই। এমনকি বিদেশি কর্মীর একটি ডাটাবেজই তৈরি করতে পারেনি ওই সংস্থাটি। তবে সম্প্রতি এনবিআরের এক সদস্যকে আহ্বায়ক করে এ সংক্রান্ত একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটি ইতোমধ্যে একটি বৈঠক করেছে বলেও জানিয়েছে সূত্র। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে কতজন বিদেশি বাংলাদেশে অবস্থান করছেন অথবা কর্মরত আছেন তার সঠিক পরিসংখ্যান সরকারি কোনো সংস্থার কাছে নেই। তারপরও বিভিন্ন সূত্রে খবর পেয়ে বিদেশি কর্মীদের করের আওতায় আনতে অভিযান চালানো হচ্ছে। দেখা গেছে, অধিকাংশ বিদেশি নাগরিক বাংলাদেশে প্রবেশের ক্ষেত্রে ট্যুরিস্ট ভিসা ব্যবহার করেন। এরপর বিভিন্ন কাজের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়ছেন। আবার বিভিন্ন কোম্পানির ওয়ার্ক পারমিট নিয়ে আসা বিশেষ করে এনজিও, হোটেল-রেস্টুরেন্ট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, প্রকৌশল, চিকিৎসা, গার্মেন্ট, মার্চেন্ডাইজিং, পরামর্শকসহ অন্য বিদেশিদের বেতন-ভাতা গোপন রাখা হচ্ছে। মূলত কর ফাঁকি দিতেই এ কৌশল অবলম্বন করছে দেশীয় নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ। এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে কর্মরত বিদেশিদের কাছ থেকে সঠিকভাবে আয়কর আদায় করতে ২০১৬ সালে টাস্কফোর্স গঠন করে এনবিআর। এই টাস্কফোর্সের সদস্য হিসেবে বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা), এসবি, ডিজিএফআই, এনএসআই, বাংলাদেশ ব্যাংক, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বেপজা, পাসপোর্ট অধিদপ্তর, এনজিও ব্যুরো ও এফবিসিসিআইর প্রতিনিধিদের রাখা হয়েছে। পরবর্তীতে কাজের সুবিধার্থে ঢাকা ও চট্টগ্রাম অঞ্চলভিত্তিক টাস্কফোর্সকে ভাগ করা হয়। এরপর টুকটাক প্রচার-প্রচারণা চালালেও এখন পর্যন্ত কোনো পরিসংখ্যান বা ডাটাবেজ তৈরি করা যায়নি। একটি সূত্র জানায়, প্রতিবছরই অল্পসংখ্যক বিদেশি কর্মী কর অঞ্চল-১১তে কর দিয়ে যান। সর্বশেষ অর্থবছরে নির্দিষ্ট হিসাব না থাকলেও বিভিন্ন সার্কেলে যোগাযোগ করে প্রায় ১১ হাজারের মতো বিদেশি করদাতার সংখ্যা পাওয়া গেছে। অথচ দেশে প্রায় লাখ খানেকের মতো বিদেশি বিভিন্ন কোম্পানিতে কর্মরত আছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে এনবিআরের লিগ্যাল এন্ড এনফোর্সমেন্টের দায়িত্বপ্রাপ্ত সদস্য ভোরের কাগজকে বলেন, টাস্কফোর্সের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গত বছরের জুলাই থেকে তিনটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও একটি স্থলবন্দরে আয়কর বুথ খুলেছে এনবিআর। আর ডাটাবেজ তৈরির জন্য নতুন করে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটি ডাটাবেজ তৈরির বিষয়ে কাজ করে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে আমরা পুলিশের সঙ্গে একটি বৈঠক করেছি। যাতে প্রত্যেক বিদেশি নাগরিকের তথ্য আমরা সহজে পাই। তিনি আরও বলেন, ওই ডাটাবেজে বিদেশি কর্মীর নাম, পাসপোর্ট নম্বর, কর্মস্থলের ঠিকানা, বাংলাদেশে বসবাসের স্থায়ী ঠিকানা, কাজের ধরন, বেতন-ভাতাদির তথ্য ও আয়কর পরিশোধের তথ্য উল্লেখ থাকবে। এ প্রসঙ্গে কথা হয় গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডির) সম্মানীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে। তিনি ভোরের কাগজকে বলেন, সরকারের উচিত বিদেশি কর্মীর একটা পরিসংখ্যান তৈরি করা। তা নাহলে সরকার যেমন রাজস্ব হারাবে তেমনি কর আওতার বাইরে রয়ে যাবে বিদেশি কর্মীরা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App