শেয়ারবাজার বিরোধী সেই আমিনুরকে আবারও বদলি
কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ৩১ জুলাই ২০২২, ০৫:২৫ পিএম
আমিনুর রহমান চৌধুরী
শেয়ারবাজার বিরোধী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের আমিনুর রহমান চৌধুরীকে মাত্র ৪৩ দিন বা দেড়মাসেরও কম সময়ের মধ্যে পুনরায় বদলি করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিউম্যান রিসোর্সেস ডিপার্টমেন্ট-১ (প্ল্যানিং প্রমোশন এন্ড ট্রান্সফার উইং) এর যুগ্ম পরিচালক নাজমুল হুদা সরদার স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে গত বৃহস্পতিবার (২৮ জুলাই) এ আদেশ দেয়া হয়।
তাকে ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ থেকে ফরেক্স রিজার্ভ এন্ড ট্রেজারি ম্যানেজমেন্ট ডিপার্টমেন্ট বদলির আদেশ দেয়া হয়েছে। জানা গেছে, পুঁজিবাজারে প্রভাব ফেলে, বাংলাদেশ ব্যাংকের এমন নানা সিদ্ধান্ত গ্রহণে আমিনুর রহমানের ভূমিকা ছিল। ফলে গত ১৫জুন প্রায় দুই দশক একই বিভাগে থাকার পর আমিনুর রহমানকে ডিপার্টমেন্ট অফ অফসাইট সুপারভিশন থেকে ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগে বদলি করা হয়। সে সময় বাজার চাঙা করতে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে যেসব প্রস্তাব ও পরামর্শ দেয়া হয়েছিল, তার মধ্যে একটি ছিল আমিনুরের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া।
এ বিষয়ে বিএসইসির চেয়ারম্যান শিবলী রুবায়েত উল ইসলাম রবিবার (৩১ জুলাই) এক সংবাদ সম্মেরনে বলেন, অবশেষে শেয়ারবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগের হিসাব বাজার মূল্যের বদলে ক্রয়মূল্যে হচ্ছে। এই গভর্নর যখন সচিব ছিলেন, তখন ফাইলটা গেছে বাংলাদেশ ব্যাংকে। ওনার সুপারিশ নিয়েই বাংলাদেশ ব্যাংকে ফাইল যায়। বাংলাদেশ ব্যাংকের ওপরের লেভেল ঠিক ছিল। কারণ ডেপুটি গভর্নর উপস্থিত ছিলেন মিটিংয়ে। কিন্তু ওখানে (বাংলাদেশ ব্যাংক) যাওয়ার পর জুনিয়র অফিসার কেউ হয়তো নেগেটিভ দিয়ে ফাইলটা এমনভাবে করে ছিলেন, যাতে গভর্নর করতে পারেননি। যাই হোক নতুন গভর্নর আসার দুদিন পরই আমরা ওনার সঙ্গে দেখা করি। তিনি সঙ্গে সঙ্গে ফাইলটি মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দিয়েছেন। এখন জাস্ট এটা প্রসিডিউরে আছে।
জানা গেছে, গভর্নরের সঙ্গে আমিনুর রহমানের সুসম্পর্ক ছিল। সেই সুবাদে দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে ইচ্ছেমতোই ছড়ি ঘোরাচ্ছেন তিনি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন নতুন নিয়মনীতি যেন তিনি একাই প্রণয়ন করে থাকেন। গভর্নর, ডেপুটি গভর্নর, নির্বাহী পরিচালক ও জিএম’র পরিবর্তন হলেও তার চেয়ার নড়ে না। চাকরির প্রায় দুই যুগ পার করেছেন একই বিভাগে কর্মরত অবস্থায়। দেশের বড় বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠানের কর্তা ব্যক্তিদের গভর্নরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করিয়ে দিয়ে সুবিধাদি দেয়াসহ বাংলাদেশ ব্যাংকে নিজের কর্তৃত্ব জাহির করেছেন। এমনকি অফিসে কর্মরত ঊর্ধ্বতন কাউকেই তোয়াক্কা করেন না।
এদিকে, নতুন গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার নতুন গভর্নরের দায়িত্ব নেয়ার আগে আগেই কেন্দ্রীয় ব্যাংকে বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়েছে, যার মধ্যে পুঁজিবাজারে ছড়ি ঘোরানো আমিনুরের নামও ছিল। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পদক্রমে ডিজিএম পদটি তৃতীয় সারিতে থাকলেও আমিনুর তুমুল আলোচিত ছিলেন এ কারণে যে তিনি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এমন সব বিষয় দেখভাল করতেন, যা পুঁজিবাজারের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাব ছিল। কয়েক বছর ধরেই বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আলোচনা ছিল যে বাংলাদেশ পুঁজিবাজার নিয়ে রক্ষণশীল। প্রায়ই এমন সিদ্ধান্ত এসেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে, যা বাজারের জন্য নেতিবাচক বার্তা দিয়েছে।