×

অর্থনীতি

তামাকজাত পণ্যের দাম কমলেও তরুণদের মধ্যে ব্যবহার বাড়বে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৯ জুন ২০২২, ০৪:৩৫ পিএম

তামাকজাত পণ্যের দাম কমলেও তরুণদের মধ্যে ব্যবহার বাড়বে

প্রতীকী ছবি

প্রস্তাবিত ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে তামাকবিরোধীদের দাবি আমলে নেয়া হয়নি। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এই বাজেট পাশ হলে তরুণ ও দরিদ্র জনগোষ্ঠির মধ্যে তামাকপণ্যের ব্যবহার বাড়বে, সরকারের স্বাস্থ্য ব্যয় বাড়বে ও অতিরিক্ত রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

বৃহস্পতিবার (৯ জুন) বাজেট ঘোষণার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বিষয়টি জানায় তামাকবিরোধী সংগঠন প্রগতির জন্য জ্ঞান (প্রজ্ঞা) ও অ্যান্টি টোবাকো মিডিয়া এলায়েন্স (আত্মা)। এর আগে বুধবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে ওই দুই সংগঠন এ প্রতিক্রিয়া দেয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, প্রস্তাবিত বাজেটে নিম্ন স্তরে ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরামূল্য মাত্র এক টাকা বাড়িয়ে ৪০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। বাজেট কার্যকর হলে এই স্তরে সিগারেটের দাম বাড়বে মাত্র দুই দশমিক ৫৬ শতাংশ, যা ১০ শতাংশ মাথাপিছু আয় বাড়ার তুলনায় খুবই সামান্য। ফলে এই স্তরের সিগারেটের প্রকৃত মূল্য ব্যাপকভাবে কমবে এবং তরুণ ও নিম্ন আয়ের জনগণের মধ্যে কমদামি সিগারেটের ব্যবহার আশঙ্কাজনকহারে বাড়বে।

বর্তমানে সিগারেট বাজারের ৭৫ শতাংশই নিম্ন স্তরের দখলে যার প্রধান ভোক্তা মূলত দরিদ্র ও তরুণ জনগোষ্ঠী। অন্যদিকে সম্পূরক শুল্ক ৫৭ শতাংশ অপরিবর্তিত রেখে কেবল খুচরা মূল্য এক টাকা বাড়ানোর কারণে বর্ধিত মূল্যের একটা অংশ কোম্পানির পকেটে চলে যাবে। তবে তামাকবিরোধীদের প্রস্তাব অনুযায়ী সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপের মাধ্যমে দাম বাড়ানো হলে সরকারের রাজস্ব আয় বহগুণ বাড়বে এবং কমদামি সিগারেটের ব্যবহার কমবে। বাজেটে মধ্যম স্তরের ১০ শলাকা সিগারেটের দাম ৬৩ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৬৫ টাকা (তিন দশমিক ১৭ শতাংশ), উচ্চ স্তরে ১০২ টাকা থেকে ১১১ টাকা (আট দশমিক ৮২ শতাংশ) এবং প্রিমিয়াম বা অতি উচ্চ স্তরের ১০ শলাকার দাম ১৩৫ টাকা থেকে ১৪২ (পাঁচ দশমিক ১৮ শতাংশ) টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির (১০ শতাংশ) তুলনায় দাম কম বাড়ায় সব ব্র্যান্ডের সিগারেটের প্রকৃতমূল্য কমবে অর্থাৎ আরও সস্তা হবে এবং জনগণ সিগারেট ব্যবহারে উৎসাহিত হবে। একই সঙ্গে তামাকবিরোধীদের প্রস্তাব অনুযায়ী সম্পূরক শুল্ক সুনির্দিষ্ট আকারে আরোপ না করায় কর আহরণে জটিলতা বাড়বে এবং তামাক কোম্পানির কর ফাঁকিসহ নানাভাবে লাভবান হবার সুযোগ অব্যাহত থাকবে। বিড়ি, জর্দা ও গুলের দাম এবং করহার অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। জনস্বাস্থ্যের বিবেচনায় যা খুবই হতাশাজনক। বিড়ির প্রধান ভোক্তা নিম্ন আয়ের দরিদ্র মানুষ। এছাড়া তামাক ব্যবহারকারীদের ৫০ শতাংশেরও বেশি মানুষ ধোঁয়াবিহীন তামাক ব্যবহার করেন, যাদের অধিকাংশই দরিদ্র এবং নারী। মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি বিবেচনায় নিলে এসব পণ্য ব্যাপকভাবে সস্তা ও সহজলভ্য হয়ে যাবে। ফলে দরিদ্র জনগোষ্ঠী বিশেষ করে নারীরা ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্য ব্যবহারে উৎসাহিত হবে এবং তাতে স্বাস্থ্যঝুঁকিও বেড়ে যাবে। তামাক প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের কর্পোরেট করহার (৪৫ শতাংশ) এবং আয়ের ওপর বিদ্যমান সারচার্জ (দুই দশমিক পাঁচ শতাংশ) বাড়ানো হয়নি। ফলে তামাক প্রতিষ্ঠানগুলোর মুনাফা বাড়ার সুযোগ অব্যাহত থাকবে।

বর্তমানে প্রায় সকল নিত্যপণ্যের দাম ব্যাপক হারে বাড়লেও প্রস্তাবিত বাজেটে তামাকপণ্যের দাম নামমাত্র বাড়ানো অথবা অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। এর ফলে নিত্যপণ্যের তুলনায় তামাকপণ্য আরো সস্তা হয়ে পড়বে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ।

প্রস্তাবিত বাজেটের প্রতিক্রিয়ায় প্রজ্ঞার (প্রগতির জন্য জ্ঞান) নির্বাহী পরিচালক এ বি এম জুবায়ের বলেন, কমদামি সিগারেটের দাম প্রায় অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে এবং তামাকবিরোধীদের দীর্ঘদিনের দাবি সুনির্দিষ্ট কর পদ্ধতি প্রচলনের কোনো নির্দেশনা নেই প্রস্তাবিত বাজেটে। চূড়ান্ত বাজেটে সুনির্দিষ্ট করারোপের মাধ্যমে তামাকপণ্যের দাম বাড়িয়ে জনগণের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে নিয়ে যাওয়ার দাবি জানাচ্ছি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App