×

অর্থনীতি

খাদ্য নিরাপত্তা: ৫ কোটির বেশি মানুষ ঝুঁকিতে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৮ ডিসেম্বর ২০২১, ১১:০১ এএম

খাদ্য নিরাপত্তা: ৫ কোটির বেশি মানুষ ঝুঁকিতে

প্রতীকি ছবি

বাংলাদেশের পাঁচ কোটি ২০ লাখ মানুষ মাঝারি ও তীব্র খাদ্য নিরাপত্তার ঝুঁকিতে আছে। সংখ্যাটি ২০১৮ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে দ্বিগুণ বেড়েছে। এ সময় নতুন করে খাদ্যনিরাপত্তার ঝুঁকিতে থাকা মানুষের সংখ্যা বেড়েছে ১২ লাখ।

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) ‘এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে খাদ্যনিরাপত্তা ও পুষ্টি পরিস্থিতি প্রতিবেদন-২০২১’-এ এই চিত্র উঠে এসেছে। গত বৃহস্পতিবার (১৬ ডিসেম্বর) এই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।

এফএওর প্রতিবেদনে ২০২১ সালের পরিস্থিতি উঠে আসেনি। তবে বিশ্লেষকেরা বলছেন, বাংলাদেশে এ বছর গম, ডাল, ভোজ্যতেল, চিনি, মাংস, সবজিসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম বেড়েছে। আগে থেকেই বেশ চড়া চালের দাম। ফলে মানুষের কষ্ট আরও বেড়েছে। সরকারের তুলনামূলক কম দামে চাল, আটা, ডাল, ভোজ্যতেল ও চিনি বিক্রির দোকানে মানুষের দীর্ঘ লাইনই এর প্রমাণ দেয়।

এফএওর প্রতিবেদনে ২০১৪ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত খাদ্যনিরাপত্তার ক্ষেত্রে ঝুঁকিতে থাকা মানুষের সংখ্যা ও জনসংখ্যার হার উল্লেখ করা হয়। দেখা যায়, কয়েক বছর ধরে ঝুঁকি থাকা মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। জনসংখ্যার হার বিচারে ২০১৮ থেকে ২০২০ সময়ে খাদ্যনিরাপত্তার ক্ষেত্রে ঝুঁকিতে ছিল ৩১ দশমিক ৯ শতাংশ মানুষ, যা ২০১৭ থেকে ২০১৯ সময়ের তুলনায় কিছুটা বেশি।

এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় বিভিন্ন দেশের তুলনামূলক চিত্রও পাওয়া যায় এফএওর প্রতিবেদনে। এতে দেখা যায়, ঝুঁকিতে থাকা জনসংখ্যার হার বিবেচনায় বাংলাদেশ নেপালের চেয়ে এগিয়ে আছে। পিছিয়ে আছে মিয়ানমার, মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডের মতো দেশগুলোর চেয়ে। ভিয়েতনাম এ ক্ষেত্রে অনেক ভালো অবস্থানে আছে। ওই দেশে খাদ্যনিরাপত্তার ঝুঁকিতে আছে মাত্র সাড়ে ছয় শতাংশ মানুষ।

খাদ্য নিরাপত্তার ঝুঁকির জন্য দায়ী করোনা মহামারি

এফএও গত বৃহস্পতিবার এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে খাদ্যনিরাপত্তা ও পুষ্টি পরিস্থিতি প্রতিবেদনের পাশাপাশি ‘বৈশ্বিক খাদ্য ও কৃষি পরিস্থিতি-২০২১’ প্রতিবেদনও প্রকাশ করে। এতে প্রাক্কলন করা হয়, বিশ্বে ২০২০ সালে ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭২ থেকে ৮১ কোটির মতো, যা আগের বছরের চেয়ে প্রায় ১৬ কোটি বেশি।

খাদ্য নিরাপত্তা পরিস্থিতিতে এই পরিবর্তনের কারণ হিসেবে এফএওর দুই প্রতিবেদনে মূলত করোনা পরিস্থিতিকে দায়ী করা হয়েছে। বলা হয়েছে, করোনাকালে বিশ্বের বেশির ভাগ দেশে খাদ্য উৎপাদন, সরবরাহ ও বাণিজ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। বিশেষ করে গ্রামীণ দরিদ্র ও দুর্গম এলাকার মানুষকে খাদ্য পেতে বেশি কষ্ট করতে হয়। খাদ্যপণ্যের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বাধাগ্রস্ত হওয়ায় বেশ কয়েকটি জরুরি খাদ্যপণ্যের দাম বেড়ে যায়।

বৈশ্বিক খাদ্য পরিস্থিতি প্রতিবেদনে জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে বলা হয়, ৩৭ কোটি শিশু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে যে খাবার পেত, তা আর পাচ্ছে না। পরিবার থেকেও সমপরিমাণ খাবার না পাওয়ায় তাদের পুষ্টিহীনতা বেড়েছে।

স্বাস্থ্য খাতের চিত্র

এফএওর প্রতিবেদনে নারী, শিশু ও প্রাপ্তবয়স্কদের স্বাস্থ্যের বিভিন্ন দিক উঠে এসেছে। দেখা যায়, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বিগত বছরগুলোতে বাংলাদেশের পরিস্থিতি উন্নতির দিকে রয়েছে। প্রতিবেশীদের চেয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে আছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে বাংলাদেশ পিছিয়ে আছে।

একটি ক্ষেত্র হলো, পাঁচ বছরের কম বয়সীদের মধ্যে খর্বকায় শিশুর হার। বাংলাদেশে ২০১৫ সালে ৩৫ শতাংশ শিশু ছিল খর্বকায়। ২০২০ সালে তা ৩০ শতাংশে নামে। এদিক দিয়ে বাংলাদেশ ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে আছে। তবে বাংলাদেশ শিশুর স্থূলতার (স্বাভাবিকের চেয়ে মোটা) দিক দিয়ে ভারত, মিয়ানমার ও নেপালের চেয়ে পিছিয়ে আছে। বাংলাদেশের দুই দশমিক এক শতাংশ শিশু স্থূলকায়।

স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ওজন থাকা একধরনের পুষ্টিহীনতা। সাধারণত যেসব শিশু প্রয়োজনের চেয়ে কম পুষ্টিকর খাবার খায়, তারা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি মোটা হয়ে যায় এবং নানা ধরনের রোগবালাইয়েও ভোগে। অর্থাৎ এরা ফল, মাছ, মাংস, দুধ ও ডিম কম পায়; কিন্তু ভাত ও গমের মতো শর্করা বেশি খায়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App