×

সারাদেশ

রাণীনগরে বীজ বিহীন ‘চায়না-৩’ লেবু চাষে সফলতা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২২ মার্চ ২০২১, ০৪:১০ পিএম

রাণীনগরে বীজ বিহীন ‘চায়না-৩’ লেবু চাষে সফলতা

নওগাঁর রাণীনগর উপজেলায় বীজ বিহীন ‘চায়না-৩’ জাতের লেবুর চাষ

নওগাঁর রাণীনগর উপজেলায় বীজ বিহীন ‘চায়না-৩’ জাতের লেবু চাষে অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছে চাষীরা। উপজেলার কাশিমপুর ইউনিয়নের চকাদিন গ্রামে ‘সুফলা নওগাঁ এগ্রো প্রজেক্ট’ এর ১৫ জন তরুন যুবকের উদ্যোগে গড়ে তোলা হয়েছে এ বাগান। তাদের সফলতা দেখে এলাকার অন্য চাষীরা উৎসাহিত হয়ে এ জাতের লেবুর বাগান করেছেন। এ প্রজেক্টে উৎপাদিত লেবুর চারা এবং বাগান দেখে নতুন নতুন বাগান সৃষ্টি হচ্ছে। ধীরে ধীরে কাশিমপুর ইউনিয়ন লেবু অঞ্চল হিসেবে দেশব্যাপী পরিচিত পাবে বলে সুফলা নওগাঁর প্রত্যাশা।

জানা গেছে, রাণীনগর উপজেলার কাশিমপুর ইউনিয়নের চকাদিন গ্রামে ২০১৯ সালের শুরুতে ২ একর পতিত জমি ১০ বছরের জন্য ইজারা নেয় তরুণ যুবকরা। সে সময় নাটোরের ভাতুরিয়া হর্টিকালচার সেন্টার থেকে ৩০ টাকা পিস হিসেবে ৫শ পিস চায়না-৩ লেবুর চারা সংগ্রহ করেন তারা। যেখানে ‘সুফলা নওগাঁ এগ্রো প্রজেক্ট’এর মাধ্যমে অর্থ সম্পাদক মোকাদ্দেস সরকারের আগ্রহ উদ্দীপনায় ১৫ জন তরুন যুবকদের নিয়ে সম্মিলিত এ কৃষি উদ্যোগের সৃষ্টি করা হয়েছে। বাগানে রয়েছে ৭শ পিস চায়না-৩ লেবু, ২শ পিস পেয়ারা, ৬শ পিস ড্রাগন ও ২শ পিস মাল্টার গাছ। তবে বাগানে সম্ভবনাময় হয়ে উঠেছে চায়না-৩ লেবু।

 এ বাগান থেকে লেবুর চারা সংগ্রহ করে কাশিমপুর ইউপি চেয়ারম্যান মোখলেছুর রহমান বাবু ১০ কাঠা, কাশিমপুর গ্রামের গোলাম মোস্তফা এক বিঘা, চককুতুব গ্রামের মিন্টু এক বিঘা, কুজাইল গ্রামের রাকিব ১০ কাঠা এবং আব্দুর রাজ্জাক ও মোখলেছুর রহমান চার বিঘা জমিতে চায়না-৩ জাতের লেবুর বাগান করেছেন।

চাষিরা জানিয়েছেন, পতিত জমিতে প্রথমে বিঘাপ্রতি ৫০ কেজি হারে ডলোচুন দিয়ে ১৫ দিন ফেলে রাখা হয়। এরপর সরভূজ পদ্ধতিতে ৬ ফুট দূরুত্বে বেড তৈরী করা হয়। গর্তের মাটির সঙ্গে ১০ কেজি গোবর সার, ২শ গ্রাম ডিএপি, ১৫০ গ্রাম এমওপি, ১৫০ গ্রাম ইউরিয়া, ১০০ গ্রাম জিপসাম, ৫০ গ্রাম দস্তা, ২৫ গ্রাম বোরন মিশিয়ে ১৫ দিন আবারও ফেলে রাখা হয়। এরপর ১২ ফুট দুরুত্বে লেবুর চারা রোপন করা হয়। দেশে যত জাতের লেবু আছে তার মধ্যে এ জাতের লেবুর বিয়ারিং (ধারন ক্ষমতা) বেশি এবং সারা বছর পাওয়া যায়।

কাশিমপুর গ্রামের আব্দুল মমিন বলেন, সুফলা নওগাঁর কথা শুনে তিনি বাগান দেখতে যান। এ জাতের লেবু থেকে সারা বছর লেবু পাওয়া যায়, গুনগত মান ভাল এবং লাভজনক হওয়ায় তিনি আগ্রহ প্রকাশ করেন। এক বছর আগে ওই বাগান থেকে ৩০০ পিস চারা সংগ্রহ করে ২ বিঘা জমিতে বাগান করেছেন। বাগানে ফল আসা শুরু হয়েছে।

‘সুফলা নওগাঁ এগ্রো প্রজেক্ট’  এর অর্থ সম্পাদক মোকাদ্দেস সরকার বলেন, বছরে ১০ হাজার টাকা বিঘা হিসেবে ১০ বছরের জন্য ২ একর জমি ইজারা নিয়েছেন। অন্যান্য ফলের গাছ থাকলেও বাগানে চায়না-৩ লেবু সম্ভবনাময় হয়ে উঠেছে। প্রতি সপ্তাহে একবার করে দেড় থেকে দুই হাজার পিস লেবু উঠানো হচ্ছে। বর্তমান বাজারে প্রতি হাজার লেবু ৫ হাজার টাকা হিসেবে পাইকারি বিক্রি করা হচ্ছে। গত দুই বছরে লেবু বিক্রি করেছেন ২ লাখ টাকা এবং চারা বিক্রি করেছেন ১ লাখ টাকা। চারার বেশ চাহিদাও রয়েছে। এ বাগান থেকে চারা সংগ্রহ করে আশপাশে অনেক বাগান গড়ে উঠেছে।

‘সুফলা নওগাঁ এগ্রো প্রজেক্ট’ এর সভাপতি হাবিব রতন বলেন, চারা লাগানোর তিন মাস পর ফুল এবং ছয় মাস বয়স থেকে ফল আসা শুরু হয়। এ লেবু বীজ বিহীন, রস বেশি, গাছে ফলের পরিমাণ বেশি, আলাদা ফ্লেভার এবং টকের পরিমাণ অনেকটা কম। এখানকার আবহাওয়া ও মাটি লেবু চাষে উপযোগী। পোকামাকড়ের উপদ্রবও কম। অল্প সময়ে ও অল্প খরচে লেবু চাষ করা সম্ভব। গাছ যত বড় হবে লেবু তত বেশি হবে। আমরা বাগান থেকে সফল হবো বলে আশাবাদী।

কাশিমপুর ইউনিয়নের চকাদিন ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আজমা সুলতানা সাথী বলেন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরামর্শে এবং কৃষকদের উদ্যোগে একটি মিশ্র ফল বাগান তৈরি করা হয়েছে। কৃষি অফিস থেকে সব ধরনের সহযোগীতাসহ দিক নির্দেশনা প্রদান করা হচ্ছে। বাগানে চায়না-৩ জাতের লেবুতে চাষীরা সফলতা পেয়েছেন। তাদের সফলতা দেখে অন্য কৃষকরাও উৎসাহিত হচ্ছে। আশা করছি এ ইউনিয়ন এক সময় লেবু অঞ্চল হিসেবে পরিচিত পাবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App