×

সারাদেশ

এমপি লিটন হত্যার চার বছর, দ্রুত রায় কার্যকরের দাবি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ৩১ ডিসেম্বর ২০২০, ১১:৫২ এএম

এমপি লিটন হত্যার চার বছর, দ্রুত রায় কার্যকরের দাবি
আজ ৩১ ডিসেম্বর গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার মানুষের প্রিয় নেতা মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন এমপি হত্যাকাণ্ডের চতুর্থ বার্ষিকী। ঘাতকরা তাঁকে শারীরিকভাবে হত্যা করতে পারলেও মানুষের হৃদয় থেকে তাঁকে হত্যা করতে পারেনি, তিনি মানুষের হৃদয়ে চিরঞ্জীব হয়ে থাকবেন। ভয়ঙ্কর সেই ঘাতক কাদের খান ও তার নির্মম সহযোগীরা মৃত্যুদণ্ডের রায় মাথায় নিয়ে এখন কারাগারে প্রতি মুহূর্তে মৃত্যুর ক্ষণ গুণছে। কর্নেল(অব.) ডা. কাদের খান ২০০৮ সালে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে লাঙল প্রতীকে এমপি নির্বাচিত হন। তিনি প্রথমে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটিতে সাংগঠনিক সম্পাদক এবং নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর দলের ভাইস চেয়ারম্যানের পদ লাভ করেন। আব্দুল কাদের খান সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর নিজস্ব বলয় গড়ে তুলে তাদের দিয়ে টিআর কাবিখাসহ বিভিন্ন উন্নয়ন কাজ করান। এরফলে তার সাথে জাতীয় পার্টির উপজেলা সভাপতি ও সাবেক এমপি ওয়াহেদুজ্জামান সরকার বাদশাসহ স্থানীয় নেতাকর্মীদের বিরোধ সৃষ্টি হয়। এছাড়া তিনি বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কমিটির সভাপতি হয়ে নিয়োগ বাণিজ্য শুরু করেন। এমনকি তিনি গরিব লোকদের কাছ থেকে সামান্য অর্থের বিনিময়ে কৌশলে জমি হাতিয়ে নিয়ে পুকুর খনন করেন। নানান দুর্নীতির কারণে এলাকায় তিনি কোনঠাসা হতে থাকেন। তৎকালীন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন ২০১২ সালে কাদের খানের বিভিন্ন অনিয়ম দুর্নীতির বিরুদ্ধে দুর্র্নীতি দমন কমিশনে অভিযোগ দেন। তদন্তের পর তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়। অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে তিনি রাজনীতিতে যেমন কোনঠাসা হতে থাকেন, তেমনি জনসম্পৃক্ততা কমে যাওয়ায় তিনি জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়তে থাকেন। পরবর্তীতে তিনি ২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনের কাছে পরাজিত হন। এরপর থেকে তিনি এলাকায় আসা প্রায় ছেড়ে দেন। পরবর্তীতে তরুণ ব্যারিষ্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী জাতীয় পার্টিতে যোগ দিয়ে নিজ এলাকা সুন্দরগঞ্জে ব্যাপক রাজনৈতিক তৎপরতা শুরু করলে কর্নেল(অব.) কাদের খান আরও কোণঠাসা হয়ে পড়েন। তিনি লিটন ও শামীম হায়দার পাটোয়ারীকে প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে মনে করতে থাকেন। জাতীয় পার্টির এই সাবেক এমপি আবারও সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার স্বপ্নে এতটাই বিভোর ছিলেন যে, তিনি এমপি লিটনকে পথের কাঁটা ভেবে তাঁকে দুনিয়া থেকেই সরিয়ে দেয়ার ভয়ঙ্কর পরিকল্পনা করেন। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় সুন্দরগঞ্জের বামনডাঙ্গার মাস্টারপাড়ার নিজ বাড়িতে এমপি মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনকে গুলি করে কাদের খানের লালিত-পালিত খুনীরা। কিন্তু প্রথমে সন্দেহের দৃষ্টি থেকে দুরত্বেই ছিল ঘাতক চক্র কাদের খান ও তার সহযোগীরা। এমপি লিটন হত্যার রহস্য উদঘাটন করতে মাঠে নামে গোয়েন্দারা। সন্দেহভাজন অনেকে গ্রেপ্তার হন। একপর্যায়ে উপজেলার ধোপাডাঙ্গায় একটি ছিনতাইয়ের ঘঁনায় ছিনতাইকারীদের গ্রেপ্তার করার পর লিটন হত্যার প্রকৃত রহস্য উন্মোচন হতে থাকে। ২০১৭ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বগুড়ার বাসা থেকে কাদের খানকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরপর তদন্ত শেষে কাদের খানসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে ২০১৭ সালের ৩০ এপ্রিল আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। এরমধ্যে সুবল কসাই নামের এক আসামির কারাগারেই মৃত্যু হয়। জেলা জজ আদালত ২০১৯ সালের ২৮ নভেম্বর এমপি লিটন হত্যাকাণ্ডে জড়িত সাত আসামির মৃত্যুদন্ডের রায় ঘোষণা করেন। দণ্ডিতরা হলো- আব্দুল কাদের খান ও তার পিএস শামছুজ্জোহা এবং হান্নান, মেহেদী, শাহীন, রানা ও চন্দন কুমার রায়। দন্ডপ্রাপ্ত আসামি চন্দ্রন কুমার রায় পলাতক রয়েছে। যেদিন তাকে গ্রেপ্তার করা হবে সেদিন থেকেই তার রায় কার্যকর হবে বলে বিচারক তার রায়ে উল্ল্যেখ করেন। এমপি লিটন হত্যার ঘটনায় পুলিশ দুটি মামলা দায়ের করে। একটি অস্ত্র মামলা ও অপরটি হত্যা মামলা। অস্ত্র মামলার রায়েও একমাত্র আসামি আব্দুল কাদের খানের ১২ বছরের কারাদণ্ড হয়েছে। এদিকে, নিহত এমপি মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনের সহধর্মিণী সৈয়দা খুরশিদ জাহান স্মৃতি এবং সুন্দরগঞ্জের সর্বস্তরের মানুষ এই হত্যা মামলার আসামিদের ফাঁসির রায় দ্রুত কার্যকরের দাবি জানিয়েছেন। আজ মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন হত্যাকাণ্ডের চতুর্থ বার্ষিকীতে সুন্দরগঞ্জের বামনডাঙ্গা সাহাবাজ মাস্টারপাড়ায় তাঁর কবরে পুষ্পস্তবক দিয়ে শ্রদ্ধা জানাবে আওয়ামী, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ও ব্যক্তিগতভাবে বিভিন্নজন। এছাড়াও কোরানখানি, দোওয়া মাহফিল ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। উল্লেখ্য, মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন ছাত্রজীবন থেকেই ছিলেন মৌলবাদ ও সাপ্রদায়িকতার বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর। ১৯৯৮ সালে তিনি বঙ্গবন্ধু পরিষদের সুন্দরগঞ্জ উপজেলা শাখার সভাপতি মনোনীত হন। জামায়াত অধ্যূষিত সুন্দরগঞ্জে তিনি ২০০০সালে কুখ্যাত রাজাকার গোলাম আজমের জনসভা পণ্ড করে দেন ও তার আগমন প্রতিহত করেন। তিনি ২০০৩ সালে ব্যালটের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের উপজেলা শাখার সভাপতি নির্বাচিত হন। এরপর ২০১৪ সালে জাতীয় নির্বাচনে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য ছিলেন। অপরদিকে, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা বলেন, নিম্ন আদালতে দেয়া এমপি লিটনের হত্যা মামলায় আসামিদের ফাঁসির রায় উচ্চ আদালতেও বহাল থাকবে বলে আশা করেন সুন্দরগঞ্জের মানুষ। তারা আসামিদের ফাঁসির রায় কার্যকরের দাবি জানান। স্বামীর খুনীদের ফাঁসির রায় কার্যকর হলে একটু হলেও স্বস্তি পাবেন এমপি লিটনের শোকার্ত অসহায় বিধবা পত্নী সৈয়দা খুরশিদ জাহান স্মৃতি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App