×

সারাদেশ

চা বাগান মালিকের হয়রানির শিকার খাসিয়া সম্প্রদায়

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৩ ডিসেম্বর ২০২০, ০৪:৪৯ পিএম

চা বাগান মালিকের হয়রানির শিকার খাসিয়া সম্প্রদায়

ছবি: প্রতিনিধি

মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার গোয়ালবাড়ী ইউনিয়নের উত্তর কুচাইতল এলাকার পান পুঁঞ্জির খাসিয়া সম্প্রদায়ের বাসিন্দারা স্থানীয় এক প্রভাবশালী চা বাগান মালিকের হয়রানির শিকার হয়ে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। খাসিয়াদের দখলীয় ভূমি থেকে উচ্ছেদ করতে ওই বাগান মালিক একাধিক মামলা দায়েরসহ হুমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন অব্যাহত রেখেছেন বলে জানা গেছে।

আদালতের নথি সূত্রে জানা যায়, ২০১৪ সালে ইসলামাবাদ চা বাগান কর্তৃপক্ষ খাসিয়াদের নিজ দখলীয় আবাদ বাগান কর্তৃপক্ষের লিজ নেয়া ভূমি দাবি করেছে খাসিয়ার পুত্র ব্রলিন খাসিয়া ও মৃত লালই খাসিয়ার কন্যা ওয়ান খাসিয়াসহ মোট আটজনকে বিবাদী করে মৌলভীবাজারে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্টেট আদালতে মামলা দায়ের করে।

পরবর্তীতে মামলাটি বিজ্ঞ বিচারক বিবাদীগণের অনুকূলে মামলাটি নথিজাত করেন। সরজমিনে ওই পান পুঁঞ্জিটি পরিদর্শনে গেলে জানা যায়, খাসিয়াদের পূর্ববর্তীগন তামাদী মেয়াদের বহু ঊর্ধ্বকাল হতে বিরোধীয় ভূমিতে ঘরবাড়ি, বসতভিটা তৈরি করে পান চাষসহ অন্যান্য ফসল আবাদ করে আসছেন। বিরোধীয় ভূমিটি ইসলামাবাদ চা বাগানের মালিক মৃত সিরাজুল ইসলামের খরিদা ভূমি ছিল। ভূমিটি তিনি পূর্ববর্তী ভূমির মালিক সিলেট জেলার কাজীটুলা নিবাসী মৃত আলী চৌধুরীর পুত্র আব্দুল মুকিত চৌধুরীর নিকট থেকে ১৯৫৮ সালের ৩১ মার্চ তারিখে রেজিস্ট্রিকৃত ৩৩৬/৫৮ খ্রি. নং কবালামূলে খরিদা সূত্রে মালিক হন।

পরবর্তীতে ১৯৫৯ সনের ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম ভাগে খাসিয়া সম্প্রদায়ের পূর্ববর্তী ছুইব্লো খাসিয়া, ছত্রি খাসিয়া, জেট খাসিয়া, উকাট খাসিয়া, উসিয়াং খাসিয়া, লিউই খাসিয়া, খ্রো খাসিয়া, লিয়ান খাসিয়া, হাদ্দু খাসিয়া, মথুয়া মুন্ডা গংদের নিকট উপর্যুক্ত মূল্যে বিক্রয়ক্রমে তাদের ভোগ-দখল করার জন্য অনুমতি দেন। কিছুদিন পর দলিল রেজিস্ট্রি করে দিবেন বলে আশ্বাস প্রদান করেন। কিন্তু পরবর্তীতে আর দলিল রেজিস্ট্রি না করে দিয়েই সিরাজুল ইসলাম মৃত্যুবরণ করেন।

তারপর জমিদারী ভেঙে গেলে ইসলামাবাদ চা বাগানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নজরুল ইসলাম গংরা উক্ত ভূমির মালিকানা সরকারের নিকট সারেন্ডার করেন এবং পরবর্তীতে ওই ভূমিটি আরএস জরিপের সময়ে সরকারের নামে জরিপ হলে আবার নিজেদের নামে লিজ গ্রহণ করেন। শিক্ষা দীক্ষায় পিছিয়ে থাকা আদিবাসী খাসিয়াদের নিজ দখলীয় ভূমিসহ ২০০৫ সালে লিজ গ্রহণ করে খাসিয়াদের ভূমি থেকে উচ্ছেদ করতে নানা রকম ভয়ভীতি ও হয়রানিমূলক একের পর এক মিথ্যা মামলা দিচ্ছে বলে স্থানীয় খাসিয়া নেতাদের অভিযোগ।

দীর্ঘ ১৪ বছর পর ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে এক জরিপ করিয়ে সীমানার খুঁটি স্থাপন করে বাগান কর্তৃপক্ষ। তবে খাসিয়ারা সীমানার খুঁটি অপসারণ করে ফেলেছে এমন অভিযোগ এনে পুনরায় ২১ ডিসেম্বর সীমানার খুঁটি স্থাপন করে বাগান কর্তৃপক্ষ।

পান পুঁঞ্জিটির সাবেক প্রধান ব্রলিং সুটিং জানান, তাকে হত্যার হুমকিসহ অর্থের প্রলোভন দিয়ে খাসিয়াদের রক্ষার কার্যক্রম থেকে বিরত রাখার প্রচেষ্টা চালিয়েছেন বাগান কর্তৃপক্ষ।

তিনি আরো জানান, ৫০/৬০টি খাসিয়া পরিবার নিয়ে তাদের বাপ দাদার ভিটা ছেড়ে অন্য কোথায়ও যাবার কোনো জায়গা নেই। এমতাবস্থায় নিরীহ খাসিয়া সম্প্রদায় এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করে এর প্রতিকারসহ ন্যায় বিচার প্রার্থনা করেছেন।

অভিযোগের বিষয়ে ইসলামাবাদ চা বাগানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নজরুল ইসলাম বলেন, আমাদের চা বাগানের নামে সিলেটের এমদাদ আলী চৌধুরীর পুত্র আব্দুল মুকিত থেকে ১১৭.১৩ একর জায়গা আমার পিতা সিরাজুল ইসলাম ক্রয় করেন। যা প্রজাস্বত্ব আইনের অধীনে ২০০৫ সালে সরকারের নিকট সারেন্ডার করি এবং একই সালে ওই জায়গা ২৫ বছরের জন্য চা বাগানের নামে লিজ নেই। খাসিয়াদের সঙ্গে আমাদের কোন বিরোধ নেই। তারা সরকারের খাস খতিয়ানের ভূমিতে ঘরবাড়ি তৈরিসহ পান পুঁঞ্জিতে জুমচাষ করে সেথায় বসবাস করে আসছে। কিন্তু সরকারি খাস খতিয়ানের ভূমি ছাড়াও বাগানের লিজ জমিতে পান চাষ করায় তা উদ্ধারের চেষ্টা করছি আমরা। এতেই আপত্তি জানাচ্ছেন খাসিয়ারা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App