ব্রেকিং |
চিকিৎসা সেবায় পাল্টে গেছে সিংগাইর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স !
মাসুম বাদশাহ, সিংগাইর (মানিকগঞ্জ) থেকে
প্রকাশ: ১১ আগস্ট ২০২৪, ০৯:২৫ পিএম
সিংগাইর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। ছবি: ভোরের কাগজ
গ্রামীণ জনপদে সেবার এক অনন্য দৃষ্টান্ত মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। এ উপজেলার বেশিরভাগ সাধারণ মানুষের চিকিৎসা সেবার একমাত্র কেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির সার্বিক অবকাঠামোর সৌন্দর্য বৃদ্ধি, নিয়ম শৃঙ্খলার উন্নতি ও সেবার মানে ইতোমধ্যে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। বর্তমানে হাসপাতালটির সেবা নিয়েও এলাকার মানুষ সন্তুষ্ট। স্বাস্থ্য সেবার মানের দিক দিয়ে সারা দেশের মধ্যে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে এ হাসপাতালটি।
জানা গেছে, ৫০ শয্যার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে মোট ২৭ জন চিকিৎসকের মধ্যে ১০ জন কনসালটেন্ট ও ২৯ জন নার্স নিয়মিত সেবা দিচ্ছেন। উপজেলার প্রত্যন্ত পল্লী থেকে আসা প্রতিদিন ৫০০-৬০০ জন রোগী সেবা নিচ্ছেন। জরুরী বিভাগে প্রতিদিন ১০০-১৫০ জন রোগী সেবা নিয়ে থাকে। প্রতিমাসে ৫০-৬০ জন গর্ভবতী মায়ের নরমাল ডেলিভারি করা হয়। সিজারিয়ান ডেলিভারি করা হয় ১০-১৫ জনকে।
এ ছাড়াও জরুরী প্রয়োজন বিবেচনায় ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে ডেলিভারী ব্যবস্থা চালু রয়েছে। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের দেয়া হয় বিশেষ স্বাস্থ্য সেবা। নিরাপত্তার দিক বিবেচনা করে সিসি ক্যামেরা দ্বারা পর্যবেক্ষণ করা হয়। স্বাস্থ্য সেবা নিতে আসা একাধিক রোগী জানান, হাসপাতালটিতে সেবার দৃশ্যপট পাল্টে দিয়েছেন বর্তমান স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সৈয়দা তাসনুভা মারিয়া।
তিনি যোগদানের পর থেকে হাসপাতালের খাবার মান, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, সুবিধা-অসুবিধা, ফুল-ফলাদির বাগানসহ সার্বিক বিষয়ে নানা মুখী সৃজনশীল কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সমস্যা ইউনিয়নের মাটিকাটা গ্রাম থেকে চিকিৎসা নিতে আসা রিনা আক্তার বলেন, এক সময় নিয়মিত চিকিৎসক ও ওষুধ পাওয়া যেত না । এখন পর্যাপ্ত পরিমাণ চিকিৎসক রয়েছেন, আমরাও উন্নত মানের সেবা পাচ্ছি। বিনামূল্যে ওষুধ দিচ্ছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত চিকিৎসক সোহল বাবু বলেন, প্রতিদিন চিকিৎসা নিতে আসা বিভিন্ন ধরনের রোগীকে আমরা যত্নসহকারে চিকিৎসা সেবা প্রদানসহ বিনামূল্যে ওষুধ সরবরাহ করছি।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একাধিক স্বাস্থ্যকর্মী জানান, কিভাবে আরো সহজে প্রতিটি ইউনিয়ন, ওয়ার্ড ও গ্রাম পর্যায়ে সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করা যায় সে বিষয়েও প্রতিনিয়ত সভা-সমাবেশের মাধ্যমে দিক-নির্দেশনা দেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা।
সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা সৃজনশীল ভাবনা, শৃঙ্খলা ও যুগান্তকারী উদ্যোগের জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সৈয়দা তাসনুভা মারিয়ার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
এদিকে সিংগাইর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের শুরু থেকে জুলাই পর্যন্ত আউটডোরে ৮৩ হাজার ৮২৪ জন ও হাসপাতালে ভর্তি ১০ হাজার ৯১০ জনকে স্বাস্থ্য সেবা দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া মোট ৪৯০ জনকে ডেলিভারী করা হয়েছে। এর মধ্যে নরমাল ৪১১ জন ও সিজারিয়ান ডেলিভারী ৭৯ জন। সারা দেশের মধ্যে হাসপাতালে স্বাস্থ্য সেবার মানের দিক দিয়ে তৃতীয় স্থানে অবস্থান রয়েছে এটি।
আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. হাফিজুর রহমান বলেন, আমাদের হাসপাতালে অর্থোপেডিক ও চক্ষু চিকিৎসক পদ খালি রয়েছে। বাকি সবগুলো পদে কনসালটেন্ট ও বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দ্বারা চিকিৎসা সেবা দেয়া হয়ে থাকে। স্বাস্থ্য সেবার মান আরো উন্নত করতে আমাদের এ চেষ্টা অব্যাহত থাকবে ।
এ ব্যাপারে সিংগাইর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সৈয়দা তাসনুভা মারিয়া বলেন, রোগীদের উন্নত সেবা দানের জন্য চিকিৎসক-নার্স সকলেই নিরলসভাবে কাজ করছি। স্বাস্থ্য সেবা নিতে আসা রোগীর দিক বিবেচনায় ৫০ শয্যার এ হাসপাতালটি ১০০ শয্যায় উন্নীত জরুরী।
আরো পড়ুন: যেভাবে ২৬ বছর পর কারামুক্ত হলেন শিবির নেতা নাছির উদ্দিন
তিনি আরো বলেন, বিদ্যুতের ঘাটতির কারণে জেনারেটর চালু রাখতে হচ্ছে। তবে সরকারিভাবে জেনারেটরের তেল বরাদ্দ না থাকায় সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। আশা করি, দ্রুত এ সমস্যার সমাধান হবে।