সাকিব আল হাসান
১ কোটি টাকা পাওনার অভিযোগ কাঁকড়া ব্যবসায়ীদের
কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ০৭ আগস্ট ২০২৪, ০৩:৩৩ পিএম
ছবি: সংগৃহীত
ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের বিরুদ্ধে ১ কোটি টাকা পরিশোধ না করার অভিযোগ করেছেন কাঁকড়া ব্যবসায়ীরা। অভিযোগ রয়েছে, কাঁকড়া হ্যাচারিতে সফট সেল কাঁকড়া নিলেও এখন পর্যন্ত টাকা পরিশোধ করেননি ক্রিকেটার ও সদ্য বিলুপ্ত সংসদের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য সাকিব আল হাসান। তার কাছে কোটি টাকারও বেশী পাওনা রয়েছে বলে দাবি করেছে এক পাওনাদার।
জুলফিকার আলী নামের ওই কাঁকড়া ব্যবসায়ী বলেন, ২০২১ সালে খামারটি বন্ধ হওয়ার পরে নানাভাবে আমরা চেষ্টা করেছি টাকা আদায় করতে। তবে কোনভাবেই আদায় করতে পারিনি। এক বছর আগে মাগুরায় সাকিব আল হাসানের বাড়িতে গিয়েছিলাম তার বাবার কাছে। আমাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছেন। তারপর থেকে বিষয়টি সেভাবেই রয়েছে। টাকা পাবো তার মেমো বা প্রমাণপত্র এখনো আমাদের কাছে রয়েছে।
২০১৬ সালে সাতক্ষীরা উপকূলের দাতিনাখালি এলাকায় সড়কের পাশে ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান গড়ে তোলেন একটি কাঁকড়া খামার। নাম দেন সাকিব আল হাসান এগ্রো ফার্ম। স্থানীয় ১০-১২ জন জমির মালিকের কাছ থেকে লিজ নেন ৪৮ বিঘা জমি।
খামার প্রতিষ্ঠার পর থেকেই সেখানে সফটসেলের কাঁকড়া দিতেন মুন্সিগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডের পাশের বাসিন্দা জুলফিকার আলী। তিনি গণমাধ্যমকে জানান, আমরা কাঁকড়া দিয়ে মাস শেষে টাকা নিতাম। হিসাব রাখতো সাকিবের খামারের দায়িত্বরত ম্যানেজার। এভাবে চলার এক পর্যায়ে আমাকে প্রায় ৩ মাসের টাকা দেয়া হয়নি। আমি এখনো ৫-৬ লাখ টাকা পাবো।
সাকিব আল হাসান, তার বন্ধু পাভেল, ইমদাদ ও আরেকজনসহ মোট ৪ জন খামারটি করেছিলেন। আমরা মূলত সাকিবকে দেখেই তাদের সঙ্গে ব্যবসায় যুক্ত হয়েছিলাম। মেমোতেও সাকিবের নাম ছিল।
ইতোমধ্যে সাকিব আল হাসানের কাছে পাওনা প্রায় ৩০ লাখ টাকার শোকে মারা গেছেন বুড়িগোয়ালীনি ইউনিয়নের ভামিয়া গ্রামের গুরু দাস। অভিযোগ করেন জুলফিকার আলী।
তিনি বলেন, গুরু দাস হার্ড কাঁকড়া দিতেন সাকিবের খামারে। ৩০ লাখ টাকা বাকি পড়ে তার। গুরু দাস, আমি এবং আরো ৪-৫ জন সাকিবের বাড়িতে গিয়েছিলাম। বাড়ি থেকে সাকিবেরর বাবা খারাপ ব্যবহার করে বের করে দেয়ার মন খারাপ করে আমরা ফিরে আসি।
জুলফিকার আলী বলেন, গুরুদাসের ব্যবসা ভালো যাচ্ছিলো না। অন্যরাও তার কাছে টাকা পাবে। এদিকে সাকিবের কাছ থেকে পাওনা টাকা আদায় করতে পারছিলেন না। এসব চিন্তায় স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় গুরুদাসের। আমরা ১৩-১৪ জন এখনো সব মিলিয়ে কোটি টাকার বেশী পাবো ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের কাছে। আমরা আমাদের পাওনা টাকা ফেরত চাই।
বুড়িগোয়ালীনি ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের প্রাক্তন ইউপি সদস্য হায়দার আলী বলেন, আমি সফট সেল কাঁকড়া দেয়ার পর ৫০ হাজার টাকা এখনো পাইনি। আমার টাকা একটু কম হলেও অন্য পাওনাদাররা মোটা অংকের টাকা পাবেন।
করোনাকালীন সময়ে সাকিব আল হাসানের কাঁকড়া হ্যাচারি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর জমির মালিকদের বছরে চুক্তির টাকা দিতেও গড়িমসি করে সে। তখন মানববন্ধনসহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীরা। এসব বিষয় নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর জমির মালিকদের পাওনা টাকা দেয়া হয়।
জমির মালিকদের একজন দাতিনাখালি গ্রামের মোরালী কয়াল। গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, টাকা আদায় করতে অনেক ঝামেলা হয়েছে। আগে টাকা নিতে গিয়ে আন্দোলন করতে হয়েছে। আমরা জমির মালিক মোট ১০-১২ জন। চুক্তিপত্রের মেয়াদ ২০২৫ সাল পর্যন্ত, এরপর আমরা আর কেউ জমি লিজ দিতে চাই না।
মোরালী কয়াল আরো অভিযোগ করে বলেন, অবৈধভাবে আমাদের জমির উপর বিল্ডিং করা হয়েছে। চুক্তিপত্রে মোটেও এর উল্লেখ ছিল না। এখন সেখানে কেউ থাকে না। খামার বন্ধ হওয়ার পর থেকে তাদের এখানে দেখাও যায় না। সেভাবেই সবকিছু পড়ে রয়েছে।
আরো পড়ুন: মুগ্ধ-সাঈদদের স্মরণে ক্রিকেটারদের এক মিনিট নীরবতা
সাকিব আল হাসানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, সরকারি প্রণোদনার অর্থ আসলে জমির মালিকদের ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে। আমরা লোকসানের মুখে পড়েছি। মহামারির মধ্যে আমাদের ৫ কোটি টাকার অর্ডার বাতিল করা হয়েছে। সরকারের কাছ থেকে প্রণোদনা হিসেবে ঋণ পেলে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিকদের প্রাপ্য অর্থ পরিশোধ করতে পারব।