প্রশিক্ষণ ও সহায়তার অভাবে হারিয়ে যাচ্ছে মুন্সীগঞ্জের ঐতিহ্য পান চাষ
মুন্সিগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৩ আগস্ট ২০২৪, ০৩:২৭ পিএম
ছবি: ভোরের কাগজ
পান একটি নিত্যপ্রয়োজনীয় কাঁচাপণ্য। দেশের প্রায় সব জেলাতেই কম বেশি পানের চাষ হয়। মুখরোচক খাবার হিসেবে পান’র কদর অনেকটাই।
মুন্সিগঞ্জ জেলা সদরের রামপাল ইউনিয়ন,পঞ্চসারের রতনপুর, জিয়সতলা, চাম্পাতলা, রামের গাও, ধলাগাও, চন্দনতলাসহ বিভিন্ন এলাকার স্বল্প পরিসরে পান চাষ করা হয়।
এসব এলাকার মাটি ও আবহাওয়া পান চাষের উপযোগী হওয়ায় শত বছর আগেও ব্যাপক হারে পান চাষ হত। উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ায় ও প্রশিক্ষণ এবং সহায়তার অভাবে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে পান চাষিরা। ফলে হারিয়ে পাওয়ার পথে মুন্সিগঞ্জের এই ঐতিহ্য।
জানা যায়, এখানকার উৎপাদিত পান জেলার চাহিদা পূরণ করে দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হয়। বিভিন্ন জায়গা থেকে পাইকাররা এসে বাজার এবং পানের বরজ থেকে সপ্তাহে দুইদিন পান সংগ্রহ করে থাকে।
সপ্তাহে দুদিন পাইকারদের চাহিদা অনুযায়ী পান বাজারজাত করেন চাষিরা। রতনপুর চাম্পাতলা এলাকার পানচাষি মো. নুর হোসেন প্রতিবেদক কে জানায়, ৮০ শতক জমিতে পানের আবাদ করেছি। পারিবারিক ভাবে বহু বছর ধরেই পান চাষ করি। সংসারের একমাত্র আয়ের উৎস পান। বর্তমানে পানের উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ার চাষ অনেকটাই কমিয়ে দিয়েছি। কোনো প্রকার সহযোগিতা ও প্রশিক্ষণ দেয় না কৃষি দপ্তর। বাপ দাদার এই চাষ করে এসেছেন, এখন আমরা করছি। কমবেশি লোকসান হয়। তবুও চাষ করা ছাড়তে পারি না। তাই আবাদ অনেকটাই কমিয়ে দিয়েছি।
আরো পড়ুন: নোয়াখালীতে বাস চাপায় মা-ছেলেসহ নিহত ৩
চাষি শাহাদাত হোসেন জানায়, ২০ শতক জমিতে পান চাষ করছি। গতবছর লোকসান গুনতে হয়েছে। এবারও একই অবস্থা। দাম খুবই কম। তবে উৎপাদন বাড়ানো, রোগব্যাধি নির্মূল, স্যার ও কীটনাশকের সঠিক ব্যবহার সম্পর্কে ধারণা না থাকায় নতুন করে কেউ পান চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। উৎপাদন খরচ এবং দাম কম হওয়ায় পুরোনো চাষিরাও মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন পান চাষ থেকে। ফলে অনেকটাই কমে যাচ্ছে পানের আবাদ।
পান আবাদ ও বিক্রি করা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কৃষক জানায়, বছরের আষাঢ় শ্রাবণ মাসে পানের চাষ শুরু হয়। বিক্রির উপযোগী হতে ৪ মাস সময় নেয়। জাত অনুসারে বিক্রির উপযোগী হতে কিছু পান ৬ থেকে ৭ মাস সময় লাগে। বিভিন্ন জাতের মধ্যে গয়াসুর, চালতা গোটা, মাহাকাল ইত্যাদি জাত উল্লেখযোগ্য।
তবে উৎপাদন হিসেবে পানের দাম অত্যন্তম। এক বিরা পানে আশি পিছ। যার বর্তমান বাজার মূল্য ৩০-৬০ টাকা আর শীত মৌসুমে ৫০-৮০ টাকা বিক্রি হয়। ব্যয় অনুযায়ী তেমন লাভ হয় না। পরিবারের বিকল্প উপার্জন না থাকায় চরম অর্থকষ্টে পান চাষিরা।
চাষিরা আরো জানান, আগে এখানে শত শত বিঘা জমিতে পান চাষ করা হত। এখন অনেকটাই কমে গেছে। সরকার থেকে আমাদের কোনো সহযোগিতা করা হয় না। কোন প্রশিক্ষণ করায় না। তবে সরকারি সুযোগ সুবিধা পাওয়া গেলে আবারো পান চাষে আগ্রহ ফিরবে অনেকের। এমনটাই দাবি স্থানীয় কৃষক ও সচেতন মহলের।
আর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ভোরের কাগজকে জানান, পান চাষে সরকারি ভাবে কোন ধরনের প্রণোদনার সুযোগ নেই। উৎপাদন বৃদ্ধিতে পান চাষিরা প্রশিক্ষণে আগ্রহী হলে তাদের প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। তবুও তাদের বিষয়টি দেখবো।