কাজ না করে সরকারি টাকা ভাগাভাগি!
মসিউর ফিরোজ, সাতক্ষীরা থেকে
প্রকাশ: ০৬ জুলাই ২০২৪, ০৯:৩৫ পিএম
ছবি:ভোরের কাগজ
সারাদেশে উন্নয়নের মহাযজ্ঞ চলছে। হাজার হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে সারাদেশে। এসব প্রকল্পের লক্ষ্য অর্জনে বড় অন্তরায় হয়ে উঠেছে ঠিকাদার ও অতি আগ্রাসী অর্থলোভী এলজিইডি কর্মকর্তারা। সাতক্ষীরা এলজিইডি কর্মকর্তাদের আগ্রাসনে প্রায় আড়াই কোটি টাকার দুইটা প্রকল্পে কাজ না করে টাকা ভাগাভাগি করে নিয়েছে সাতক্ষীরা এলজিইডি নির্বাহী প্রকৌশলী সুজায়েত হোসেন (সাবেক, বর্তমান পৌর পিডি), শ্যামনগর উপজেলা প্রকৌশলী জাকির হোসেন ও সাবেক উপসহকারী প্রকৌশলী শহিদুল ইসলাম।
অফিস সূত্রে জানা গেছে, খুলনা বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা জেলার পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন শীর্ষক (কেবিএস) প্রকল্পে ২০২০ সালের জুনে ২ কোটি ৩৬ লাখ টাকা চুক্তিমূল্যে সাতক্ষীরা শ্যমনগর উপজেলার চিংড়াখালী ও ফুলতলা দুইটি প্রকল্পে প্রায় দুই কিলোমিটার রাস্তা পাকাকরণের কার্যাদেশ দেয়া হয় কোস্টাল ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন (ভাড়া করা) নামের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে। এবং ২০২১ সালের মে ও জুনে প্রকল্প দুইটি কাজ সমাপ্তির মেয়াদকাল উল্লেখ করা হয়। কিন্তু ঠিকাদার সময়মত কাজ না করে ফেলে রাখে প্রায় ৪ বছর।
এরপর ২০২২-২৩ অর্থ বছরের জুনে সাবেক এলজিইডি নির্বাহী প্রকৌশলী সুজায়েত হোসেন (বর্তমান পৌর পিডি), শ্যামনগর উপজেলা প্রকৌশলী জাকির হোসেন ও সাবেক উপসহকারী প্রকৌশলী শহিদুল ইসলাম দুর্নীতির নীল নকশা তৈরি করে জুন ক্লোজিংয়ে (২২ জুন) প্রকল্প দুইটির ফাইনাল বিল উত্তোলন করে। উত্তোলিত অর্থ হজম ও প্রকল্প দুইটি সমাপ্ত করার লক্ষ্যে সুকৌশলী চক্রটি ঠিকাদারকে কাজ সমাপ্তির প্রত্যায়ন দিয়েছে। এছাড়া তারা প্রকল্প দুইটিতে ২৫/২৬ লাখ টাকা রেখে দিয়েছে। পরবর্তীতে ধরা খেলে, তারা বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করতে পারে। ঐ টাকায় ১০ শতাংশ কাজ হবে না। কাগজে কলমে প্রকল্পের কাজ শেষ। বাস্তবে রাস্তা পাকা না হলেও কর্মকর্তাদের পকেট পাকা হয়েছে।
দেখা গেছে, শ্যামনগর উপজেলার চিংড়াখালী ও ফুলতলা রাস্তা পাকাকরণের প্রকল্পে কাজ না করে টাকা লুটপাট করেছে মাস্টার মাইন্ড সুজায়েত হোসেন সিন্ডিকেট। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, সম্প্রতি তাড়াহুড়া করে সুজায়েতের নির্দেশে (বর্তমান পৌর পিডি) থিকনেচ কম, নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করে ফুলতলা রাস্তার কার্পেটিং করলেও নেই প্যালাসাইটিং। অপরটিতে কিছু অংশে ডাব্লিউবিএমের নিম্নমানের খোয়া ফেলে রেখেছে। রোলারের ছোয়া বিন্দুমাত্র লাগেনি। প্রায় ৫শ মিলিমিটার রাস্তা বেড কেটে সালভেজের ইট ফেলে তৈরি করে রেখেছে মরণ ফাঁদ। নেই প্যালাসাইটিং। দুই এক জায়গায় প্যালাসাইটিংয়ের কাজ করলে তা খুবই নিম্নমানের। এর ফলে বিপাকে পড়েছে অত্র এলাকার কয়েক লাখ মানুষ।
অত্র এলাকার বাসিন্দা জামাল হোসেন, কামাল হোসেন, গ্রাম্য চিকিৎসক নিত্য, গনেশ, শঙ্কর ও সাবিনা খাতুন জানান, আমাদের রাস্তা পাকা হবে শুনে খুর খুশি হয়েছিলাম কিন্তু বিগত ৪/৫ বছরের মধ্যে শুধু খুড়ে ফেলে রেখে গেছে। আর তারা আসে না। কাজও করে না। সড়কের পাশে গড়ে উঠা বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও ঘরবাড়ি, প্রতিদিন ধুলোয় ধূসর হয়ে যাচ্ছে। হাজার হাজার বিঘা জমির উৎপাদিত ফসল ও সাদা সোনা খ্যাত বাগদা ঠিক সময়ে বাজারজাত করতে না পারায় আর্থিক ক্ষতির মুখে স্থানীয় কৃষক ও ব্যবসায়ীরা।
তারা আরো জানান, কিছু দিন হলো আমরা জানতে পারলাম এই রাস্তার কাজ নাকি শেষ হয়ে গেছে। ঠিকাদার টাকাও পেয়ে গেছে। কীভাবে কাজ শেষ হলো? কাজ তো শুরু করেনি। শুধু রাস্তা খুঁড়ে ফেলে রাখলে কি পিচ রাস্তা হয়ে যায়? স্বপ্নের পাকা রাস্তা পাকা না করে, যারা টাকা লুটপাট করেছে তাদের বিচার দাবি করেছেন এলাকাবাসী।
কোস্টাল ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন’র অধিপতি ফারুক হোসেন বলেন, আমার লাইন্সেস ভাড়া নিয়েছিল ভেকু আরশাফ, উপজেলা প্রকৌশলীর জাকির হোসেনের মাধ্যমে। কাজ পাওয়ার পর তাকে লেনদেনের ম্যানডেডও দিয়েছি। আমি জানি আমার কাজ শেষ হয়ে গেছে গত বছর। ২০২৩ সালের জুনে কাজ সমাপ্তির প্রত্যায়ন পেয়েছি। আমি আসলে বুঝতে পারছি না আপনি কি বলছেন। খোঁজ নিচ্ছি।
শ্যামনগর উপজেলা প্রকৌশলীর জাকির হোসেন বলেন, জুন ক্লোজিং ছিল তাই স্যার (সুজায়েত হোসেন) আমাকে বলছিল বিল উত্তোলন করার জন্য। তাই আরকি। টাকা স্যারের কাছে আছে। কাজ না করে ফাইনাল বিল কীভাবে হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভাবছিলাম দুই এক মাসের মধ্যে প্রকল্প দুইটির কাজ শেষ করে ফেলবো। আমরা কিন্তু প্রকল্পের ২৫/২৬ লাখ টাকা রেখে দিয়েছি। ২৫/২৬ লাখ টাকায় প্রকল্পের ১০ শতাংশ কাজও হবে না সেক্ষেত্রে কি করবেন, আপনি শুধু রিপোর্টটা করেন না। আমরা নিজেরা টাকা দিয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন করে দেবো।