×

সারাদেশ

প্রধানমন্ত্রীর উপহারের চাল আত্মসাৎ করেও বহাল তবিয়তে ইউপি চেয়ারম্যান

Icon

সুরেশ চন্দ্র রায়, মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২৪ মে ২০২৪, ০৬:২৫ পিএম

প্রধানমন্ত্রীর উপহারের চাল আত্মসাৎ করেও বহাল তবিয়তে ইউপি চেয়ারম্যান

শিবালয় উপজেলার শিমুলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান জহির উদ্দিন মানিক

প্রধানমন্ত্রীর উপহারের চাল আত্মসাতের বিষয়টি হাতেনাতে ধরা পড়ার পরও মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার শিমুলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান জহির উদ্দিন মানিককে কেন এখনও আইনের আওতায় নেয়া হচ্ছে না এমন অভিযোগ স্থানীয়দের।

ইউনিয়নবাসীর শঙ্কা, কোন অর্থলোভী মহল চেয়ারম্যান জহির উদ্দিন মানিকের নিকট থেকে মোটা অংকের আর্থিক সুবিধা গ্রহণ করে বিষয়টিকে ধামাচাপা দেয়ার পায়তারা করছেন না তো!

শিমুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ৪,৫,৬ নম্বর ওয়ার্ডের নারী সদস্য রোকেয়া বেগম জানান, তাদের ইউনিয়নে মোট কার্ডের সংখ্যা ১ হাজার ৩৩৭টি। এদের মধ্যে চেয়ারম্যান দুইশ কার্ড উপজেলায় দিয়ে আসেন, ১২জন মেম্বারকে ৪৪টি করে মোট ৫২৮টি বিতরণ করেন এবং বাকি ৬০৯টি কার্ডের মাল তিনি নিজে রেখে দেন। গতবছর ২৬ জুন ভিজিএফের মাল বিতরণের পর অতিরিক্ত ৫২ বস্তা চাল চেয়ারম্যান রাতের মধ্যে গায়েব করে ফেলেন। এবছরও ট্যাগ অফিসার ও সাংবাদিকদের হাতে ২টন চাল চুরির ঘটনা ধরা না পড়লে তিনি সবার কাছে সাধুই থেকে যেতেন। তার এই অপকর্মের সঠিক বিচার হওয়া প্রয়োজন।

ইউপি সদস্য আরিফ বিশ্বাস জানান, প্রথম থেকেই এই চেয়ারম্যান একের পর এক দুর্নীতি করে যাচ্ছেন। এমন পরিস্থিতি দেখে আরিফ মেম্বার ৩ মাসের মাথায় ইউএনও অফিসে গিয়ে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করার জন্য আবেদন করেন। কিন্তু ওই সময়ের নির্বাহী কর্মকর্তা জাহিদুর রহমান তার সে আবেদন গ্রহণ করেননি। চেয়ারম্যানের অন্যায় অবৈধ কাজ এখনও চলমান রয়েছে। গত ঈদের আগে ভিজিএফের চাল আত্মসাৎ করে তিনি অত্যন্ত গর্হিত অপরাধ করেছেন। বিষয়টি বুক ফুলিয়ে বলতে পারবো, সাংবাদিকরা সাহসিকতার সঙ্গে লিখতে পারবে। কিন্তু বাকি বিষয়টি নির্ভর করছে প্রশাসনের ওপর। প্রশাসন যদি এ অপরাধের সঠিক বিচার করে তবেই আমার বলা আর আপনার লেখা স্বার্থক হবে। এ অপরাধের সঠিক বিচার হলে কেউ আর এ ধরণের কুকর্ম করার সাহস পাবে না।

আরো পড়ুন: সাতক্ষীরার জেলা মৎস্য কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ

সাকরাইল গ্রামের মোহাম্মদ আলী চৌধুরী টুলু বলেন, শিমুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এ পর্যন্ত জহির উদ্দিন মানিকের মত অর্থলোভী লোক এ চেয়ারে আগে কখনো বসেননি। গণমাধ্যম এবং ট্যাগ অফিসারের কাছে তথ্য রয়েছে ২টন চাল তিনি আত্মসাৎ করেছেন। কিন্তু মূলত তিনি ৫ থেকে ৬টন চাল অন্যত্র সরিয়ে ফেলেছেন বলে জানান টুলু। চাল চুরি ছাড়াও তিনি অসংখ্য অন্যায় অবৈধ কাজ করেছেন। এখন যদি এই ব্যক্তির উপযুক্ত বিচার না হয় প্রশাসনের ওপর থেকে মানুষ আস্থা হারিয়ে ফেলবে এবং এদের মত লোক আরো খারাপ কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত হবেন।

শিবালয় উপজেলা পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা ও চাল বিতরণ কার্যে নিয়োগকৃত ট্যাগ কর্মকর্তা রুবেল মিয়ার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শিমুলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান জহির উদ্দিন মানিক ভিজিএফের ২ টন চালের কোন হিসাব দিতে পারেননি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঈদুল ফিতর উপলক্ষে সারাদেশে ভিজিএফের আওতায় অসহায় দুস্থদের জন্য ১০ কেজি করে চাল বরাদ্দ দেয়া হয়। এরই ধারাবাহিকতায় শিবালয় উপজেলার শিমুলিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জহির উদ্দিন মানিক ৫০ কেজি ওজনের ২৬৪ বস্তা চাল বরাদ্দ পান। কিন্তু চাল বিতরণকালে ৪২ বস্তা চাল কম পান দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা।

এ বিষয়ে জহির উদ্দিন মানিক চেয়ারম্যানকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বিভিন্ন টালবাহানা করতে থাকেন। এক পর্যায়ে তিনি বলেন, ট্রাক গাড়ি না পাওয়ায় ওইদিন সবগুলো চাল আনা সম্ভব হয়নি।

আরো পড়ুন: স্ত্রী ও দুই সন্তানকে হত্যার পর একাই পুঁতে রাখেন আলী

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার প্রতিনিধি ও  উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সুদেব রায় জানান, তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে ৫০ কেজি ওজনের ৪২ বস্তা চাল কম পেয়েছেন। পরে চেয়ারম্যান জেলা থেকে ৩০ কেজির বস্তায় চাল কিনে আনেন। বিষয়টি লিখিতভাবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

শিবালয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. বেলাল হোসেন জানান, এ বিষয়টি লিখিতভাবে জেলা প্রশাসকে জানানো হয়েছে। জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়কে জানানোর কথা। আগামী রবিবার এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে পারবেন।

এ বিষয়টি জানতে মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসক রেহেনা আক্তারের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App