×

সারাদেশ

উপজেলা নির্বাচন

অধিকাংশ কেন্দ্র ভোটার শূণ্য, জাল ভোট দিতে গিয়ে ৩ জন আটক

Icon

মিরসরাই (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৮ মে ২০২৪, ০৮:১১ পিএম

অধিকাংশ কেন্দ্র ভোটার শূণ্য, জাল ভোট দিতে গিয়ে ৩ জন আটক

ছবি: ভোরের কাগজ

বড় ধরণের সহিংসতা ছাড়াই শেষ হয়েছে মিরসরাই উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। 

বুধবার (৮ মে) ভোরবেলা থেকে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি থাকায় কেন্দ্রগুলোতে ভোটার উপস্থিতি তেমন ছিলো না। বেলা ১১টা নাগাদ ভোটার উপস্থিতি বাড়লেও দুপুর নাগাদ আবার শূন্য হয়ে যায় কেন্দ্রগুলো। উপজেলার ১২নম্বর খইয়াছড়া উত্তর আমবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে জাল ভোট দেয়ার সময় ১ জন সহকারি প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ও ২ জন পোলিং এজেন্টকে আটক করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিকহাত আরা। 

এছাড়া উপজেলার মঘাদিয়া ইউনিয়ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোটার আসার সময় বাঁধা দেয়াকে কেন্দ্র করে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি তোফায়েল উল্ল্যাহ চৌধুরী নাজমুল, যুগ্ম সম্পাদক শেখ মো. হামিদুল্লাহ চৌধুরী, রবিউল হোসেনের উপর স্থানীয় চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর হোসাইন মাস্টারের সমর্থক ইকবালের নেতৃত্বে হামলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। খইয়াছড়া ইউনিয়নের বড়তাকিয়া যাহেদিয়া দাখিল মাদরাসা কেন্দ্রে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী এনায়েত হোসেন নয়নের ১০ জন এজেন্টের মধ্যে ৮ জন এজেন্টকে মারধর করে সকাল সাড়ে ৮টায় কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়ার অভিযোগ ওঠে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী শেখ মোহাম্মদ আতাউর রহমানের সমর্থকদের বিরুদ্ধে। 

এছাড়া উপজেলার ৪নম্বর ধুম ইউনিয়নের উত্তর ধুম দৌলত বিবি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোটারদের আসতে বাধা দেয়ার অভিযোগ করেন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী এনায়েত হোসেন নয়নের এজেন্ট সাবেক ইউপি সদস্য সিরাজ উদ্দিন।

জানা গেছে, ৬ষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ১ম ধাপে বুধবার সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে মঙ্গলবার ১১৩ কেন্দ্রে ভোট গ্রহণের জন্য বিভিন্ন সরঞ্জাম পাঠানো হলেও বুধবার ভোর ৪টায় পাঠানো হয় ব্যালট পেপার। সকাল সাড়ে ১১টায় মঘাদিয়া ইউনিয়ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায় বিভিন্ন রাস্তার মুখে মুখে বহিরাগত যুবকরা দাঁড়িয়ে আছে। কেন্দ্রে ভোটার আসতে বাঁধা দেয়ার অভিযোগ পেয়ে ঘটনাস্থলে গেলে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি তোফায়েল উল্ল্যাহ চৌধুরী নাজমুল, যুগ্ম সম্পাদক শেখ মো. হামিদুল্লাহ চৌধুরী, রবিউল হোসেনের উপর প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী শেখ মো. আতাউর রহমানের পক্ষে কাজ করা স্থানীয় চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর হোসাইন মাস্টারের সমর্থক ইকবালের নেতৃত্বে হামলার অভিযোগ করেন চেয়ারম্যান প্রার্থী এনায়েত হোসেন নয়ন। এসময় তিনি স্থানীয় চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর মাস্টার কর্তৃক ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে আসতে বাঁধা দেয়া ও তাঁর সমর্থকদের মারধর করার অভিযোগ করেন। প্রিসাইডিং কর্মকর্তা লিটন চন্দ্র নাথ বলেন, কেন্দ্রের মধ্যে কোনোরূপ গোলযোগ ছাড়া ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হচ্ছে; কেন্দ্রের বাইরে সংঘর্ষের বিষয়টি আমি জানি না। সকাল ১০টা পর্যন্ত ৮টি বুথে ৩৬৫১ ভোটের মধ্যে সংগ্রহ হয় ২৫৫ ভোট। 

আরো পড়ুন: ভোট কম পড়ার কারণ জানালেন সিইসি

সকাল ১০টায় উপজেলার ১২নম্বর খইয়াছড়া ইউনিয়নের বড়তাকিয়া যাহেদিয়া দাখিল মাদরাসা কেন্দ্রে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী এনায়েত হোসেন নয়নের ৮জন এজেন্টকে মারধর করে কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়ার অভিযোগ করেন ইউনিয়নের সন্বয়ক এসএম সরোয়ার উদ্দিন। তিনি অভিযোগ করেন প্রতিদ্বন্ধি প্রার্থী শেখ মোহাম্মদ আতাউর রহমানের সমর্থক ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি নাহিদুল হাসান রাবিব সকালে কেন্দ্রে গিয়ে ৮জন এজেন্ট থেকে এজেন্ট কার্ড নিয়ে বের করে দেন। এসময় তাদের কেন্দ্রের বাহিরে নিয়ে মারধর করেন। চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী এনায়েত হোসেন নয়নের ওই কেন্দ্রের উপ-সচিব মো. ওয়াসিমকে বেদম প্রহারের অভিযোগ করেন। প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ওমর ফারুক জানান, সকাল ১০টা পর্যন্ত ৪৮০৬ ভোটের মধ্যে ৩৩৩ ভোট সংগ্রহ হয়। সেখানে ২ ঘন্টায় ০.৬৯% ভোট সংগ্রহ হয়।

উপজেলার ১২নম্বর খইয়াছড়া উত্তর আমবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে দুপুরে জাল ভোট মারার সময় ১জন সহকারি প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মুক্তি রাণী হাওলাদার এবং পোলিং এজেন্ট মুন্নি বড়–য়া ও সমীর চন্দ্র দাশকে একটি ব্যালট বইয়ে সীল মারা সহ হাতেনাতে আটক করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিকহাত আরা। কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা পুলিশের মোবাইল টিম ইনচার্জ (এসআই) সায়েদুর রহমান জানান, ওই তিনজনকে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে হস্তান্তর করা হয়েছে। 

উপজেলার করেরহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের দুপুর ২টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত ৪৪০৯ জন ভোটারের মধ্যে ভোট প্রদান করেন ৯৬৮ জন। করেরহাট কেএম উচ্চ বিদ্যালয়ের ৪নম্বর কেন্দ্রে ৪১৭০ ভোটারের মধ্যে ভোট সংগ্রহ হয় ১০৪৭টি। কেন্দ্র দু’টিতে দুপুরের সময় ভোটার উপস্থিতি ছিলো একদম কম। 

উপজেলার আজমনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে দুপুর দেড়টায় ৪৩৭১ জন ভোটারের মধ্যে সংগ্রহ হয় ৭৫০ ভোট। প্রিসাইডিং অফিসার ইকবাল হোসেন বলেন, সকালে ভোটার উপস্থিতি বেশী হলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভোটার আসা কমে যায়। 

আরো পড়ুন: উপজেলা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শেষ, চলছে গণনা

মিরসরাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ও উপজেলা পরিষদ নির্বাচন সমন্বয়কারী মাহফুজা জেরিন বলেন, দুয়েকটি বিছিন্ন ঘটনা ছাড়া নির্বাচনে সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। উত্তর আমবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের একটি বুথে সীল মারা একটি ব্যালট পেপারের বই উদ্ধার করা হয়েছে। নির্বাচনী কর্মকর্তা আটকের বিষয়ে ওই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসারের রিপোর্ট পাওয়ার বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হবে। 

প্রসঙ্গত, মিরসরাইয়ে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে এনায়েত হোসেন নয়ন (কাপ পিরিচ), শেখ আতাউর রহমান (ঘোড়া), ফেরদৌস হোসেন আরিফ (আনারস), উত্তম কুমার শর্মা (দোয়াত কলম) ও মো. মোস্তফা (মোটর সাইকেল) প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। চেয়ারম্যান পদে এনায়েত হোসেন নয়ন ও শেখ আতাউর রহমানের মধ্যে মূল প্রতিদ্বন্দ্বীতা হয়। ভাইস চেয়ারম্যান পদে সাইফুল ইসলাম (চশমা), শেখ সেলিম (টিয়া পাখি), সালাহ উদ্দিন আহমেদ (টিউবয়েল), সাইফুল আলম (তালা) প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। ভাইস চেয়ারম্যান পদে সাইফুল ইসলাম ও শেখ সেলিমের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে বর্তমান মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ইসমত আরা ফেন্সি (কলস), উম্মে কুলসুম কলি (ফুটবল), বিবি কুলছুম (পদ্মফুল) প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। এখানে ইসমত আরা ফেন্সি ও উম্মে কুলসুম কলির মধ্যে মূল প্রতিদ্বন্দ্বীতা হয়।

মিরসরাই উপজেলায় মোট ভোটার ৩ লাখ ৭২ হাজার ২৫৭ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৯২ হাজার ৭২০ জন, মহিলা ভোটার ১ লাখ ৭৯ হাজার ৫৩৫ জন। তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ২ জন। 

নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করেন ১১৩ জন প্রিজাইডিং অফিসার, ৮৩৮ জন সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার, ১৬৭৬ জন পোলিং এজেন্ট। ১ জন জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও ১৮ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় প্রতিকেন্দ্রে আনসার-ভিডিপি’র ১২ জন করে, পুলিশের স্ট্রাইকিং টিম ১০টি, মোবাইল টিম ১৯টি, ব্যাটালিয়ন আনসার-২ সেকশন, ৩ প্লাটুন বিজিবি, র‌্যাবের ২ টি টিম নিয়োজিত ছিলো।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App