×

সারাদেশ

সুনামগঞ্জের ২ উপজেলায় চলছে ভোটগ্রহণ

Icon

সুনামগঞ্জ, দিরাই ও শাল্লা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৮ মে ২০২৪, ১১:৩৭ এএম

সুনামগঞ্জের ২ উপজেলায় চলছে ভোটগ্রহণ

ছবি: ভোরের কাগজ

উপজেলা পরিষদের প্রথম ধাপের নির্বাচনে হাওরের জেলা সুনামগঞ্জের দিরাই ও শাল্লা উপজেলায় বুধবার ( ৮ মে) সকাল ৮টা থেকে কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে ভোটগ্রহণ চলছে। এরমধ্যে সকাল দশটায় শাল্লা উপজেলার সদর ইউনিয়নের চব্বিশা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে একজন ভোটার ভোট কেন্দ্রের গোপন কক্ষে না গিয়ে প্রকাশ্য ভোট দিতে চাইলে এতে বিভিন্ন প্রার্থীর এজেন্টদের মধ্যে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। এ উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে ভোট কেন্দ্রের বাইরেও। 

ওই ভোটকেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার সজীব হাওলাদার জানিয়েছেন, এ ঘটনায় কেন্দ্রটিতে ৩০ মিনিট ভোটগ্রহণ কার্যক্রম বন্ধ ছিল। তবে এ ঘটনায় কাউকে আটক করা হয়নি। খবর পেয়ে শাল্লা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিষ্ট্রেট মো. আলা উদ্দিনের নেতৃত্বে পুলিশ বিজিবির একটি স্টাইকিং ফোর্স ভোটকেন্দ্রে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে পুনঃরায় ভোট গ্রহণ কার্যক্রম শুরু করেন। জেলার দুর্গম হাওরাঞ্চল খ্যাত এ দুই উপজেলাতেই চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন। 

এদিকে বিভক্ত আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে এ দুই উপজেলায় বিএনপির বহিষ্কৃত দুই নেতার লড়াই হবে বলে মনে করছেন ভোটাররা। দলীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ ভোটারদের মতে দুই উপজেলাতেই আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন। এতে দলের ভোট ভাগাভাগি হবে। অন্যদিকে বিএনপির রাজনীতিবিদ হিসেবে পরিচিত প্রার্থী রয়েছেন প্রতি উপজেলায় একজন করে। তাই শেষ পর্যন্ত দলটির বহিষ্কৃত নেতাদের সঙ্গেই লড়াই করতে হবে আওয়ামী লীগে নেতাদের। আর আওয়ামী লীগের বিভক্তিকে কাজে লাগানোর চেষ্টাও রয়েছে বিএনপির নেতাদের। রয়েছে সম্প্রদায়িক ভোটের প্রভাবও। তবে বিএনপির লোকজন ভোটে না গেলে তাদের বহিষ্কৃত নেতারা তেমন সুবিধা করতে পারবেন না বলে জানা গেছে স্থানীয় সূত্রে।

দিরাই উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন পাঁচজন। তারা হলেন- দিরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ রায়, জেলা আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক আজাদুল ইসলাম রতন, উপজেলা যুবলীগের সভাপতি রঞ্জন কুমার রায়, জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এডভোকেট রিপা সিনহা, উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক (বহিষ্কৃত) মো. গোলাপ মিয়া।

প্রদীপ রায় গত নির্বাচনেও অংশ নিয়েছিলেন, সামান্য ভোটে পরাজিত হয়েছিলেন। তিনি স্থানীয় সংসদ সদস্য জয়া সেনগুপ্তার লোক। প্রদীপ ভোটারদের বোঝানোর চেষ্টা করছেন তিনি নির্বাচিত হলে এলাকার উন্নয়ন হবে বেশি। রঞ্জন রায়ও গত নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। গোলাপ মিয়া দুবারের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন। রিপা সিনহা বর্তমান মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান। সবাই নির্বাচনী মাঠে ব্যাপক প্রচার প্রচারণা চালিয়েছেন। সাধারণ ভোটাররা বলছেন, প্রদীপ রায় সংসদ সদস্যের ঘনিষ্ঠ এটা সবাই জানেন। এ জন্য সুনাম-বদনাম দুটিই রয়েছে তার। এখানে আওয়ামী লীগের অন্য যারা প্রার্থী হয়েছেন তারা ভোটের হিসাবে ভালো প্রভাব রাখবেন। তাই সহজে দলের কেউ পার পেতে পারবেন না।

এদিকে আওয়ামী লীগের দ্বিধা ভিবক্ততার এ সুযোগে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় উঠে এসেছেন বিএনপির সদ্য বহিষ্কৃত গোলাপ মিয়া। দলের নেতা–কর্মীরা তাকে বিজয়ী করতে নীরবে তাঁর পক্ষে নানাভাবে কাজ করেছেন। গোলাপ মিয়া বলেন, দলের নেতা-কর্মীরা আমার সঙ্গে আছেন। দিরাই উপজেলার লুটেরাদের ভোট দেবে না, যদি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোট হয় তাহলে আমি জয়ী হব। দিরাই উপজেলার  বাসিন্দা প্রীতম রায় বলেছেন, ভোট নিয়ে মানুষের আগ্রহ কম। তবুও আমরা চাই ভোট নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ হোক। দিরাই উপজেলায় মোট ভোটার ১ লাখ ৯৩ হাজার ৫২৫ জন। পুরুষ ৯৭ হাজার ৬৮৭ জন ও নারী ৯৫ হাজার ৮৩৮ জন। উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে ৭৪টি ভোটকেন্দ্র রয়েছে।

এদিকে শাল্লা উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন চারজন। এদের মধ্যে তিনজনই আওয়ামী লীগের। তারা হলেন- জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি ও শাল্লা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান অবনি মোহন দাস, যুবলীগের নেতা ও উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান দিপু রঞ্জন দাস, হেভিওয়েট প্রার্থী আওয়ামী লীগের সমর্থক এস এম শামীম। এর বাইরে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সদ্য বহিষ্কৃত সভাপতি গনেন্দ্র চন্দ্র সরকার।

শাল্লায়ও আওয়ামী লীগ বিভক্ত। এক পক্ষ অবনি মোহন দাসের সঙ্গে, অন্য পক্ষ দিপু রঞ্জন দাসের সঙ্গে রয়েছে। এছাড়াও গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের একটা প্রভাবও এখানে আছে। সেটি হলো- নির্বাচনে নৌকার  প্রার্থী পুলিশের আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের ছোটভাই চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মাহমুদের প্রকাশ্য বিরোধিতা করে স্বতন্ত্র প্রার্থী জয়া সেনগুপ্তার পক্ষে ছিলেন অবনি মোহন দাস।

অন্যদিকে দিপু রঞ্জন দাস ছিলেন নৌকার প্রার্থীর পক্ষে। এ নির্বাচনেও সেই বিভক্তি রয়েছে। তবে সংসদ সদস্য জয়া সেনগুপ্তা ও আওয়ামী লীগ নেতা চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মাহমুদ ভোটের বিষয়ে রয়েছেন নীরব। উপজেলা বিএনপির প্রবীণ নেতা গনেন্দ্র চন্দ্র দাসের প্রতি গোপনে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সমর্থন রয়েছে, প্রকাশ্যে মাঠে নেই কেউ। তিনি আওয়ামী লীগের এক পক্ষের সমর্থন পেতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

শাল্লা উপজেলার একজন গণমাধ্যমকর্মী বলেন, এবার তো দলীয় ভোট হচ্ছে না, তাই ভোটাররা দলের চেয়ে ব্যক্তিকেই প্রাধান্য দিচ্ছেন বেশি। প্রার্থীদের দুজন প্রবীণ আর দুজন নবীন। এবারের নির্বাচনে ভোটাররা সবকিছু বিবেচনা করে ভোট দেবেন। শাল্লা উপজেলায় মোট ভোটার সংখ্যা ৯১ হাজার ৩৬৮। পুরুষ ৪৫ হাজার ৯৫৬ জন এবং নারী ৪৫ হাজার ৪১২ জন। উপজেলার ৪ ইউনিয়নে ভোটকেন্দ্র রয়েছে ৩৭টি। শাল্লা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) জানিয়েছেন- সকাল ৮ টা থেকে ভোট গ্রহণ শুরু হয়েছে। একটি কেন্দ্রে সামান্য একটু বিশৃঙ্খলার খবর পাওয়া গেছে। সাথে সাথে সেখানে পুলিশের টহল দল গিয়েছে। এখন পর্যন্ত বড় ধরণের কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।

এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বেলা পৌনে এগারোটায় পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতি প্রাপ্ত জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আবু সাঈদ জানিয়েছেন,  দুই উপজেলার কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। তাছাড়া যে কোনো ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে এবং অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে দুই উপজেলা পর্যাপ্ত পরিমাণ পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী মোতায়েন রয়েছে। ভোটাররা স্বতঃস্ফূর্তভাবে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করছেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App