×

সারাদেশ

মজুরি বৈষম্যের শিকার আদিবাসী নারী কৃষি শ্রমিক

Icon

মধ্যনগর (সুনামগঞ্জ) থেকে

প্রকাশ: ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০২ পিএম

মজুরি বৈষম্যের শিকার আদিবাসী নারী কৃষি শ্রমিক

ছবি: ভোরের কাগজ

তীব্র তাপদাহ উপেক্ষা করে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত হাওরে ধান কাটার কাজ করে আদিবাসী নারী কৃষিশ্রমিক বিজুলা হাজং, বেনতী হাজং, কল্পনা হাজং,  সুরভী চিসাম, আরজিমা দাজেল। দুপুরে কখনো খায় আবার কখনো না খেয়ে কাজ করতে থাকে। সারা দিন প্রখর রোদ, বৃষ্টি উপেক্ষা করে মাঠে কাজ করে সুনামগঞ্জের মধ্যনগর উপজেলার বংশীকুন্ডা উত্তর ইউনিয়নের আদিবাসী নারী কৃষি শ্রমিকরা। আদিবাসী নারীরা ঐতিহ্যগত ভাবেই কৃষিকাজে পারদর্শী। পুরুষদের চেয়েও এসব নারী শ্রমিকরা কৃষিকাজে অনেকটা এগিয়ে রয়েছে। কিন্তু কাজ শেষে মজুরি প্রদানে বৈষম্য তাদের হতাশ করে। বুধবার বিকেলে ভোরের কাগজ প্রতিনিধিকে এমনটাই জানালেন ঘিলাগড়া, ইছামারী, লক্ষ্মীপুর গ্রামের আদিবাসী নারী কৃষি শ্রমিকরা।

এ নিয়ে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সারা দিন ক্ষেতে কাজ করলেও তারা পায় দিন শেষে ৪-৫ শত টাকা। যা পুরুষ শ্রমিকদের তুলনায় অনেক কম। অথচ একই কাজের জন্য পুরুষ কৃষি শ্রমিকেরা পাচ্ছেন ৭-৮ শত টাকা।

বুধবার বিকেলে উপজেলার বংশীকুন্ডা উত্তর ইউনিয়নের রূপনগর গ্রামের সামনে টাঙ্গুয়ার হাওরের ধান ক্ষেতে গিয়ে দেখা যায়, ২১ জন কৃষি শ্রমিক ধান কাটা ও বোঝা মাথায় করে কৃষকের খলায় (হাওরে ধান মাড়াই ও শুকানোর স্থান) পৌঁছে দেয়ার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। তাদের ১২ জন নারী শ্রমিক। গনগনে তাপদাহের মাঝেই বিরামহীন কর্মব্যস্ত এসব আদিবাসী নারী শ্রমিকের ছবি ধারণ করার অনুমতি চাইলে ভোরের কাগজকে শোনান তাদের কষ্টের কথা।

মজুরি বৈষম্য নিয়ে কথা হয় আদিবাসী নারী শ্রমিক বিজুলা হাজং, বেনতী হাজং, কল্পনা হাজং এর সঙ্গে তারা বলেন, বোরোধান মৌসুমে ধান রোপণ, জমির আগাছা পরিষ্কার এবং ধান কাটা, মাড়াইয়ের কাজ করি আমরা। কিন্তু আমরা আমাদের ন্যায্য মজুরি কখনোই পাই না। 

তারা আরো বলেন, ‘অভাবের তাড়নায় সংসারে সহযোগিতার জন্য বিভিন্ন মৌসুমে আমাদের মাঠে কাজ করতে হয়। বর্তমানে জিনিস পত্রের দাম অনেক বেড়েছে কিন্তু আমাদের মজুরি তেমন বাড়ছে না। খেতে সারাদিন কাজ করে আমরা পাই মাত্র ৪-৫শত টাকা অথচ একই কাজ আমাদের সঙ্গে যে পুরুষরা করেন তারা পাচ্ছেন ৭-৮শত টাকা। আমরা ন্যায্য মজুরি থেকে বঞ্চিত।

স্থানীয় কৃষক ও সমাজকর্মী শফিকুল ইসলাম সবুজ বলেন, এ অঞ্চলের আদিবাসী নারীরা পুরুষ শ্রমিকদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সমান তালে মাঠে কাজ করে। তবে তাদের মজুরি প্রদানে বৈষম্য রয়েছে এটা সত্যি। তিনি আরো জানান, এ বৈষম্য থেকে আমাদের বেরিয়ে আসা দরকার। আগে থেকেই এমনটা চলে আসছে তাই কেউ কিছু বলে না। 

উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও নারীনেত্রী সাজেদা আহমেদ বলেন, এ চিত্র শুধু আমাদের এলাকায় নয় পুরো দেশেরই চিত্র। মাঠ পর্যায়ে অসহায় দরিদ্র নারীরা যারা মাঠে-ঘাটে কাজ করেন, তাদের মজুরিটা কখনোই সঠিকভাবে দেয়া হয় না। এ ব্যবস্থা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে এবং নারীদের মর্যাদা দিতে সরকারি ভাবে হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

মধ্যনগর উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দ্বায়িত্ব) ফাহিমা খানম এ প্রতিনিধিকে বলেন, নারীদের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে তাদের কাজের প্রকৃত মূল্য দিতে হবে। কোনো ভাবেই তারা যেন প্রকৃত প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত না হয় সেজন্য সামাজিকভাবে সচেতন থাকতে হবে। নারী শ্রমিকের মজুরি বৈষম্য নিয়ে কোন অভিযোগ পেলে অবশ্যই তা খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App