×

সারাদেশ

ভল্ট খুলতে না পারায় ব্যাংক ম্যানেজারকে অপহরণ করে কেএনএফ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৪ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:৫৮ এএম

ভল্ট খুলতে না পারায় ব্যাংক ম্যানেজারকে অপহরণ করে কেএনএফ

ছবি: সংগৃহীত

বান্দরবানের রুমা উপজেলায় মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) রাতে সোনালী ব্যাংকে চালানো হামলার ঘটনাটি ছিল পূর্বপরিকল্পিত। হামলার শুরুর আগে বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) সন্ত্রাসীরা স্থানীয় বৈদ্যুতিক সাব-স্টেশনটি বন্ধ করে দেয়। পরে স্থানীয় চা দোকানে থাকা ব্যাংক ক্যাশিয়ারের কাছ থেকে ভল্টের চাবি ছিনিয়ে নেয়। কিন্তু তারাবি নামাজের জন্য মসজিদে থাকা ব্যাংক ম্যানেজারের কাছ থেকে চাবির অপর গোছাটি না পেয়ে তাকে তুলে নিয়ে যায় কেএনএফ সদস্যরা।

এ ঘটনার বিবরণ দিয়ে সোনালী ব্যাংক রুমা শাখার ক্যাশিয়ার উথোয়াইচিং মারমা বলেন, ‘ব্যাংকের ভল্টে মোট এক কোটি ৫৯ লাখ টাকা ছিল। কিন্তু ভল্ট খুলতে গেলে ক্যাশিয়ার ও ম্যানেজার দুজনের চাবির প্রয়োজন হয়। আমার মনে হয়, আমার কাছ থেকে নেওয়া চাবি দিয়ে ভল্ট খোলার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে ওরা। এরপর ম্যানেজারের কাছে চাবি না পেয়ে তাকে তুলে নিয়ে গেছে।’

তিনি বলেন, ‘ঘটনার সময় আমি অফিসের পেছনে একটি দোকানে চা খাচ্ছিলাম। ঈদ ও বিজু উপলক্ষে তখনো ব্যাংক খোলা ছিল। চা দোকানে থাকাকালীন হঠাৎ ৩ জন এসে আমাকে ঘিরে ফেলে। তাদের সবার হাতেই ছিল অস্ত্র। এসময় তারা আমার পকেট থেকে ব্যাংকের ভল্টের চাবি নিয়ে ছিনিয়ে নেয়। অন্যদিকে এসময় ম্যানেজার ছিলেন মসজিদে। ব্যাংকে হঠাৎ চিৎকার-চেঁচামেচির শব্দ শুনে ম্যানেজার পরিচয়ে তিনি এগিয়ে আসেন। তখন সন্ত্রাসীরা তাকে আটক করে নিয়ে যায়।’

ওই ঘটনার বর্ণনা দিয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ দিদারুল আলম বলেন, ‘সন্ত্রাসীরা উপজেলা কমপ্লেক্সের বাউন্ডারির ভেতর থাকা মসজিদে ঢুকে প্রথমে দরজা বন্ধ করে দেয়। তখন তারাবি নামাজের জন্য অনেক কর্মকর্তা সেখানে ছিলেন। শুরুতেই নামাজি সবাইকে বন্দি করে প্রচণ্ড মারধর করে সন্ত্রাসীরা। সঙ্গে থাকা টাকা ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়। পরে তারা অস্ত্র হাতে ম্যানেজারকে জিম্মি করে ব্যাংকে নিয়ে যায়।’

তবে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) জানিয়েছে, কেএনএফ সন্ত্রাসীরা ব্যাংকের ভল্ট খুলতে পারেনি। বুধবার (৩ এপ্রিল) দুপুরে ব্যাংকের ভল্ট খুলে সব টাকা গুনে দেখা যায়, মঙ্গলবার রাখা ১ কোটি ৫৯ লাখ ৪৬ হাজার টাকার পুরোটা রয়েছে।

সিআইডি চট্টগ্রাম অঞ্চলের বিশেষ পুলিশ সুপার শাহনেওয়াজ খালেদ বলেন, ‘রুমায় সোনালী ব্যাংকের শাখা থেকে কোনো টাকা লুট হয়নি।’

রুমা সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সৈ বং মারমা বলেন, ‘ব্যাংক কর্মীরা যখন নামাজ পড়ছিলেন, ঠিক তখনই হামলার ঘটনা ঘটে। সশস্ত্র ব্যক্তিরা ব্যাংকে অবস্থান নেয়ার সময় রাস্তা ব্লক করে রাখে। তারা প্রায় ১ ঘণ্টা সেখানে অবস্থান করেন। এ সময় রুমায় কোনো বিদ্যুৎ ছিল না। সশস্ত্ররা ডাকাতরা চলে যাওয়ার ১৫ মিনিট পরে বিদ্যুৎ আসে।’

বান্দরবানের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম) আবদুল করিম বলেন, ‘গতকাল রাত ৯টার দিকে কেএনএফের প্রায় ১০০ অস্ত্রধারী সদস্য হামলায় অংশ নিয়েছে। হামলাকারী অনেকের গায়ে কেএনএফের লোগো সংবলিত পোশাক ছিল। হামলার শুরুতে তারা উপজেলা পরিষদের দায়িত্বে থাকা পুলিশ ও আনসার সদস্যদের মারধর করে অস্ত্র ও মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়।’

এদিকে অপহরণের প্রায় ২২ ঘণ্টা পরও ব্যাংক ম্যানেজার মো. নিজাম উদ্দিনকে উদ্ধার করা যায় নি। তার বাড়ি কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলায়।

ওই ঘটনার পরদিন বুধবার দুপুরে বান্দরবানের থানচিতে সোনালী ব্যাংক ও কৃষি ব্যাংকের দুটি শাখায় হামলা হয়। এ দুটি ব্যাংকের শাখা থেকে অস্ত্রধারীরা সাড়ে ১৭ লাখ টাকা নিয়ে গেছেন বলে জানান দুটির শাখার কর্মকর্তারা।

বান্দরবানে নতুন সশস্ত্র সংগঠন কেএনএফ ২০২২ সালের মাঝামাঝি থেকে তৎপরতা শুরু করে। পাহাড়ে তাদের আস্তানায় সমতলের নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’ সদস্যরা সশস্ত্র প্রশিক্ষণ নিয়েছিল বলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আগেই গণমাধ্যমকে জানিয়েছিল।

গত বছর সেই আস্তানায় অভিযান চালিয়ে জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া ও কেএনএফের বেশ কয়েকজন সদস্যকে গ্রেফতার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

সশস্ত্র কেএনএফের সদস্যদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার জন্য গত বছরের মে মাসে বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি গঠন করা হয়। এরপর কয়েক দফা কেএনএফ নেতাদের সঙ্গে অনলাইন বৈঠকের পর সশরীর বৈঠকের আয়োজন করা হয়।

এরপর গত ৫ মার্চ কেএনএফের সঙ্গে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির দ্বিতীয় দফায় মুখোমুখি সংলাপ হয়। রুমা উপজেলার বেথেলপাড়া কমিউনিটি সেন্টারে এ সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে আর সন্ত্রাসী তৎপরতা না চালানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল কেএনএফ।

তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, ওই বৈঠকের পরেও রুমা উপজেলা সদরসংলগ্ন বম জনগোষ্ঠীর বেথেলপাড়া, মুনলাইপাড়া, এডেনপাড়াসহ বিভিন্ন পাড়ায় আশ্রয় নিয়েছিল কেএনএফ সদস্যরা।

চলতি (এপ্রিল) মাসের মাঝামাঝি আবারো বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু দ্বিতীয় সেই সংলাপের এক মাসের মাথায় মঙ্গলবার রুমা উপজেলা সদরে সোনালী ব্যাংকে হামলার ঘটনা ঘটে। হামলার স্থান রুমা উপজেলার বেথেলপাড়া থেকে পায়ে হাঁটা দূরত্বে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App