×

সারাদেশ

বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি ফেরানোর উদ্যোগে যা বললেন আবরারের মা!

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০২ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:৪৭ এএম

বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি ফেরানোর উদ্যোগে যা বললেন আবরারের মা!

ছবিঃ সংগৃহীত

২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর বুয়েটের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ একদল ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের হাতে নির্মমভাবে খুন হন। ওই ঘটনার পর ফুঁসে উঠে বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবির মুখে ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করে বুয়েট প্রশাসন। কিন্তু ঘটনার ৪ বছর পর আবার ছাত্ররাজনীতি চালুর দাবিতে আন্দোলনে ছাত্রলীগ। এনিয়ে ছাত্রলীগের এক নেতা হাইকোর্টে রিট করলে ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতিতে কোনো বাধা নেই মর্মে নির্দেশনা দেয় আদালত। 

তবে ওই নির্দেশনায় সন্তুষ্ট নন আবরার ফাহাদের পরিবার। আবরার ফাহাদের বাবা বরকত উল্লাহ, মা রোকেয়া খাতুন এবং বুয়েটের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের ছোট ভাই আবরার ফাইয়াজ চাইছেন না বুয়েট ক্যাম্পাসে আবারো ছাত্ররাজনীতি চালু হোক।

এ বিষয়ে আবরার ফাহাদের মা রোকেয়া খাতুন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘শুনেছি বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি চালুর বিষয়ে হাইকোর্ট নির্দেশনা দিয়েছেন। এই নির্দেশনা আমার কাছে সঠিক মনে হয়নি।’ 

তিনি বলেন, ‘আমি একজন মা, আমি আমার সন্তানকে হারিয়েছি, সন্তান হারানোর কি কষ্ট তা আমি বুঝি, অতএব আমি এটা কখনই চাইব না। শুধু বুয়েট না, বাংলাদেশের কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রাজনীতি থাকুক, বাংলাদেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই কোনো রাজনীতি আমি চাই না। আমি মা হিসেবে শুধু এটাই বলতে পারি। শুধু বাবা টাকা ইনকাম করে আর মা তার সন্তানটাকে অনেক কষ্ট, পরিশ্রম করে তাকে ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বুয়েট হোক, ঢাকা ইউনিভার্সিটি হোক, আর বাংলাদেশের যেকোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই হোক সে তার যোগ্যতানুসারে সেখানে ভর্তি হয়। অতএব আমি একজন মা হিসেবে কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রাজনীতি চাই না।’

তিনি আরো বলেন, শুধু আমার ছেলে না, আমি চাইব না কোনো মা আমার মত আর কষ্ট পাক। এই রমজান মাসে আমার ছেলেটা কবরে শুয়ে আছে, শুধু আমিই জানি। কয়েকদিন আগেও বুয়েটের দুজন ছাত্র মারা গেছে সেই ঘটনাও দুঃখজনক, তাদের মা-বাবাও কষ্ট পাচ্ছে, কিন্তু তাদের কষ্ট আর আমার কষ্টের অনেক পার্থক্য আছে। কারণ আমার ছেলেটাকে তিলে তিলে মারা হইছে, আমি চাই না কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোনো রাজনীতি প্রবেশ করুক। আমি কোর্টের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে বলতে চাই, কোর্টের যে জজ সাহেব রায়-দেন তার যদি সন্তান থেকে থাকে তবে তিনি এই রায় দিতে পারেন না। হয়ত তার কোনো সন্তান নেই তাই তিনি এই রায় দিয়েছেন। 

তিনি বলেন, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রাজনীতির কীইবা দরকার? ক্লাস টেন পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোনো রাজনীতি নেই, ইন্টারমিডিয়েট পর্যন্ত নেই। সেখানে কী ছেলে মেয়ে মানুষ হচ্ছে না? আর অনার্স-মাস্টার্স খুব বেশি হলে চার থেকে পাঁচ বছর, এই চার পাঁচ বছরে যদি ছেলে মেয়েরা সুষ্ঠুভাবে লেখাপড়া করে তার কর্মজীবনে ফিরে গিয়ে সে যত ইচ্ছা রাজনীতি করতে পারে, দেশের জন্য রাজনীতি করতে পারে, তার পরিবারের জন্য করতে পারে, সব যায়গায় করতে পারে। সেখানে কিন্তু কোনো বাধা নেই। কিন্তু কেন সেখানে রাজনীতি না করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রাজনীতি করতে হবে। তবে অনেক বড় বড় বিজ্ঞরা আছেন তারা কি বোঝেন, আল্লাহ পাক ভালো জানেন, এটা আমার জানা নাই। আমি চাই না মা হিসেবে কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রাজনীতি প্রবেশ করুক, আমি চাই না। শুধু বুয়েট না কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই না। শুধু আমিই না, আমার মত কোনো মা চাইবে না শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রাজনীতি থাকুক। কোর্ট যে রায় দিয়েছেন সেই জজ সাহেবই জানেন সেটা কেমন রায়, তবে যিনি যে রায় দিয়েছেন তিনি একজন বাবা, মা হলে তিনি কখনো এই রায় দিতে পারেন না।

একই দাবি আবরার ফাহাদের বাবা বরকত উল্লাহ ও ছোট ভাই আবরার ফাইয়াজেরও। বুয়েটে ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে যন্ত্রকৌশল বিভাগে ভর্তি হয়েছেন আবরার ফাহাদের ছোট ভাই আবরার ফাইয়াজ। ঈদের ছুটিতে কুষ্টিয়া শহরে নিজেদের বাড়িতে অবস্থান করছেন তিনি।

আবরার ফাহাদ ছিলেন ফাইয়াজের বড় ভাই। তাদের বাড়ি কুষ্টিয়া শহরে। বাবা বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। আবরার ফাহাদ বুয়েটের তড়িৎ ও ইলেকট্রনিকস প্রকৌশল বিভাগের ছাত্র ছিলেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App