×

সারাদেশ

ঝালকাঠিতে আড়াই মাসে ১২ ট্রান্সফর্মার চুরি

Icon

মো. নাঈম হাসান ঈমন, ঝালকাঠি শহর প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৯ মার্চ ২০২৪, ১২:৫১ পিএম

ঝালকাঠিতে আড়াই মাসে ১২ ট্রান্সফর্মার চুরি

ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলায় পল্লী বিদ্যুতের ট্রান্সফর্মার চুরির হিড়িক পড়েছে। উপজেলায় চলতি মাসের গত দুই সপ্তাহে ৭টিসহ গত আড়াই মাসে ১২টি ট্রান্সফর্মার চুরি হয়েছে। ট্রান্সফরমারগুলো পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির (পবিস) হলেও চুরি হওয়ার পর ভুগতে হয় কৃষকদেরই। নতুন ট্রান্সফরমার কেনার টাকা তাদেরই দিতে হয়।

রাজাপুর পল্লী বিদ্যুৎ অফিস সূত্র জানায়, গত জানুয়ারি মাসে দুটি, ফেব্রুয়ারিতে তিনটি ও চলতি মার্চ মাসে এ পর্যন্ত ছয়টি ট্রান্সফরমার চুরি হয়েছে। চুরি হওয়ায় বর্তমানে ৪টি স্থানের ট্রান্সফর্মার না থাকায় ২ শতাধিক পরিবার অন্ধকারে রয়েছেন। চুরি হওয়া স্থানে নতুন করে ট্রান্সফর্মার স্থাপন করতে গ্রাহকদের টাকায় নতুন ট্রান্সফর্মার কিনতে হচ্ছে।

চলতি মাসে মধ্য চাড়াখালী গ্রামে পল্লী বিদ্যুতের ৩৭ কিলোভোল্ট (কেভি) ধারণক্ষমতার বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার চুরি হয়েছে। গালুয়া ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের খায়রে হাট নিমহাওলা এলাকার ১০ কেবি, ছোট কৈবর্তখালী গ্রামের ৫ কেবি ট্রান্সফরমার চুরি হয়েছে। এ ছাড়া বদনিকাঠি গ্রামের খান বাড়ি, সত্যনগর তুলাতলা, বড়ইয়া পালট, চুনপরি, ইন্দ্রপাশা ও সাতুরিয়া ইউনিয়নে ট্রান্সফরমার চুরির খবর পাওয়া গেছে।

উপজেলার মধ্য চাড়াখালী গ্রামের আল আমিন বলেন, কয়েকদিন আগে মধ্য চাড়াখালী ১৫ কেবির ট্রান্সফর্মার চুরি হয়েছে। এতে অন্তত ৩৫ পরিবার বিপাকে পড়েছে।

বদনিকাঠি গ্রামের মুন্না বলেন, বদনিকাঠি খান বাড়ির ট্রান্সফরমার চুরি হয়ে অনেক পরিবার অন্ধকারে রয়েছে।

আরো পড়ুন: প্রাকৃতিক সাজে সেজেছে রাঙ্গাবালীর ‘হেয়ার চর’

সত্যনগর তুলাতলা এলাকার আখি, লিজা বলেন, সত্যনগর তুলাতলা এলাকার সাড়ে ৩৭ কেবির ট্রান্সফর্মার চুরি হয়ে অন্তত ৭৫ পরিবার কয়েকদিন ধরে অন্ধকারে রয়েছে। চরম ভোগান্তিতে থাকলেও নতুন করে ট্রান্সফর্মার স্থাপন করা হচ্ছে না। এখন গ্রাহকদের টাকা দিয়ে নতুন করে ট্রান্সফর্মার কিনতে হবে বলে পল্লী বিদ্যুতের লোকজন জানিয়েছে।

বাগড়ি বাঁশতলা গ্রামের রিংকু সিকদার, নাদিম, আলিম ও আলম বলেন, বাগরি বাঁশতলা গ্রামের ট্রান্সফর্মার চুরি হয়ে যাওয়ায়; ৪৫ জন গ্রাহককে ৫০ হাজার টাকা দিয়ে নতুন করে ট্রান্সফর্মার কিনে স্থাপন করতে হয়েছে। এতে করে প্রায় এক সপ্তাহ অন্ধকারে থাকতে হয়েছে সবাইকে। লাইন চালু থাকাকালীন সাধারণ মানুষের পক্ষে ট্রান্সফর্মার চুরি করা সম্ভব নয়, এর সঙ্গে পল্লী বিদ্যুতের কর্মচারিরা জড়িত রয়েছে বলে অভিযোগ করেন গ্রাহকরা।

গ্রাহকরা আরো অভিযোগ করেন, মাঝে মাঝে বিদ্যুতের লোডশেডিং দেয়া হয়, ওই সময় ট্রান্সফর্মার চুরি হয়। পল্লী ঠিকাদারের কর্মচারি, পল্লী বিদ্যুতের কর্মকর্তা-কর্মচারিদের যোগসাজসে একের পর এক ট্রান্সফর্মার চুরি হচ্ছে। যা কোনো সাধারণ মানুষের পক্ষে চুরি করা সম্ভব নয়। আর ট্রান্সফর্মার চুরি হলে পল্লী বিদ্যুতের অফিস থেকে গ্রাহকদের টাকা দিয়ে নতুন করে ট্রান্সফর্মার স্থাপন করতে হয়। নতুন ট্রান্সফর্মার বিক্রির একটি কৌশল হলো ট্রান্সফর্মার চুরি। এছাড়া উপজেলার বড়ইয়া পালট, চুনপরি ও সাতুরিয়া ইউনিয়নে ট্রান্সফর্মার চুরির খবর পাওয়া গেছে।

গ্রাহকরা জানান, কিছুদিন পর পর একের পর এক ট্রান্সফর্মার চুরির ঘটনা ঘটেই চলছে। কিন্তু প্রতিরোধে বা চুরি ঠেকাতে পল্লী বিদ্যুতের কোনো মাথাব্যাথা নেই। চোরের কাছে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি অসহায় হয়ে পড়েছে। ফলে অনেক দিন যাবৎ দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। ফ্রিজের মাছ, গোশতসহ বিভিন্ন পণ্যের ক্ষতি হয় চরমভাবে। এছাড়াও ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়ায় চরম বিঘ্ন ঘটে।

আরো পড়ুন: মেঘনায় তিনটি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানকে ১ লাখ ১০ হাজার টাকা জরিমানা

রাজাপুর পল্লী বিদ্যুৎ অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ২টি, ফেব্রুয়ারি মাসে ৩টি ও চলতি মার্চ মাসে এ পর্যন্ত ৭টি ট্রান্সফর্মার চুরি হয়েছে। সাড়ে ৩৭ কেবি ট্রান্সফর্মারের দাম প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার, ২৫ কেবি ট্রান্সফর্মারের দাম প্রায় ১ লাখ টাকা, ১৫ কেবি ট্রান্সফর্মারের দাম প্রায় ৭৯ হাজার টাকা, ১০ কেবি ট্রান্সফর্মারের দাম প্রায় ৬৫ হাজার টাকা ও ৫ কেবি ট্রান্সফর্মারের দাম প্রায় ৪০ হাজার টাকা। 

পল্লী বিদ্যুতের কর্মকর্তা-কর্মচারি জড়িতের অভিযোগ অস্বীকার করে রাজাপুর পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের এজিএম (ও অ্যান্ড এম) মধুসূদন রায় বলেন, বর্তমানে ৪টি স্থানের ট্রান্সফর্মার চুরি হওয়ার পর নতুন করে স্থাপন করা হয়নি। এতে অন্তত দেড় থেকে ২ শ’ গ্রাহক ভোগান্তিতে পড়েছেন। চুরি হওয়া স্থানে প্রথমবার গ্রাহকদের অর্ধেক ও দ্বিতীয়বার সম্পূর্ণ টাকা গ্রাহকদের দিতে হয়, এটা কষ্টের বিষয়। চুরি ঠেকাতে গ্রাহকদের সচেতনতার পাশাপাশি পাহারার ব্যবস্থা করতে হবে। এছাড়াও চুরি ঠেকাতে মাইকিং করা হচ্ছে। এ বিষয় নিয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতাও জরুরি। পুলিশ প্রশাসনেরও সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে রাজাপুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্ত (ওসি) মু. আতাউর রহমান বলেন, পল্লী বিদ্যুতের পক্ষ থেকে ট্রান্সফর্মার চুরির বিষয়ে অভিযোগ দিয়েছে। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। ট্রান্সফর্মার চুরি ঠেকাতে পল্লী বিদ্যুতের কর্মকর্তাদের নিয়ে সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে চোরের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App