খুলনার কয়রায় আসছেন জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) শুভেচ্ছাদূত হিসেবে সুইডেনের রাজকন্যা প্রিন্সেস ক্রাউন ভিক্টোরিয়া। মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) রাজকন্যার আগমনকে ঘিরে খুলনা জেলা ও উপজেলা  প্রশাসনের ব্যাপক প্রস্তুতি চলছে।

ইতোমধ্যেই এলাকাজুড়ে নিরাপত্তার জোরদারের পাশাপাশি রাস্তাঘাট পরিষ্কার-পরিছন্ন করা হয়েছে। রাজকন্যার পরিদর্শনের জায়গাগুলো পরিপাটিভাবে গোছানোর কাজও চলছে। বিভিন্ন বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার সমন্বয়ে নিরাপত্তার চাদরে মোড়ানো পুরো কয়রা উপজেলা। 

এদিকে প্রিন্সেস ক্রাউন ভিক্টোরিয়ার আগমনের খবরে নিজেদের চাওয়া-পাওয়ার কথা জানাবেন এমন আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন উপজেলার মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের নয়ানি গ্রামের সুফিয়া খাতুনসহ (৪০) ওই গ্রামের কয়েকজন নারী। 

তারা জেনেছেন, জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) শুভেচ্ছাদূত হিসেবে সুইডিশ রাজকন্যা ভিক্টোরিয়া আসবেন তাদের এলাকায়। খাবার পানির উৎস রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিংয়ের উপকারভোগীদের সঙ্গে কথা বলবেন তিনি। এ জন্য রানির সঙ্গে কথা বলবেন বলে আগে থেকেই প্রস্তুতি নিচ্ছেন সুফিয়াসহ ওই এলাকার একাধিক নারীরা। 

প্রায় ৪১ হাজার জনসংখ্যার এ ইউনিয়নের ১২টি গ্রামের মানুষের সুপেয় পানির সংকট দীর্ঘদিনের। বছরের তিন মাস বৃষ্টির পানিতে চললেও বাকি ৯ মাস অনেক কষ্ট করতে হয়। খাবার পানি নিরসনে ইউনিয়নের ভাগবা, মহেশ্বরীপুর, সাতহালিয়া ও নয়ানি গ্রামে চারটি রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টার স্থাপন করা হয়েছে। এর মাধ্যমে ১ হাজার ৬০০ উপকারভোগী কার্ড সিস্টেমের মাধ্যমে ৬ মাস খাবার পানি সংগ্রহ করতে পারেন। বাকি ছয় মাস এসব উপকারভোগীকেও ড্রাম প্রতি ৬০ টাকা দিয়ে খাবার পানি কিনতে হয়। তবে ঘর-গৃহস্থালিসহ অন্যান্য কাজ নদীর নোনা পানি দিয়েই সারতে হয়। এতে সারা বছর তাদের স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগতে হয়।

এদিকে ১৮ থেকে ২১ মার্চ ইউএনডিপির শুভেচ্ছাদূত হিসেবে বাংলাদেশ সফর করবেন সুইডিশ রাজকন্যা ভিক্টোরিয়া। তার সফরের অংশ হিসেবে ১৯ মার্চ কয়রা সফরের কথা রয়েছে। তিনি উপজেলার মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের নয়ানি যজ্ঞ মন্দিরের মাঠে রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিংয়ের উপকারভোগীদের সঙ্গে কথা বলবেন। এ উপলক্ষে চলছে সাজ সাজ রব।

মহারাজপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বলেন, সুইডেনের প্রিন্সেস ক্রাউন ভিক্টোরিয়ার আমাদের পরিষদে আসবে এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত গর্বের বিষয়। ইউনিয়ন পরিষদ চত্বর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার পাশাপাশি সাজানো হচ্ছে।

খুলনার জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াছির আরেফীন বলেন, জাতিসংঘ শুভেচ্ছা দূত হিসেবে আগামী ১৮-২১ মার্চ সুইডেনের ক্রাউন প্রিন্সেস ভিক্টোরিয়া বাংলাদেশে অবস্থান করবেন। এর মধ্যে ১৯ মার্চ তিনি বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণে সুন্দরবন সংলগ্ন উপকূলীয় অঞ্চল খুলনার কয়রা উপজেলা পরিদর্শনে করবেন। এ সময় উপকূলীয় অঞ্চলে জলবায়ু পরিস্থিতি মোকাবেলায় স্থানীয় লোকজনের জীবনমান নিজ চোখে দেখা, লিঙ্গ সমতা, মহারাজপুর ও মহেশ্বরীপুর ইউনিয়ন পরিষদ ডিজিটালাইজেশনে রূপান্তর দেখাসহ মদিনাবাদ স্মার্ট পোস্ট সেন্টারের উদ্বোধন করবেন তিনি। পরে ওই এলাকার ব্যবসা খাতের ভূমিকার ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে এসডিজি বাস্তবায়নে অগ্রগতি এবং চলমান কয়রার দুর্যোগ কবলিত চ্যালেঞ্জগুলো পরিদর্শন করবেন প্রিন্সেস ভিক্টোরিয়া।

কয়রা থানার ওসি মো. মিজানুর রহমান বলেন, রাষ্ট্রীয় অতিথির কয়রায় আগমনে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশনা ও পরামর্শে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি, র‍্যাব, বিজিবি, সেনাবাহিনী, নৌ বাহিনী, বিমান বাহিনী, কোস্টগার্ড, গোয়েন্দা নজরদারিসহ সব নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। 

কয়রা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত)  বিএম তারিক-উজ-জামান বলেন, ঊর্ধ্বতন প্রশাসনের নির্দেশনায় রাষ্ট্রীয় অতিথি বরণে সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেয়া  হয়েছে। নিরাপত্তার বিষয়টি বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।