×

সারাদেশ

১৭ লাখ টাকার জন্য প্রায় ১৩ কোটির টাকার ধান ঝুঁকিতে

Icon

সাপাহার (নওগাঁ) থেকে

প্রকাশ: ০৯ মার্চ ২০২৪, ০২:০২ পিএম

১৭ লাখ টাকার জন্য প্রায় ১৩ কোটির টাকার ধান ঝুঁকিতে

নওগাঁ জেলার সাপাহার উপজেলায় প্রায় ১৭ লাখ টাকার মাছ ভোগের জন্য ‘নওগাঁ জেলার সাপাহার উপজেলাধীন জবই বিল মৎস্য উন্নয়ন প্রকল্প’ কর্তৃপক্ষ প্রায় ১৩ কোটির টাক ধান ঝুঁকিতে ফেলে দিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। 

দোহারা-তারাচাঁদ খাড়ির পানিতে ধানচাষী ময়নাকুড়ি গ্রামের মো. আব্দুস সামাদ (৪২) বলেন, ঠা ঠা বরেন্দ্র ভূমি নামে পরিচিত নওগাঁ জেলার সাপাহার উপজেলা। এখানে চৈত্র-বৈশাখে ভূ-গর্ভস্থ ও উপরিস্থ পানি তীব্র সংকট হয়। ১০০/১৫০ মণ মাছ মারার জন্য গত বছর বিলের পানি নামিয়ে দিয়েছিলেন ‘নওগাঁ জেলার সাপাহার উপজেলাধীন জবই বিল মৎস্য উন্নয়ন প্রকল্প’ কর্তৃপক্ষ। এর ফলে ধান বাঁচাতে বিল এলাকার মানুষের হাজার হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এরপরও ধানের ফলন রক্ষা করা যায়নি। যেখানে ২৫/৩৫ মণ বিঘা ধান হয়। সেখানে ১৫/২০ মণ ধান হয়। এবার আসন্ন খরা সামনে আর তীব্র পানি সংকট রয়েছে জেনেও কয়েকটা মাছের জন্য তারা হাজার হাজার লোকের ক্ষতি করলেন। তাদের সঠিক ব্যবস্থাপনায় আনা উচিত।

বিল এলাকার শিতলডাঙ্গা গ্রামের মো. শহিদুল ইসলাম(৩৪) বলেন, তারাচাঁদ খাড়িরপানি শুকিয়ে গেছে। বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের দেয়া দোহারাখাড়িতে স্থাপিত সোলার এলএলপি ও গভীর নলকূপের মাধ্যমে এলাকার বোরো ধানে পানি সেচ চলছে। কিন্তু খরা শুরু হলে গভীর নলকূপে পানি অর্ধেকও উঠে না। অন্যদিকে দোহারা খাড়িরপানি শুকিয়ে গেলে আত্মহত্যা করা ছাড়া কিছুই করার থাকবে না। এই পানি সংকট দূরে সরকারের তীক্ষ্ণè দৃষ্টি দরকার। একই সাথে কয়েকটা মাছ খাওয়ার জন্য যারা জবই বিলের পানি নামিয়ে দিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া উচিত।

বিল এলাকার বাখরপুর গ্রামের মখলেছুর রহমান(৪০) বলেন,  উপজেলার জবই বিল, মাহিল, কালিন্দা ও দোহারা-তারাচাঁদ খাড়ি একই সাথে লেগে রয়েছে। জবই বিলটি ৪০৩ হেক্টর এলাকা জুড়ে রয়েছে। জবই বিলের মাছ মারার জন্য পানি ছেড়ে দিলে মাহিল, কালিন্দা ও দোহারা-তারাচাঁদ খাড়ি পর্যায়ক্রমে শুঁকিয়ে যায়। ‘নওগাঁ জেলার সাপাহার উপজেলাধীন জবই বিল মৎস্য উন্নয়ন প্রকল্প’ কর্তৃপক্ষ মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধির সাথে মৎস্য সংরক্ষণ আইন বাস্তবায়ন ও জীববৈচিত্র সংরক্ষণ করার পরিবর্তে মৎস্য ও জীববৈচিত্র ধ্বংস করার মূল দায়িত্ব নিয়েছে বলে মনে হয় তাদের আচরণে। বিলে পানি না থাকলে মৎস্য ও জীববৈচিত্র সংরক্ষণ হয় কীভাবে! পানি নামিয়ে মাছ খাওয়া হোতাদের আইনের আওতায় আনা খুবই জরুরি।

বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ)এর সাপাহার শাখার সহকারী প্রকৌশলী তরিকুল ইসলাম জানান, জবই বিল থেকে গোপালপুর পর্যন্ত ৩৪ টি সোলার এলএলপি দিয়ে ৩৯১০ বিঘা বিল এলাকার জমি চাষবাস হয়। এর বাইরেও কিছু জমি রয়েছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোসা: শাপলা খাতুন বলেন, এবার উপজেলাজুড়ে ৫৮৮০ হেক্টর বোরো ধানে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ফলন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে ৬.৩ মেট্রিক টন। অর্থাৎ প্রতি বিঘাতে ২১ মণ। 

উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. রওশনুল হক কাওছার বলেন, বর্তমানে বাজারে ধানের মূল্য ১২৫০ থেকে ১৩০০ টাকা মণ। তবে গত আমন ধান সরকার ক্রয় করেছে ১২৮০ টাকা মণ।

মৎস্য কর্মকর্তা রোজিনা পারভিন জানান, জবই বিল প্রকল্প মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। এখন এটি খাস কালেকশনে রয়েছে। এখান থেকে গত বছর সরকার আয় করেছে ১৭ লাখ টাকা। ৭৯৯ জন মৎস্যজীবীর নিকট থেকে এই আয় হয়েছে। তবে তিনি এও দাবি করেন যে, গত বছর ৫২৭ মেট্রিক টন মাছ আহরণ করা হয়েছে।  এই মাছের আনুমানিক দাম প্রায় ১৫ কোটি টাকা।  এই টাকায় ৭৯৯ জন মৎস্যজীবী উপকৃত হয়।

প্রাপ্ত তথ্য হিসাব করে পাওয়া যায়, সরকারি গত বারের ধানের দাম দর ধরে ৫০০০ বিঘা জমিতে বিঘা প্রতি ২১ মণ ধরলে ধানের দাম হয় প্রায় সাড়ে ১৩ কোটি টাকা।

সাপাহার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো.মাসুদ হোসেন বলেন, জবাই বিলের পানি উন্নয়ন নিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডেও সহযোগিতার জন্য অনুরোধ করা হবে। এছাড়া বিলের পানি কেউ নামালে অভিযোগের ভিত্তিতে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App