×

সারাদেশ

বিশ্ব নারী দিবস

খুলনা সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি শম্পার সাফল্যগাঁথা কর্মময় জীবন

Icon

খুলনা ব্যুরো

প্রকাশ: ০৮ মার্চ ২০২৪, ০৩:৩৮ পিএম

খুলনা সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি শম্পার সাফল্যগাঁথা কর্মময় জীবন

পুরুষতান্ত্রিক সমাজের নানা প্রতিবন্ধকতা দূর করে উন্নত দেশ গড়ার প্রত্যয়ে এগিয়ে চলছেন নারী পুলিশ সদস্যরা। ১৯৭৪ সালে মাত্র ১৪ জন কনস্টেবল দিয়ে পুলিশ বাহিনীতে শুরু হয় নারীর পথচলা। এখন পুলিশ বাহিনীতে নারীর সংখ্যা ১৩ হাজার ৩২৯ জন। বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে কনস্টেবল থেকে অতিরিক্ত আইজিপি পর্যন্ত নানা পর্যায়ে সফলতার সঙ্গে তারা দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। 

সিআইডি খুলনা মেট্রো এন্ড জেলার অতিরিক্ত ডিআইজি পদে কর্মরত শম্পা ইয়াসমীন। গেল বছর ১০ অক্টোবর সিআইডি খুলনা মেট্রো এন্ড জেলার প্রথম নারী বিশেষ পুলিশ সুপার শম্পা ইয়াসমীন যোগদান করেন। যোগদানের পর থেকে তিনি তার কর্মক্ষেত্রে সাফল্যের ধারাবাহিকতায় ৬ নভেম্বর অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদ্দোনতি লাভ করেন। তিনি খুলনা সিআইডিতে যোগদানের পর থেকে বিভিন্ন আলোচিত ও চাঞ্চল্যকর মামলার রহস্যের উদঘাটন, মামলা তদন্তের অগ্রগতি, দীর্ঘদিনের মুলতবি মামলা নিস্পত্তিসহ অন্যান্য মামলার তদন্ত কার্যক্রমে গতিশীলতা বৃদ্ধি পেয়েছে।

দেশব্যাপী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও মিডিয়ায় বহুল আলোচিত কেএমপির দৌলতপুর থানার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন/২০০০(সংশোধনী/২০০৩) বাদীর নারাজীর আবেদনের প্রেক্ষিতে বিজ্ঞ আদালত সিআইডি খুলনা মেট্রো এন্ড জেলাকে তদন্তের নিদের্শ প্রদান করলে শম্পা ইয়াসমীন এর দিকনিদের্শনা ও প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে তদন্ত কর্মকর্তা ইন্সপেক্টর মো. রবিউল ইসলাম মামলাটি তদন্ত কার্যক্রম শুরু করেন। মামলাটি তদন্তকালে শম্পা ইয়াসমীন তদন্ত কর্মকর্তাসহ সিআইডির বিশেষ টিম নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং বাদীসহ স্থানীয় জনসাধারণের সঙ্গে মামলার ঘটনার বিষয়ে কথা বলেন। পরবর্তীতে মামলাটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে মামলার ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃত ৬ জন আসামীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমানিত না হওয়ায় তাদেরকে মামলা থেকে অব্যহতি প্রদানের জন্য এবং মিথ্যা মামলা করার কারণে বাদী আদুরী আক্তার (২২) ও ভিকটিম রহিমা বেগম (৫২) এবং বাদীর বোন মরিয়াম আক্তার ও মরিয়াম মান্নান (২৪) দের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য বিজ্ঞ আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন।

আরো পড়ুন: গোমস্তাপুরে আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালিত

আলোচিত ইতালী প্রবাসীর স্ত্রী অপহরণের ঘটনায় কেএমপির সোনাডাঙ্গা থানার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ (সংশোধনী/২০০৩) বাদীর আবেদনের প্রেক্ষিতে ৪ মাস পর খুলনা সিআইডিকে তদন্তের দায়িত্ব প্রদান করা হলে দায়িত্ব পাওয়ার মাত্র ৪৮ ঘন্টার মধ্যে সিআইডি খুলনার অতিরিক্ত ডিআইজি শম্পা ইয়াসমীনের দিকনিদের্শনা ও প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ইন্সপেক্টর নজরুল ইসলাম চলতি বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি মামলার প্রধান আসামি মো. রুবেল হাওলাদার (৩৩) কে গোপালগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার পূর্বক বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করলে আদালত ২ দিনের পুলিশ রিমান্ড মঞ্জুর করেন। পুলিশ রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদকালে আসামি মো. রুবেল হাওলাদার (৩৩) পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ইতালি প্রবাসী ফরহাদ হোসেনের স্ত্রী ভিকটিমকে অপহরণের কথা স্বীকার করেন এবং তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে সিআইডি খুলনার অতিরিক্ত ডিআইজির দিকনিদের্শনা ও প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ২৬ ফেব্রুয়ারি সিআইডি খুলনার একটি চৌকস টিমের সহযোগীতায় ঢাকা থেকে ভিকটিমকে উদ্ধার করেন এবং ঢাকা সহ বাগেরহাটের বিভিন্ন জায়গায় অভিযান পরিচালনা করে ভিকটিমের ব্যবহৃত কিছু স্বর্ণালঙ্কার উদ্ধার করেন এবং বাকী স্বর্ণ উদ্ধারে ব্যাপক চেষ্টা অব্যাহত আছে।

এছাড়া কেএমপির হরিণটানা থানার দলিল, এনআইডি কার্ড জালজালিয়াতি ও প্রতারণার ঘটনায় মামলা বিজ্ঞ আদালত সিআইডি খুলনাকে তদন্তের নির্দেশ প্রদান করলে তার সার্বিক দিকনির্দেশনা ও তদারকিতে মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই অমিতাভ সন্যাসী তথ্যপ্রযুক্তির সহয়তায় ৩ জন আসামী খুলনার বিভিন্ন জায়গায় অভিযান পরিচালনা করে ৬ ফেব্রুয়ারি গ্রেপ্তার করে বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করেন। তদন্ত কর্মকর্তা বিজ্ঞ আদালতের নির্দেশে ২ জন আসামীকে পুলিশ রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করেন এবং ২ জন আসামী স্বেচ্ছায় বিজ্ঞ আদালতে স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দী প্রদান করেন। দলিল, এনআইডি কার্ড জালজালিয়াতি ও প্রতারণার ঘটনায় জড়িত অন্যান্য আসামীদের গ্রেপ্তার ও মামলার মূল রহস্য উদঘাটনের জন্য সর্বাত্বক প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে।

আরো পড়ুন: প্রেমিকার বিয়ের খবর শুনে প্রেমিকের আত্মহত্যা

পাশাপাশি কেএমপির খানজাহান আলী থানার চুরি মামলার বাদীর নারাজীর আবেদনের প্রেক্ষিতে খুলনা সিআইডিকে তদন্তের দায়িত্ব প্রদান করা হলে সিআইডি খুলনার অতিরিক্ত ডিআইজি শম্পা  ইয়াসমীনের সার্বিক দিক নির্দেশনায় ও নিবিড় তদারকিতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই শেখ সাইফুল ইসলাম মোটর সাইকেল চুরির সঙ্গে জড়িত চোরচক্রের ৩ জন সদস্যকে খুলনা, গোপালগঞ্জ জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে গ্রেপ্তার করেন। গ্রেপ্তারকৃত চোর চক্রের ৩ জন সদস্যের মধ্য হতে ২ জন সদস্য মামলার ঘটনার সঙ্গে নিজেদের জড়িত থাকার বিষয়ে স্বীকার করতঃ স্বেচ্ছায় বিজ্ঞ আদালতে স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দী প্রদান করেছে। আসামীদের স্বীকারোক্তি মোতাবেক চোরাই মোটরসাইকেল উদ্ধারের জন্য সর্বাত্বক প্রচেষ্টা অব্যহত আছে।

তাছাড়া হরিণটানা থানার আলোচিত রাজা হত্যা মামলা বিজ্ঞ আদালত সিআইডি খুলনাকে তদন্তের নির্দেশ প্রদান করলে সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি শম্পা ইয়াসমীন তদন্ত কর্মকর্তা এসআই (নি.) সৈয়দ জুবায়ের হোসেনসহ সিআইডির বিশেষ টিম নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং বাদীসহ স্থানীয় জনসাধরণের সঙ্গে মামলার ঘটনার বিষয়ে কথা বলেন। মামলার ঘটনায় জড়িত আসামীদের শনাক্ত পূর্বক গ্রেপ্তার ও মামলার মূল রহস্য উদঘাটনের লক্ষ্যে ব্যাপক চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। অতিরিক্ত ডিআইজি শম্পা ইয়াসমীনের বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বিভিন্ন মামলার সঠিক ও বস্তুনিষ্ঠ তদন্তের নিশ্চয়তায় কাজ করে চলেছে সিআইডি খুলনা মেট্রো ও জেলার প্রতিটি সদস্য। 

পুলিশ কর্মকর্তা শম্পা ইয়াসমীন বলেন, এ পেশা অন্যান্য পেশার চেয়ে ভিন্নতর। কাজের ধরনও ভিন্ন। যেসব নারী পুলিশে যোগদান করেন, তারা এই মানসিকতা নিয়েই আসেন যে, তাদের চ্যালেঞ্জ নিতে হবে। আসার পর এসআই এবং এএসপিদের এক বছরের একটি প্রশিক্ষণ নিতে হয়, কনস্টেবলদের ছয় মাসের। এ ট্রেনিং পুরুষদের মতোই। পেশাগত কাজে এখন নারীর তেমন সমস্যা হচ্ছে না। বাংলাদেশ পুলিশ উইমেন নেটওয়ার্ক নামে আমাদের একটি সংগঠন আছে। এখানে আমাদের একটি হটলাইন নম্বর রয়েছে। যদি কোনো নারী সদস্য কর্মক্ষেত্রে হয়রানির সম্মুখীন হন, সঙ্গে সঙ্গে হটলাইনে ফোন করে জানান। এরপর যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হয়। 

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App