×

সারাদেশ

বেইলি রোডে অগ্নিকাণ্ড

আগুনে শান্ত’র সঙ্গে শেষ হলো তার নামকরা শেফ হওয়ার স্বপ্ন

Icon

নারায়ণগঞ্জ প্রতি‌নি‌ধি

প্রকাশ: ০১ মার্চ ২০২৪, ০৭:৫৪ পিএম

আগুনে শান্ত’র সঙ্গে শেষ হলো তার নামকরা শেফ হওয়ার স্বপ্ন

শান্ত; যেমন তার নাম তেমনি  শান্ত ছিলো সে। ইচ্ছে ছিলো সে একদিন নামকরা শেফ হবে। দেশ বিদেশের মানুষ চিনবে তাকে। সেজন্য নিয়েছিলো রান্না-বান্নার ট্রেনিং। সহকারী শেফ হিসেবে কাজ শুরু করেছিলো বেইলি রোডের ওয়াফেল বার এন্ড রেস্টুরেন্টে। কিন্তু ২৯ ফেব্রুয়ারি রাতের আগুনে দগ্ধ হয়ে মারা যায় শান্ত হোসেন (২৩)। আগুনে দগ্ধ শান্ত’র সঙ্গে মাটিতে সমাহিত হয়েছে তার নামকরা শেফ হওয়ার স্বপ্ন।

নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার কুতুবপুর ইউনিয়নের ভূইগড় পশ্চিম পাড়া এলাকায় শান্তদের বাড়ি। 

শুক্রবার (১ মার্চ) সকালে এলাকার মানুষ যাচ্ছিলেন শান্তদের বাড়িতে। তাদের সহায়তায় পথ চিনে গেলাম। বাড়ির উঠানে গাছের ছায়ায় খাটিয়ার উপর রাখা হয়েছিলো শান্তকে। আগুনে দগ্ধ হয়ে চেহারা কালো হয়ে গিয়ে ছিলো। জুমার নামাজের পরে শান্ত’র জানাজা। প্রস্তুতি চলছিলো জানাজায় তাকে নেয়ার। এসময় কথা হলো শান্তর চাচা রুবেল হোসেনের সঙ্গে। তিনি জানালেন, শান্তর বাবা আমজাদ হোসেন সৌদিতে থাকেন। দুই ভাই এক বোনের মধ্যে শান্ত সবার বড়। ছোট ভাই প্রান্ত হোসেন এইএচ এস সি পরীক্ষার্থী। ছোট বোন আমেনা আক্তার তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্রী। মা লিপি আক্তার গৃহিণী। বাবা-মাকে সংসারে সহায়তা করতে আর নিজের স্বপ্ন পূরণ করতে শান্ত চাকরি নেয় বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজ ভবনের ঐ রেস্টুরেন্টটিতে। 

শান্তর ছোট ভাই ঢাকার কবি নজরুল কলেজের এইচ এস সি পরীক্ষার্থী প্রান্ত হোসেন জানায়, শান্ত ঐ রেস্টুরেন্টে থেকেই কাজ করতো। মাসে একবার বা দুইবার বাসায় আসতো। বৃহস্পতিবার রাত এগারোটার দিকে তারা খবর পান যে শান্ত যেখানে কাজ করে সে ভবনে আগুন লেগেছে। সাথে সাথেই প্রান্ত ভাইয়ের সন্ধানে ছুটে যায় বেইলি রোডে। সেখানে শান্তকে না পেয়ে পুলিশের পরামর্শে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে গিয়ে পান ভাইয়ের দগ্ধ লাশ। 

প্রান্ত জানান, ‘হয়তো পরিস্থিতি এমন ছিলো যে তার ভাই তাদের একটা ফোন করারও সুযোগ পাননি। তার আগেই দগ্ধ হয়ে গেছেন।

শান্তর মৃত্যুতে এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছাঁয়া। এলাকাবাসি শান্তকে ভালো মানুষ হিসেবে জানতো। 

এলাকার বাসিন্দা শফিকুল মিয়া বলেন, ‘ও শেফের কাজ শিখেছিলো। ওর ইচ্ছে ছিলো একসময় শেফের কাজের মাধ্যমে সে বিখ্যাত হবে। বিদেশে যাবে। প্রতিষ্ঠিত হবে। এ চেষ্টা থেকেই সে ওয়াফেল বার এন্ড রেস্টুরেন্টে চাকরি নিয়েছিলো। 

তবে শান্তর মৃত্যুতে ক্ষোভ প্রকাশ করে তার আরেক চাচা শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বিভিন্ন ভবনে সিলিন্ডার গ্যাস ব্যবহারের অব্যবস্থাপনার ফল এই দুর্ঘটনা। এর একটা সহজ সমাধান আছে। গ্যাসের সিলিন্ডারগুলি সব ছাঁদে স্থাপন করে সেখান থেকে পাইপের মাধ্যমে গ্যাস নামিয়ে আনার ব্যবস্থা করা। তাহলে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে এত প্রাণহানি হবেনা। এই সহজ ব্যবস্থাটি কেন করা হয় না জানিনা। জুম্মার নামাজের পরে শান্তর জানাজা হয় ভুইগড় ঈদগাহ কবরস্থান ও মসজিদে। পরে এ কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App