×

সারাদেশ

সিসি ক্যামেরার ফুটেজ গায়েব নিয়ে নবীগঞ্জ শহর রণক্ষেত্র, আটক ১৪

Icon

নবীগঞ্জ (হবিগঞ্জ) থেকে

প্রকাশ: ০১ মার্চ ২০২৪, ১২:৩০ পিএম

সিসি ক্যামেরার ফুটেজ গায়েব নিয়ে নবীগঞ্জ শহর রণক্ষেত্র, আটক ১৪

হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ শহরে সিসি ক্যামেরা গায়েব করা নিয়ে দুইপক্ষের ৪ ঘণ্টাব্যাপী ভয়াবহ সংঘর্ষে পুলিশ, সাংবাদিক ও পথচারীসহ অর্ধশতাধিক লোকজন আহত হয়েছে। ভাঙচুর করা হয়েছে ব্যাংক, মার্কেটসহ অর্ধশতাধিক দোকানপাট। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ৪৫ রাউন্ড টিয়ারশেল ও ১৫ রাবার বুলেট নিক্ষেপ করেছে পুলিশ। তাৎক্ষণিক অভিযান চালিয়ে নবীগঞ্জ শহর থেকে উভয়পক্ষের ১৪ জন দাঙ্গাবাজকে আটক করেছে পুলিশ।

বুধবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যা সাড়ে ৫টা থেকে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়ে রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত কয়েক দফায় এ সংঘর্ষ চলে। পরে হবিগঞ্জ-১ (নবীগঞ্জ-বাহুবল) আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট আমাতুল কিবরিয়া চৌধুরী কেয়া, উপজেলা নির্বাহী অফিসার অনুপম দাশ অনুপ, বাহুবল সার্কেলের এএসপি আবুল খয়ের ও নবীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মাসুক আলীর হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। 

এ ঘটনায় নবীগঞ্জ শহরে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে এবং স্থানীয় বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীদের মাঝে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। শহরের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে অতিরিক্ত পুলিশ ও র‌্যাব মোতায়েন করা হয়েছে।

সূত্রে জানা যায়, নবীগঞ্জ শহরে কলেজ ছাত্র তাহসিন হত্যার ঘটনায় পুলিশ সিসি টিভি ফুটেজ দেখতে চাইলে আনমনু গ্রামের লোকজন বাধা দেন। এ নিয়ে নবীগঞ্জ শহরের শেরপুরে রোডে অবস্থিত রাজা কমপ্লেক্স এর স্বত্বাধিকারী ও কুর্শি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এনাতাবাদ গ্রামের সৈয়দ খালেদুর রহমান এবং পৌর কাউন্সিলর আনমনু গ্রামের নানু মিয়ার লোকজনের মধ্যে ভয়াবহ সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। পরে এনাতাবাদ ও আনমনু গ্রামের লোকজন সংঘর্ষ জড়িয়ে পড়ে। এসময় চেয়ারম্যান খালেদের মালিকানাধীন রাজা কমপ্লেক্স, পুবালী ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, ডাচ বাংলা ব্যাংক, তাহসিন প্লাজা ও বেশ কয়েকটি দোকানপাট ভাঙচুর করা হয় এবং রাস্তার পাশে থাকা মোটর সাইকেল ও বেশ কয়েকটি সবজির দোকান ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়।

৪ ঘণ্টাব্যাপী চলা সংঘর্ষে উভয়পক্ষের লোকজন ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। এতে ব্যবসায়ী ও পথচারীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করে। ব্যবসায়ীরা দোকানপাট বন্ধ করে দিগ্বিদিক ছুটোছুটি করেন। সংঘর্ষে চলাকালে পুলিশ ও সাংবাদিকদেরকে লক্ষ করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করা হয়। সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ৪৫ রাউন্ড টিয়ারশেল ও ১৫ রাউন্ড রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। পরে রাত ৯টায় হবিগঞ্জ থেকে অতিরিক্ত পুলিশ পাঠান হবিগঞ্জ-১ (নবীগঞ্জ-বাহুবল) আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট আমাতুল কিবরিয়া চৌধুরী কেয়া। পুলিশ রাবার বুলেট ও কাঁদানো গ্যাস নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি শান্ত করেন। সংঘর্ষ চলাকালে নবীগঞ্জ থানার ওসি (তদন্ত) গোলাম মুর্শিদ, নবীগঞ্জ প্রেসক্লাব সভাপতি এম.এ আহমদ আজাদসহ শতাধিক লোক আহত হন।

এ ঘটনায় তাৎক্ষণিক নবীগঞ্জ শহরে অভিযান চালিয়ে উভয়পক্ষের ১৪ দাঙ্গাবাজকে আটক করে পুলিশ। গ্রেফতারকৃতরা হলো ইনাতাবাদ গ্রামের মো. আশফাক আলীর পুত্র নাসির মিয়া (২৫), একই গ্রামের ছাদিক মিয়ার পুত্র আবু জাহেদ (৩৪), মৃত সমাই উল্লাহর পুত্র ফজল মিয়া (৩৮), মৃত খাফল উল্লার পুত্র ছুনু মিয়া (৩৪), সাজ্জাদ আলীর পুত্র জুবেদ মিয়া (২৪), মৃত ইস্কন্দর মিয়ার পুত্র বিল্লাল মিয়া (২৩), রুঘু মিয়ার পুত্র রাজু মিয়া (২৪), অনু মিয়ার পুত্র দিলদার (২৬), মালিক মিয়ার পুত্র খালেদ মিয়া (২৮), মৃত আব্দুল মন্নাফের পুত্র সোলেমান (৩৫), মৃত ফারাজ মিয়ার পুত্র মইন উদ্দিন (২১), মো. ফাহাদের পুত্র মো. মাফিন উদ্দিন (২০) ও আনমুনু গ্রামের হিযবু মিয়ার পুত্র তৌহিদ মিয়া (৩৫), মৃত এলাইছ মিয়ার পুত্র অন্তর মিয়া (২৬)।

এ বিষয়ে কুর্শি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সৈয়দ খালেদুর রহমান জানান, তার মার্কেটের সিসি টিভির ফুটেজ দেখানোর জন্য পুলিশ আসলে আনমনু গ্রামের লোকজন তার মালিকানাধীন মার্কেটে হামলা করে সিসি ফুটেজ ছিনতাই করার চেষ্টা করে, এনিয়ে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়।

আনমনু গ্রামের পৌর কাউন্সিলর নানু মিয়া বলেন, চেয়ারম্যান জানাজার নামাজে তার গ্রামের লোকজনকে উদ্দেশ্য করে গালাগালি করলে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। নবীগঞ্জ থানার ওসি মো. মাসুক আলী জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ৪৫ রাউন্ড টিয়ারশেল (কাঁদানো গ্যাস) ও ১৫ রাউন্ড রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। 

তিনি বলেন, তার থানার ওসি তদন্তসহ ৮ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। শহরে অতিরিক্ত দাঙ্গা পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অনুপম দাশ অনুপ বলেন, আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি শান্ত করেছি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App