×

সারাদেশ

পটুয়াখালী পৌর নির্বাচনে মেয়র পদে প্রথম পছন্দ ‘গরিবের ডাক্তার’ শফিক

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৪:৩০ পিএম

পটুয়াখালী পৌর নির্বাচনে মেয়র পদে প্রথম পছন্দ ‘গরিবের ডাক্তার’ শফিক

এলেন, দেখলেন এবং জয় করলেন। এ যেন এক মানবতার চিকিৎসকের গল্প। পটুয়াখালী জেলা সদরে তখন ছিল না কোনো মেডিকেল কলেজ। সদর হাসপাতাল পর্যন্ত চলতো খুঁড়িয়ে। হাতে গোনা যে কজন ডাক্তার ছিল, তারাও বেশিদিন থাকতে চাইতো না ছোট্ট শহরটিতে। হঠাৎ কেউ অসুস্থ হলে ডাক্তার পাওয়া ছিল একরকম কঠিনই। ছিল না কোনো প্রাইভেট ক্লিনিকও। শুধু দু-একটা নামসর্বস্ব ডায়াগনস্টিক সেন্টার ছিল। যেখানে হাতেগোনা কিছু পরীক্ষা করানো যেত। ঠিক সে সময় শহরে ফেরেন সদ্য এমবিবিএস পাশ করা ডা. শফিক। গরীব মানুষ তার কাছে পান শতভাগ ফ্রি চিকিৎসা, কিনে দিয়েছেন ঔষধও। সেই থেকে সবার কাছের, ভালোবাসার ডাক্তার তিনি। পরে নিজের দুটি ক্লিনিকে আধুনিক সব চিকিৎসার পাশাপাশি অস্ত্রে পাচারও করেছেন বিনামূল্যে। ঘরের খেয়ে পরের মেষ তাড়ানো এমন সেবাপাগল চিকিৎসক বিনিময়ে পেয়েছেন সবার প্রাণ উজার করা ভালবাসা আর দোয়া।

ডা. শফিক ছিলেন সাবেক ছাত্রনেতাও। বরিশাল শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। পড়াশোনার মতই ৯০ এর গণ-অভ্যুত্থানেও ছিলেন সামনের কাতারে। সেজন্য ডাক্তারি পাসে কিছুটা বাড়তি সময় লেগে যায়। পাস করে ঢাকা বা বরিশালে না থেকে ঘরে ফেরেন। কারণ তার শিরায় যে রাজনীতি আর মানবসেবা। মেডিকেলে পড়া অবস্থায়ও ভর্তিচ্ছু ছাত্রদের নিজের কক্ষে থাকার ও খাবার ব্যবস্থা করতেন। চিকিৎসার জন্য কেউ বরিশাল মেডিকেল ও হাসপাতাল ভর্তি হলে তাদের সহায়তা করতেন। তিনি জেলা স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিব) ও বিএমএর সাধারণ সম্পাদকও।  

দীর্ঘ ২২ বছরের চিকিৎসা ক্যারিয়ারে জন সেবাই ছিলো তার ধ্যানজ্ঞান। সে জন্যই ২০১০ সালে পটুয়াখালীবাসী ভালোবেসে বিপুল ভোটে মেয়র নির্বাচিত করেন। টানা ৮ বছর নেগরপিতা হয়ে পৌরবাসীকে আধুনিক সব নাগরিক সুবিধা দেন। আর সঙ্গে স্বপন বুনে নান্দনিক, সুশৃঙ্খল এক পরিচ্ছন্ন নগরীর। সে লক্ষ্যে বেশ কিছু প্রকল্পের বরাদ্দও আনেন। যা পরবর্তী মেয়র শেষ করেন নানা নয় ছয় করে। 

সেবার পৌরসভার ব্যাপক উন্নয়ন করেন ডা. শফিক। ডাবল লেনের সড়ক, জেলা শহরে ওভারব্রিজ, সড়ক প্রশস্তকরণ, ড্রেন নির্মাণ, শহরের প্রধান প্রধান সড়ক, শহর রক্ষা বাধ , খাল খনন, সোলারের আলোয় শহরকে আলোকিত করাসহ শত শত কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেন তিনি। এছাড়া বর্তেমানে শহর জুড়ে চলা সিটিইবি প্রকল্পটিও তার সময়কার। 

সিটিসিআরপি বা কোস্টাল টাইল ক্লাইমেট রেজিলেন্স প্রজেক্ট যার মধ্যে অন্যতম। যার বরাদ্দ ৭০ কোটি টাকার ওপরে। ধাপে ধাপে এ টাকা বরাদ্দ হয়। তবে এই বড় প্রকল্পটিও ডা. শফিকের সময়ে আনা। যার কাজ এখনো চলছে। এছাড়া পটুয়াখালী একমাত্র নান্দনিক প্রধান সড়ক যা স্থানীয়ভাবে সেলফি রোড নামে পরিচিত, সেটির বরাদ্দ ও কর্মপরিকল্পনাও এই সাবেক মেয়রের। 

তারপরেও, ২০১৮ সালের নির্বাচনের দলীয় সিদ্ধান্তের প্রতি সম্মান দেখিয়ে ভোটে অংশ নেননি। এটিকেও তার মেধা, পারিবারিক শিক্ষা ও রাজনৈতিক সহনশীলতার প্রমাণ বলে মনে করেন পৌরবাসী। স্থানীয়রা জানান, ডা. শফিক যে পরিবার থেকে এসেছেন সেখানে শিক্ষা, পদ কিংবা সম্পদের অভাব নাই, তাই তার অর্থলোভ নাই। জনগণের টাকা মেরে খাওয়াদের দলে তিনি নন বলেও বিশ্বাস পৌরবাসীর।

প্রায় দেড়শো বছরের পুরানো পটুয়াখালী পৌরসভায় নগরপিতা নির্বাচনের দিন যত ঘনিয়ে আসছে বাড়ছে প্রচার। সঙ্গে বাড়ছে প্রচারণাও। চলছে আলোচনা-সমালোচনা। আগামী ৯ মার্চ ইভিএম ভোটগ্রহণে কে হবেন নগরপিতা?

২৪ জানুয়ারি তফশিল ঘোষণার পরপরই পৌর এলাকাজুড়ে ভোটের আমেজ। প্রচারে ব্যস্ত মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা। পথসভা, উঠান বৈঠক আর মিছিলে মুখর শহরের প্রতিটি ছোটবড় সড়ক ও প্রাঙ্গণ। 

মেয়র প্রার্থীর মধ্যে বর্তমান মেয়র মহিউদ্দিন আহমেদ ও সাবেক মেয়র পটুয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. শফিকুল ইসলাম আলোচনার কেন্দ্রে। 

ভোটারদের কাছে প্রতিশ্রুতির ঝাঁপি খুললেও জনপ্রিয়তা আর আস্থার বিচারে এগিয়ে ডা. শফিক। দুই দশকের বেশি সময় ধরে স্বল্প আয়ের মানুষকে বিনামূল্যে চিকিৎসা ও আর্থিক সহায়তাসহ অন্যান্য সহযোগিতার মাধ্যমে গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করেছেন। চায়ের দোকানি থেকে শুরু করে দিনমজুর, ভিক্ষুক সবার মুখে ঘুরেফিরে তার নাম। বাদ যান না এলিট কিংবা শিক্ষিত শ্রেণীও। তরুণদের কাছে তিনি দিকনির্দেশক। আর রোগীদের কাছে গরিবের ডাক্তার।

ডা. শফিকুল ইসলাম জানান, যখন মেয়র ছিলাম, সব থেকে বেশি বরাদ্দ পেয়েছে এই পৌরসভা। যেই কাজগুলো এখন দেখতে পাচ্ছেন সেগুলোও আমার সময় রেখে যাওয়া বরাদ্দের অংশ। সেবক হয়ে কাজ করেছি। আবারো নির্বাচিত হলে সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করবো।

তার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিগুলোর মধ্যে রয়েছে, শহরের চারপাশে বেড়িবাধ নির্মাণ করে চলাচলের সড়ক ও  দৃষ্টিনন্দন পার্ক নির্মাণ, ৯টি ওয়ার্ডে ৯টি মাতৃসেবাকেন্দ্র গরীব-অসহায় রোগীদের সেবাদান, স্মার্ট পৌরসভা গড়া, সুন্দর, স্বাস্থ্যকর ও পরিচ্ছন্ন পরিবেশ, যুবকদের আইটি সেক্টরে এবং মেয়েদের নানা প্রশিক্ষণ যাতে ইপিজেডে চাকরি পান। শিশুবান্ধব ও মানবিক পৌরসভা গড়া যেখানে শান্তি, সহনশীলতা ও অসাম্প্রদায়িক অবস্থা বিরাজ করবে।

এদিকে, পৌরসভা নির্বাচনের জয়ের মাধ্যমে নিজেদের হারানো দুর্গ ফেরত পেতে মরিয়া আওয়ামী লীগ। দলীয় প্রতীকে নির্বাচন না হলেও মেয়র পদে সর্বাধিক জনপ্রিয় হিসেবে সমর্থন দেওয়া হয়েছে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. মো. শফিকুল ইসলামকে।

এদিকে দলীয় কোনো পদ পদবি না থাকলেও নিজেকে আওয়ামী লীগের একজন দাবি করেন বর্তমান মেয়র মো. মহিউদ্দিন। যদিও, স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আদতে তিনি ও তার পরিবারে মনেপ্রাণে বিএনপি সমর্থকই নন, দলটিতে প্রথম সারির অর্থদাতাদের মধ্যে রয়েছেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App