×

সারাদেশ

ঝিকরগাছায় গোলাপ বাগানে ছত্রাকের আক্রমণ, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা

Icon

আতাউর রহমান জসি, ঝিকরগাছা (যশোর) থেকে

প্রকাশ: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৪:২৭ পিএম

ঝিকরগাছায় গোলাপ বাগানে ছত্রাকের আক্রমণ, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা

মাঘের শেষ প্রায়, আর ক'দিন বাদেই আসছে পহেলা ফাল্গুন। পুরো মৌসুমে সবথেকে বেশি গোলাপ বিক্রি হয় পহেলা ফাল্গুন আর ১৪ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালবাসা দিবসে। তবে এ বছর যশোরের গদখালি-পানিসারা-হাড়িয়া অঞ্চলের গোলাপ চাষিদের মুখে হাসি নেই। ছত্রাকের আক্রমণে অধিকাংশ বাগানের ফুলই নষ্ট হয়েছে। যাদের বাগানে ফুল ফুটেছে সেটাও পরিমাণে কম। অতিমাত্রায় শীত, কুয়াশা কিংবা অসময়ে বৃষ্টির কারণেই 'সর্বনাশা পঁচন' রোগে এমন ক্ষতি, বলছে সংশ্লিষ্টরা।

সরেজমিনে দেখা যায়, বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে গোলাপ বাগান। সাদা ক্যাপ মোড়ানো গোলাপের কড়ি বাতাসে দুলছে। তবে কৃষকরা বলছেন, গতবছরের তুলনায় এবছর গোলাপের উৎপাদন কম। পঁচা রোগে অধিকাংশ কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত। গাছের পাতা, ডাল কিংবা কড়ি পঁচে ঝরে যাচ্ছে। কীটনাশক বা ছত্রাক নাশক স্প্রে করেও মিলছেনা সমাধান। অবশ্য কৃষি অফিস বলছে, গরমের আবহাওয়া আসলেই সব ঠিক হয়ে যাবে।

কৃষকদের দাবি কৃষি কর্মকর্তাদের জানিয়েও কিংবা তাদের দেয়া পরামর্শে প্রতিকার মিলছে না। অধিকাংশ কৃষক বলছেন, কৃষি কর্মকর্তারা মাঠে আসেন না। আর কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, চাষিরা নির্দেশনা না মেনে অতিরিক্ত সার কীটনাশক ব্যবহার করার কারণে ছত্রাকের সংক্রমণ ঠেকানো যাচ্ছে না।

পটুয়াপাড়া গ্রামের ওমর আলীর ১ বিঘা জমি বাৎসরিক ২০ হাজার টাকায় লিজ নিয়ে গোলাপ চাষ করেছেন। তিনি বলেন, এবছর গোলাপ গাছে পঁচা রোগ লেগেছে। গাছের পাতা, ডাল, কড়ি পঁচে যাচ্ছে। বিভিন্ন রকমের ওষুধ দিয়েও আশানুরূপ কাজ হচ্ছেনা। তিনি বলেন, এখনো পর্যন্ত কৃষি বিভাগের কাউকেই মাঠে দেখিনি। তারা কোন পরামর্শও দেয়নি। নিজেদের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে কিটনাশক ও ছত্রাকনাশক স্প্রে করছি।

আরো পড়ুন: বাস-কাভার্ডভ্যান সংঘর্ষে দুই চালকসহ নিহত ৩

নীলকন্ঠনগর গ্রামের সাদেক হোসেন ২৫ কাঠা জমিতে গোলাপ চাষ করেছেন। তিনি দাবি করেন লক্ষ্যমাত্রার তিন ভাগের এক ভাগ ফুলও তিনি তুলতে পারেননি। কড়ি থেকে ফুল ফোটার আগেই সব পঁচে গেছে। যেটুকু ফুল ফুটেছিল তাও রোগাক্রান্ত, ফলে কাঙ্ক্ষিত দাম পাননি।

নীলকন্ঠনগর গ্রামের শিক্ষার্থী চয়ন হোসেন জানান, ১৫ কাঠা জমিতে তাদের গোলাপের চাষ রয়েছে। এই বাগানের বয়স অন্তত দশ বছর। এবছর পঁচা রোগের কারণে ফুল উৎপাদন কম হয়েছে কিন্তু খরচ হয়েছে বেশি। চয়ন বলেন, অতি কুয়াশার কারণেই পঁচা রোগ লেগেছে। প্রথমে গাছের পাতায় কিছু কালো দাগ আসে। এরপর ধীরে ধীরে পাতা পড়ে কাণ্ডে পঁচা লাগে। তারপর ফুল ফোটার আগেই কড়ি নষ্ট হয়ে যায়।

নীলকন্ঠনগর গ্রামের ফুলচাষী সাইফুল ইসলাম বলেন, দেড় বিঘা জমির চায়না গোলাপ পঁচে শেষ হয়ে গেছে। কুয়াশা আর বৃষ্টির কারণে গাছে পঁচা লেগেছে। পাতা, কড়ি শুকিয়ে পড়ে যাচ্ছে। কৃষি অফিসারের পরামর্শে ছত্রাকনাশক স্প্রে করেও কোন কাজ হয়নি। 

পটুয়াপাড়া গ্রামের শাহাজান আলী জানান, গতবছর এই মৌসুমে ২৫কাঠা জমিতে ৮হাজার গোলাপ ফুলে ক্যাপ পরিয়েছিলেন। কিন্তু এবছর মাত্র ৩হাজার গোলাপে ক্যাপ পরাতে পেরেছেন। তিনি অভিযোগ করেন, বাগানের এমন খারাপ অবস্থায়ও কোন অফিসার আসেনি বাগানে। পঁচা রোগে পাতা কুকড়ে যাচ্ছে। এতে অধিকাংশ কড়ি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, যেগুলো থাকছে সেগুলো শক্ত হয়ে আর ফুঁটছেনা।

যশোর ফুল উৎপাদক ও বিপণন সমবায় সমিতির সভাপতি আব্দুর রহিম জানান, এই অঞ্চলে অন্তত ২৫০ হেক্টর জমিতে গোলাপ চাষ হয়। এবছর অতিশীত ও অসময়ে বৃষ্টির কারণে গোলাপ ও গ্লাডিওলাস চাষীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গাছের কাণ্ড, পাতা ও ফুলের কড়ি পঁচে গেছে। স্বাভাবিকভাবেই উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। আশানুরূপ গোলাপ উৎপাদন হয়নি।

আরো পড়ুন: মা-মেয়েকে ধর্ষণ, আসামি হারুন গ্রেপ্তার

তিনি বলেন, কারণ অনুসন্ধানে জানা গেছে দ্রুত ফুল তোলার জন্য যারা বেশি মাত্রায় সার ও সেচ দিয়েছে তারাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে কমবেশি সবার ক্ষেতেই ক্ষতি হয়েছে।

উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা অর্ধেন্দু পাঁড়ে জানান, গোলাপ গাছে ছত্রাকের আক্রমণ হয়েছে। কৃষকরা কথা শোনেনা। তারা অতিমাত্রায় সার, কীটনাশক ব্যবহার করে। এতে গাছের পাতায় স্তর তৈরি হয়ে গেছে। ফলে সালেক সংস্লেশনের মাধ্যমে গাছ খাবার তৈরি করতে পারে না। তবে গরমের আবহাওয়া আসার সাথে সাথে পঁচা রোগ ঠিক হয়ে যাবে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা, কৃষিবিদ মাসুদ হোসেন পলাশ বলেন, এই অঞ্চলে ৬৫০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন ধরণের ফুলচাষ হয়। এর মধ্যে অন্তত ১৫০ হেক্টর জমিতে গোলাপ চাষ হয়, যার মধ্যে ৩০ হেক্টর জমিতে চায়না গোলাপের চাষ হয়।

তিনি বলেন, অতিবৃষ্টি আর কুয়াশার কারণে গোলাপ গাছে পঁচন রোগ ধরেছে। চাষিদের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়ে আমরা মাঠ পরিদর্শন করেছি। যেসব বাগানের বয়স একবছরের কম সেসব বাগান বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। চাষিদের সাথে মতবিনিময় করে এই রোগের জন্য ছত্রাকনাশক স্প্রে করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এখন তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে অবস্থার উন্নতি হয়েছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App