×

সারাদেশ

অনিয়ম-অব্যবস্থাপনা

পরিত্যাক্ত অবস্থায় ফুলগাজী মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স

Icon

তনু সরকার, ফুলগাজী (ফেনী) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ৩১ জানুয়ারি ২০২৪, ০৭:৪৩ পিএম

পরিত্যাক্ত অবস্থায় ফুলগাজী মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স

ছবি: সংগৃহীত

ফেনীর ফুলগাজীতে বিগত পাঁচ বছর আগে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য দুই কোটি ১৬ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত হওয়া তিন তলা বিশিষ্ট ফুলগাজী মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স নির্মাণের পর থেকে নানা অনিয়ম ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে পরিত্যাক্ত অবস্থায় চলে গেছে ভবনটি। বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে এর বিদ্যুৎ সংযোগ, ময়লা-আবর্জনার ভাগাড় হয়ে আছে কমপ্লেক্সের চারদিক। এছাড়া নির্মাণের পর থেকে এখন পর্যন্ত বন্ধ রয়েছে কমপ্লেক্সের দোকানঘরগুলো। ২০১৬ সালে ফুলগাজী সদর ইউনিয়নের ভিতর বাজার এলাকায় নির্মিত এ ভবনটি কোন কাজেই আসছে না এখন। 

কমপ্লেক্সটির বিষয়ে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের অভিযোগ, নির্মাণের সময় স্থান নির্ধারণ নিয়ে অনেক মুক্তিযোদ্ধাদেরই অভিযোগ ছিলো । যেহেতু বাজারের মেইন সড়ক থেকে একেবারে ভিতর বাজারের একপাশে হওয়ায় এই ভবনের কাজ শুরু থেকে শেষ হয়েছে এবং উদ্বোধনও করা হয়েছে। কিন্তু ওই দিনের পর থেকে অদ্যাবধি মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে কোন ধরনের সভা সেমিনার, মুক্তিযোদ্ধা সংশ্লিষ্ট অনুষ্ঠান, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবসের অনুষ্ঠান পালন করা হয়নি। এই কমপ্লেক্সটি করার উদ্দেশ্য ছিল নিচ তলা এবং দ্বিতীয় তলার দোকানঘরগুলো ভাড়া দেবে এবং তৃতীয় তলায় মুক্তিযোদ্ধাদের অফিস থাকবে। কিন্তু ভবন উদ্বোধনের প্রায় পাঁচ বছর পরেও বারোটি দোকানের একটিও এখন পর্যন্ত ভাড়া দেয়া হয়নি। 

জানাযায়, এই দোকানগুলো ভাড়া দিয়ে যে টাকা আসবে সে টাকা দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্ন কাজে ও অনুষ্ঠান এবং কমপ্লেক্সের আনুষঙ্গিক কাজে ব্যয় করা হবে। এছাড়া ফুলগাজী উপজেলায় অসচ্ছল ও দুঃস্থ্য মুক্তিযোদ্ধাদের দোকান ভাড়ার অর্থ থেকে বিভিন্ন ধরনের সহায়তা করা হবে। মুক্তিযোদ্ধাদের অনেকেরই দাবি ১৬ ডিসেম্বর এবং ২৬শে মার্চের পোগ্রামগুলো যদি এই কমপ্লেক্স করা হতো কমপ্লেক্সটি প্রাণবন্ত হতো। যে উদ্দেশ্যে কমপ্লেক্স করা হয়েছে সেই উদ্দেশ্যটা সফল হতো। কমপ্লেক্সে কোন কার্যক্রম চলমান না থাকায় অনেক দিনের বিদ্যুৎ বিল বকেয়া রয়েছে। যার কারণে উপজেলা বিদ্যুৎ বিভাগ বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে বাধ্য হয়।

ফলে বর্তমানে অন্ধকারেই দাঁড়িয়ে আছে ভবনটি। নিয়মিত কার্যক্রম ও ব্যবহার না থাকায় কমপ্লেক্সের চারদিকে ময়লা আবর্জনায় ভরে আছে। ভবনটির এমন পরিত্যাক্ত অব্যবহৃত অবস্থায় থাকার কারণে সাধারণ জনগণ কমপ্লেক্সের ড্রেনে পায়খানা-প্রসাব করছে। ফলে দুর্গন্ধ ও পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে।

এই বিষয়ে মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ড কাউন্সিলের এক সদস্য জানান, এই ভবনের ব্যবহার না থাকার কারণে, সবজি বাজারের ময়লা—আবর্জনা এই ভবনের চারপাশে ফেলা হয়। এমনকি বাজারে আগত মানুষজন এই কমপ্লেক্সের চারপাশে পায়খানা করে গণশোচাগার বানিয়ে ফেলছে। কমপ্লেক্সটি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য আমি সংশ্লিষ্ট বিভাগের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। 

এ বিষয়ে ফুলগাজী সদর ইউনিয়নের সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ধন মিয়ার সঙ্গে কথা বললে ভোরের কাগজকে তিনি জানান, উদ্বোধনের পর আশা ছিলো এই দোকানগুলো চালু করবে। দোকানগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদেরকে বা বিভিন্ন লোকের কাছে বরাদ্দ দেবে। অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের সন্তানেরা ব্যবসা-বাণিজ্য করতে পারতো। কিন্তু দোকানঘরগুলোর এমই অবস্থা হয়েছে যে এ দোকানগুলো ভাড়া নিতে কেউ আগ্রহ প্রকাশ করেনা। কারণ ব্যবসা করার কোনো পরিবেশ নাই এখানে। 

ফুলগাজীর সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আবুল বশর মজুমদার বলেন, এখন তো আমাদের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে, পদাধিকার বলে বর্তমানে মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ফুলগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। তিনি যদি পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এই দোকানগুলো বরাদ্দের জন্য বিজ্ঞপ্তি দিয়ে এগুলো চালু করে দেন এবং কমিটির সদস্যরা যদি সার্বিক সহযোগিতা করে, তাহলে আমাদের এই মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সটা সচল হবে। তাছাড়া বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকার কারণে এখন অন্ধকার ভুতুড়ে ঘরে পরিণত হয়েছে ভবনটি। 

তিনি আরো বলেন, বাজারে আসা মানুষ প্রস্রাব-পায়খানা করে এমন অবস্থা করেছে যে দুর্গন্ধে কেও সেদিকে যেতে পারছে না। এ ব্যাপারে ফুলগাজী বাজার কমিটির সভাপতি ও সদর ইউপি চেয়ারম্যান মো. সেলিম বলেন, ‘আমি মাসিক বাজার কমিটির সভায় একাধিকবার ভিতর বাজারের দোকানদারদেরকে বলেছি কমপ্লেক্সের জায়গায় ও পাশে যেন কোন প্রকার ময়লা-আবর্জনা না ফেলে। কিন্তু তার পরও তারা তা মানছে না।’ 

ফুলগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তানিয়া ভূঁইয়া’র সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান, মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সটি আসলে অবহেলিত পড়ে রয়েছে। আমরা ইতোমধ্যে সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে কমপ্লেক্সটিকে কিভাবে আয়ের উৎস বানানো যায় সেজন্য চেষ্টা করছি। এই বিষয়ে অনেকগুলো পদক্ষেপও নেয়া হয়েছে। বিদ্যুৎ বিল বকেয়ার কারণে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছিলো। সে বিষয়েও ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে সকল সমস্যার সমাধান করে মুক্তিযোদ্ধাদের কমপ্লেক্সটি দ্রুত সচল করা হবে বলে আশ্বাস দেন এ কর্মকর্তা।  

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App