×

সারাদেশ

বিদ্যালয় খোলা, ৭০ শিক্ষক গেলেন ভ্রমণ বিলাসে

Icon

বেলাল হুসাইন বিজয়, কালীগঞ্জ (ঝিনাইদহ) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২৯ জানুয়ারি ২০২৪, ০৫:৩১ পিএম

বিদ্যালয় খোলা, ৭০ শিক্ষক গেলেন ভ্রমণ বিলাসে

ছবি: সংগৃহীত

কোন অনুমতি ছাড়াই সুন্দরবন ভ্রমণ বিলাসে গেলেন কালীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রায় ৭০ জন শিক্ষক। রবিবার (২৮ জানুয়ারি) বিকেল পর্যন্ত ওই শিক্ষকরা ফিরে না আসায় একাধিক বিদ্যালয়ের পাঠদান কার্যক্রম অনেকটাই স্থবির হয়ে পড়েছিল। তবে রবিবার সন্ধ্যায় তারা ফিরেছেন বলে জানা যায়। 

গত বৃহস্পতিবার (২৫ জানুয়ারি) বেলা ১ টার দিকে কালীগঞ্জ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মাহমুদ হাসান সহ ওই শিক্ষকরা ৪ দিনের সুন্দরবন ভ্রমণ বিলাসে যান। তবে, ভ্রমণ বিলাসের জন্য শিক্ষকদের কেউ কেউ ছুটির অনুমতি নিয়েছেন বলে জানালেও অধিকাংশ শিক্ষকই ছুটি নিয়ে ছলচাতুরীর আশ্রয় নিয়েছেন বলে অভিযোগ। এদিকে স্কুল খোলা রেখেই শিক্ষকরা ভ্রমণ বিলাসে যাওয়ায় ছাত্রছাত্রী ও অভিভাবকদের মধ্যে বেশ ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

বিষয়টি জানতে রবিবার সরেজমিনে উপজেলার মহাদেবপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সহ ৩ জন শিক্ষক ভ্রমণ বিলাসে গেছেন। এ সময় প্রধান শিক্ষকের অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা আসিমা বিশ্বাস সাংবাদিকদের জানান, তাদের বিদ্যালয়ে মোট ৫ জন শিক্ষক। তাদের ৩ জন শিক্ষক পিকনিকে গেছেন। আর এ কারণে বিদ্যালয়টির ক্লাস নেয়া সমস্যার কথা স্বীকার করলেও তারা দু’জনেই ক্লাস চালিয়ে নিচ্ছেন বলে জানান তিনি। 

তবে, বিদ্যালয়ের মুভমেন্ট খাতায় প্রধান শিক্ষক সহ ৩ জন শিক্ষকের ছুটি নিয়ে ভ্রমণ বা পিকনিকে গেছেন এমন কোন কিছুই লেখা দেখা যায়নি। বিদ্যালয়টির পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি অর্চনা বিশ্বাস জানান, প্রধান শিক্ষক সহ ৩ জন শিক্ষকের ছুটির বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। তবে, লোক মুখে তিনি শুনেছেন শিক্ষকরা ভ্রমণে গেছেন। 

দূর্গাপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা পারভীনা আক্তার জানান, তার বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ রতন এক দিনের ছুটির দরখাস্ত দিয়ে ওই পিকনিকে গেছেন। রবিবারও ফিরে না আসাতে বিষয়টি তিনি উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে অবহিত করেছেন। অন্য এক সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ রতনের বিরুদ্ধে কয়েকদিন আগে ফারহানা নামে এক শিশু শিক্ষার্থীর চুল টেনে ছিঁড়ে ফেলার অভিযোগ রয়েছে। ব্যাগ থেকে বই বের করতে দেরি করায় ক্লাসের মধ্যেই ওই অমানুষিক কাণ্ড ঘটিয়েছিল শিক্ষক রতন। এ নিয়ে পরিবারের থেকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর অভিযোগও দেয়া আছে। কিন্তু তারপরও ওই অভিযুক্ত শিক্ষককে নিয়ে ভ্রমণ বিলাসে গেলেন শিক্ষা কর্মকর্তা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বেলাট দৌলতপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩ জন, বারবাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩ জন ও দূর্গাপুর বিদ্যালয়সহ উপজেলার বিভিন্ন বিদ্যালয় থেকে ওই ভ্রমণ বিলাসে যাওয়া শিক্ষকদের অধিকাংশই ছুটি না নিয়ে কাগজে ছল চাতুরির আশ্রয় নিয়েছেন। 

এসব বিষয়ে কালীগঞ্জ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মাহমুদ হাসান বলেন, বিদ্যালয় খোলা থাকলে একসাথে একাধিক শিক্ষকের ছুটি বা ভ্রমণে যাওয়া অপরাধ। আর এক বিদ্যালয় থেকে একাধিক শিক্ষক ভ্রমণে যাচ্ছেন এমন বিষয়টি তিনি জানেন না। তবে, বৈধভাবে ছুটি না নিয়ে ভ্রমণে যাওয়া শিক্ষকদের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন বলে জানান তিনি।

ঝিনাইদহ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আনন্দ মোহন কিশোর সাহা বলেন, একই সময়ে এক বিদ্যালয় থেকে একাধিক শিক্ষক ভ্রমণে যাওয়া আইন সম্মত নহে। এটা অপরাধ। বিষয়টি আপনাদের মাধ্যমে জানতে পারলাম। খোঁজ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন বলে জানান তিনি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App