×

সারাদেশ

প্রশাসনের ঢিলেঢালা অভিযানে বন্ধ হচ্ছে না যমুনা নদীর ড্রেজার বাণিজ্য

Icon

সুরেশ চন্দ্র রায়, মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২৪ জানুয়ারি ২০২৪, ০৪:০৯ পিএম

প্রশাসনের ঢিলেঢালা অভিযানে বন্ধ হচ্ছে না যমুনা নদীর ড্রেজার বাণিজ্য

ছবি: ভোরের কাগজ

মানিকগঞ্জের শিবালয়ের পদ্মা ও যমুনা নদীতে চলমান অবৈধ ড্রেজারের বিরুদ্ধে মাঝেমধ্যে প্রশাসনের পক্ষ থেকে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে কিছু পাইপ ভাঙচুর করা হলেও এ বিষয়ে তেমন কোন মামলা ও জেল জরিমানা না হওয়ায় ড্রেজার বাণিজ্য স্থায়ীভাবে বন্ধ হচ্ছে না বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

সরেজমিনে তেওতা থেকে জাফরগঞ্জ ঘুরে দেখা গেছে, যমুনার চরের বিভিন্ন জায়গায় প্রায় পনেরোটি অনুমোদনবিহীন ড্রেজার বসিয়ে বালু ব্যবসায়ীরা অবাধে বিভিন্ন জায়গায় বালু বিক্রি করে হাতিয়ে নিচ্ছেন লক্ষ লক্ষ টাকা।

তেওতা ইউনিয়নের যমুনা পাড়ের বাসিন্দারা জানান, আব্দুল হালিম, বিশ্বজিৎ দাস ও তেওতা ইউনিয়নের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল কাদেরের নেতৃত্বে আব্দুল হালিমের বোন জামাই জালাল উদ্দিন, কাদের চেয়ারম্যানের চাচাতো ভাই মুক্তার হোসেন, করিম চেয়ারম্যানের ছেলে রাকা ও ছোট ভাই নান্নু, জাহাঙ্গীর মেম্বার, আবুল হোসেন, সামছুল আলম সাম, মনির হোসেন, আরিফ, মানিক, পান্নু, বাসুদেব, ফরহাদ, হাফিজুল, আব্দুল মোমিন, জাকির হোসেন, তারা মিয়া, মাহমুদ ও হারুন মিয়া দক্ষিণ তেওতা, গান্ধাইল, মালুচি, ঝিকুটিয়া ও জাফরগঞ্জ এলাকার যমুনা নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে ড্রেজার বসিয়ে প্রতিদিন লক্ষাধিক ঘনফুট বালু উত্তোলন করে বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করছেন। এতে সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব আর ভাগ্য বিড়ম্বনায় পড়ছেন নদী পাড়ের অসহায় মানুষ। মাঝেমধ্যে নদীর পাড়ে প্রশাসনের দেখা মিললেও ড্রেজার ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে নেয়া হয়না কোন কার্যকর পদক্ষেপ। 

নদীপাড়ের মানুষ আক্ষেপের সুরে বলেন, যমুনার এই ড্রেজার বাণিজ্য নিয়ে বিভিন্ন স্থানীয় ও জাতীয় পত্রিকায় একাধিকবার লেখালেখি হলেও প্রশাসন নীরব। এটি কি প্রশাসনের অক্ষমতা নাকি ড্রেজার ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে কোন সুবিধা গ্রহণের ফলে নীরব ভূমিকায় প্রশাসন?

স্থানীয়রা আরো বলেন, এখন নদী পাড়ের মানুষের শেষ ভরসা মানিকগঞ্জ-১ আসনের নবনির্বাচিত এমপি সালাউদ্দিন মাহমুদ জাহিদ। চরাঞ্চলবাসির বিশ্বাস, এমপি জাহিদের হস্তক্ষেপে সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হবে যমুনার বালু উত্তোলন। এতে রক্ষা হবে সরকারি সম্পত্তি আর নদী ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা পাবে নদী পাড়ের মানুষ। তিনি মানিকগঞ্জ-১ আসনের জনগণের ভাগ্যবিধাতা হিসেবে এমপি হয়ে এসেছেন। 

জাফরগঞ্জের বাসিন্দা নজরুল মোল্লা জানান, প্রশাসন যদি একান্তভাবে চায় নদী থেকে অবৈধভাবে কেউ বালু উত্তোলন করতে পারবে না সেটি অবশ্যই সম্ভব। কিন্তু রহস্যজনক কারণে এ ড্রেজার বাণিজ্য কোনভাবেই বন্ধ হচ্ছে না। স্থানীয় সচেতন মহল, জনপ্রতিনিধি এবং প্রশাসনের একাগ্র ইচ্ছা থাকলে যমুনা নদীর এ ড্রেজার বাণিজ্য অবশ্যই স্থায়ীভাবে বন্ধ করা সম্ভব। কিন্তু জনপ্রতিনিধিরাই যদি এ ব্যবসার সাথে যুক্ত থাকেন তবে এটি অত্যন্ত দুঃখজনক।

ড্রেজার ব্যবসায়ী মুক্তার হোসেন জানান, তার মেশিন দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল। অল্প কিছুদিন যাবত কাজ শুরু করেছেন। আগামী দু’একদিনের মধ্যেই এ বিষয়ে সবার সাথে দেখা করবেন। তিনি অনুরোধের সুরে জানান, এ বিষয়ে নিউজ করার প্রয়োজন নেই। কাদের চেয়ারম্যান এবং হালিম আপনার সাথে এ বিষয়ে কথা বলবেন।

অপর ড্রেজার মালিক মো. জালাল উদ্দিন মোবাইল ফোনে জানান, প্রশাসনের সাথে কথা বলা ছাড়া কি নদীতে ১০-১২টি ড্রেজার চালানো সম্ভব! একটা সময় কাদের চেয়ারম্যান এবং হালিম ড্রেজার ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে প্রশাসনের সাথে কথা বলতো। কিন্তু এখন নিজেদের মধ্যে একতা না থাকায় বেশিরভাগ ড্রেজার মালিক আলাদা আলাদাভাবে প্রশাসনের সাথে কথা বলে। আপনি প্রশাসনের কার সাথে এবং কবে কি কথা বলেছেন প্রশ্নে তিনি জানান, মোবাইল ফোনে এতো কথা বলা যাবে না। হালিম এবং কাদের চেয়ারম্যান যা করেন তিনিও তাই করবেন বলে মোবাইল ফোন কেটে দেন।

শিবালয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. বেলাল হোসেন দৈনিক ভোরের কাগজকে জানান, প্রতিনিয়তই নদীতে মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হচ্ছে। কিন্তু স্থায়ীভাবে এটি বন্ধ করা যাচ্ছে না। আগামী আইনশৃঙ্খলা সভায় মাননীয় সাংসদের উপস্থিতি এ বিষয়ে একটি কার্যকর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। নদী রক্ষায় পানি উন্নয়ন বোর্ডেরও একটি বিশেষ দায়িত্ব রয়েছে। সুতরাং সবার সার্বিক সহায়তায় অতিদ্রুত নদীর ড্রেজার বাণিজ্য স্থায়ীভাবে বন্ধ করা হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App