×

সারাদেশ

ঝিকরগাছায় ফুলপ্রেমীদের মিলনমেলা

Icon

আতাউর রহমান জসি, ঝিকরগাছা (যশোর) থেকে

প্রকাশ: ২০ জানুয়ারি ২০২৪, ০৩:২৬ পিএম

ঝিকরগাছায় ফুলপ্রেমীদের মিলনমেলা

ফুলপ্রেমীদের মিলন মেলায় তারুণ্যের উচ্ছ্বাস-আনন্দ দমাতে পারেনি পৌষের হাঁড়-কাঁপানো শীত! দিনভর সূর্যের দেখা মেলেনি। কনকনে ঠান্ডা। সেই সাথে হিমেল হাওয়ায় যেন জবুথবু অবস্থায় প্রাণিকুল। তারপরও প্রেমিকযুগল কিংবা নবদম্পতিদের পদচারণায় মুখর পুষ্পকানন গদখালি-পানিসারা। এখানে সব বয়সী ও শ্রেণি-পেশার ভ্রমণ পিপাসু পুষ্প-প্রেমীরা।

প্রায় প্রতিদিন শতশত ফুলপ্রেমী দর্শনার্থীরা দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসছেন ফুলের রাজধানী এই গদখালি-পানিসারায়। সপ্তাহের সরকারি ছুটির দিন শুক্র ও শনিবারে উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। চাকরিজীবীসহ সব বয়সী ও শ্রেণি-পেশার মানুষ সুস্থ বিনোদনের আশায় পরিবার-পরিজন নিয়ে ছুটে আসছেন এখানে।

বলছিলাম, ফুলের রাজধানী খ্যাত যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালি-পানিসারার ফুল রাজ্যের কথা। এখানে দিগন্ত জোড়া মাঠজুড়ে শুধু ফুল আর ফুল। অনিন্দ্য সৌন্দর্যের পরসা মেলে ধরেছে দেশি-বিদেশি নানা জাতের নয়াভিরাম সব ফুল। এ যেন ফুলেদের অপার সৌন্দর্যের প্রতিযোগিতা। দিগন্ত জোড়া ক্ষেত ভরা শত গোলাপ। চন্দ্রমল্লিকা, জারবেরা, গ্লাডিওলাস, ডালিয়া, রজনিগন্ধা, গাদা, কসমস, জিপসি, নীলকন্ঠ, মাধবিলতা, কাননদোলা, সূর্যমুখী, হাসনেহেনা আরো কত কি!। 

ঘন কুয়াশায় সূর্যের দেখা না মিললেও সূর্যমুখী হাঁসছে। সুদূর নেদারল্যান্ডস থেকে আগত অতিথি ফুল ‘টিউলিপ’ যেন রঙের খেলায় মেতেছে। দর্শনার্থীদের মন রাঙাতে জিনিয়া, মাধবিলতা পিটুনিয়া, ডালিয়া, গ্লাডিওলাস, নীলকন্ঠ, সূর্যমুখী, হারমিনা, নয়নতারা ফুলেরা যেন হাতছানি দিয়ে ডাকছে ফুলপ্রেমীদের! ফুলপ্রেমী পর্যটকেরাও তাই বাহারি রঙের ফুলেদের অপরূপ সৌন্দর্যে মুগ্ধ-বিমোহিত! ফুলপ্রেমীদের এই মিলন মেলা ঘিরে পানিসারা-হাড়িয়া এলাকায় গড়ে উঠেছে একাধিক মিনিপার্ক। 

ফুল বাগিচায় মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্যে সাজিয়ে তোলা হয়েছে আলোকসজ্জিত একাধিক পার্ক। রয়েছে দৃষ্টিনন্দন পানির ফোয়ারা। শিশুদের বিনোদনের জন্য রয়েছে বৈদ্যুতিক মোটরচালিত ঝুলন্ত ক্যাবল কার, সাম্পান, নাগরদোলা, বৈদ্যুতিক মিনি রেলগাড়ি ইত্যাদি। ক্ষেত থেকে সদ্যতোলা তরতাজা ফুলের অসংখ্য ফুলের দোকান, হোটেল-রেস্টুরেন্ট, কফিশপ, গাড়ি পার্কিংসহ নানাবিধ সুযোগ-সুবিধা। রয়েছে পর্যাপ্ত সামাজিক ও প্রশাসনিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা। 

শনিবার সরেজমিনে গিয়ে পানিসারা গ্রামের বাসিন্দা ‘ফুলচাষের জনক’ খ্যাত শের আলী সর্দার, ফুল চাষের অন্যতম উদ্যোক্তা ইসমাইল হোসেন, ‘মা মাটি নার্সারির উদ্যোক্তা মিলন হোসেন, ফুলচাষি ইউসুফ আলী, মোমিনুর রহমান আশাবাদ ব্যক্ত করে জানিয়েছেন এবছর উৎপাদিত ফুলের কাঙ্ক্ষিত বাজারদর পাবেন। ফুল বেচাকেনা শুরু হয়েছে। তবে, এখন কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে বাজার জমে উঠিনি। মহামারি কোভিড-১৯ এর ধাক্কা সামলিয়ে উঠতে পারলেও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা ও দেশের অভ্যন্তরে রাজনৈতিক অস্থিরতা, হরতাল-অবরোধের কারণে ফুলের বাজারে ধস নামে।

বর্তমান স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে ফলের বাজার চাঙ্গা হতে চলেছে। ফলে, আশার আলো দেখছেন এখানকার হাজারো ফুলচাষি, মধ্যস্বত্বভোগী ও ব্যবসায়ীরা। অত্রাঞ্চালের প্রায় ৫ হাজার কৃষক পরিবার ফুল চাষের সাথে পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। ফুরের চাষ করে  এই এলাকার অনেক প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র কৃষক পরিবার এখন অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী। 

এদিকে পাইকারি ও খুচরা ফুলের বাজার ঘুরে দেখা যায়, ফুলের দোকানগুলোতে তরুণ-তরুনী ও স্কুলকলেজ পড়ুয়া ছেলে মেয়েরা বেশি ভিড় জমাচ্ছে। বিক্রেতারাও বেশ খুশি। তারা জানালেন, প্রতিটি ফুলের মাথার ব্যান্ড বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে দেড় দু’শ টাকা। গোলাপ, জারবেরা, চন্দ্রমল্লিকা, ৮রঙের গ্লাডিওলাস, রজনিগন্ধা, বিক্রি হচ্ছে প্রতিপিচ ১০/১২টাকায়। প্রকারবেদে প্রতি হাজার গাদাফুল বিক্রি হচ্ছে সাড়ে চার’শ থেকে আট’শ টাকা। জিপসি প্রতিআটি দেড়শ টাকা। ক্যাকটাস ইনকা, পিটুনিয়া, ভর্মিনা, গার্জিনীয়া, ডানটাস, গমপিনা, পট্টুলিকা শেলোশিয়া, মালভিয়া, জুনিয়া, ফলাক্স, স্পাইডার, এন্টিনাম, নীলপারুল, অপরাজিতা, ন্যালথনা, এ্যারোমেটিক জুঁই ও নীল মনিলতা প্রভৃতি বিক্রি হচ্ছে ৫/৬ ও ৭/৮টাকা প্রতিপিচ জানালেন ফুল বিক্রেতা কৃষ্ণচন্দ্রপুর গ্রামের মোমিনুর, পানিসারার রাসেল হোসেন, আ. জলিল, শান্ত। ভারতীয় কসমস নামের বাহারি ফুল দর্শনার্থীদের দৃষ্টি আকর্ষণ  করেছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App