×

সারাদেশ

চট্টগ্রামে অভিযান চালিয়ে ৯০০ কেজি ভেজাল মসলা জব্দ

Icon

চট্টগ্রাম অফিস

প্রকাশ: ১৮ জানুয়ারি ২০২৪, ১১:৫৯ পিএম

চট্টগ্রামে অভিযান চালিয়ে ৯০০ কেজি ভেজাল মসলা জব্দ

ছবি: ভোরের কাগজ

চট্টগ্রামে কাঠের গুড়ো, ভুষির সঙ্গে নানা ধরণের রং মিশিয়ে হলুদ-মরিচের মশলা তৈরি হচ্ছে। আর সেই ভেজাল-ক্ষতিকর মশলাই সাধারণ ক্রেতাদের খাওয়াচ্ছে একশ্রেণীর অতিমুনাফলোভী ব্যবসায়ী। এতে করে পেটের পীড়াসহ বিভিন্ন ধরণের দীর্ঘমেয়াদী রোগে ভুগছেন অনেকেই, যা নিজেদের অজান্তেই ঘটে যাচ্ছে কিন্তু কেউই তা বুঝতে পারছেন না। এভাবে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ছেন সাধারণ নাগরিকরা। 

মাঝে মধ্যে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে এমন দূষিত ভেজাল মশলা আটকসহ কিছু জরিমানা করে থাকেন ভ্রমমাণ আদালত। তারপরও থেমে নেই এসব ভেজাল কর্মকাণ্ড। সারা বছরই চলতে থাকে এমন ‘বিষযুক্ত মশলা’ তৈরির ব্যবসা।

চট্টগ্রামে ব্যবসায়ীদের যেসব বড় বড় সংগঠন রয়েছে তারাও কিন্তু এসব ভেজাল ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কখনোই কোন ব্যবস্থা নেয়নি। এমনকি সামান্যতম বিবৃতি পর্যন্ত দেয়নি সে সংগঠনগুলো। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগে তাহলে এসব অসাধু ব্যবসায়ীদেরকে নীরবে সমর্থন করে যাচ্ছে ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো ?

এদিকে বৃহস্পতিবার (১৮ জানুয়ারি) নগরীর চাক্তাইয়ের মিয়াখান নগর ব্রিজের পাশের একটি কারখানায় অভিযান পরিচালনা করেন ভ্রমমাণ আদালত। অভিযানে মানবদেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর রঙ, কয়লা, কাঠের গুড়া এবং নিম্নমানের ভুষি মিশ্রিত ৯শ’ কেজি ভেজাল  মসলা জব্দ করা হয়। একইসঙ্গে ওই ভেজাল কারখানার মালিককে গ্রেপ্তার করে ১ বছর বিনাশ্রম কারাদন্ড ও ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। 

এ বিষয়ে অভিযানে নেতৃত্ব দেয়া জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট প্রতীক দত্ত জানিয়েছেন, কাঠের গুড়ার সঙ্গে লাল রং মিশিয়ে কথিত মরিচের গুড়া তৈরি করে তা বাজারে বিক্রি হচ্ছিলো। পাশাপাশি   ভুষির সঙ্গে বাসন্তী রং মিশিয়ে তৈরি করা হচ্ছিল হলুদের গুড়া। নগরীর চাক্তাই এলাকার এ কারখানাটিতে দীর্ঘদিন ধরেই ভেজাল ও ক্ষতিকারক উপকরণ দিয়েই মসলা তৈরি হচ্ছিল। 

তিনি বলেন, ‘ আমরা অভিযানে গিয়ে ভেজাল মসলা তৈরির বিষয়টি হাতেনাতে প্রমাণ পেয়েছি। এসব মসলা মানবদেহের জন্য খুবি ক্ষতিকর। আমরা এ কারখানায় অভিযান চালিয়ে ৯শ’ কেজি মসলা জব্দ করেছি। পরে প্রতিষ্ঠানের মালিকসহ চার শ্রমিককে আটক করা হয়। অভিযুক্ত মালিক বাচ্চু মিয়াকে ১ লাখ টাকা জরিমানার পাশাপাশি ১ বছর বিনাশ্রম কারাদন্ড দেয়া হয়েছে। পরে জব্দ করা ভেজাল মসলা ধ্বংস করা হয়।’ ভ্রমমাণ আদালতের এই অভিযানের সময় জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট প্রতীক দত্তকে সহায়তা করেন কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এস এম ওবায়দুল হকসহ পুলিশের একটি টীম।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. সুশান্ত বড়ুয়া ভোরের কাগজকে বলেন, এমনিতেই অতিরিক্ত মসলা মানবদেহের জন্য ক্ষতিকারক। ভেজাল মসলা আরো ক্ষতিকর। এ মসলা খেতে থাকলে পাকস্থলীর প্রদাহসহ নানা রোগ হতে পারে। এছাড়া হজমে, কিডনি ও এলার্জি সমস্যা হতে পারে। এছাড়া খাবারে এমন মসলা ব্যাবহারের দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব হিসেবে ক্যান্সার হয়।

এ প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, ‘প্রতিবছরই পবিত্র রমজান মাসে অধিক মুনাফা লাভের আশায় বেশ কিছু অসাধু ব্যবসায়ী চট্টগ্রামে এরূপ ভেজাল মসলা উৎপাদন ও বাজারজাত করে। এ বছর রমজানে চট্টগ্রামে যেন এ রকম ভেজাল খাদ্যদ্রব্য তৈরি ও বাজারজাত না হয় সে বিষয়ে প্রশাসনের কঠোর নজরদারি অব্যাহত থাকবে।’

এ বিষয়ে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহ-সভাপতি এসএম নাজের হোসাইন বলেন, ভেজালে ভরপুর আমাদের বাজার। বিশেষ করে রমজান মাস আসলে ভেজাল চক্র আরো কয়েকগুণ সক্রিয় হয়ে উঠে। মরিচ, হলুদের গুঁড়ার সঙ্গে কাঠের গুড়ো, রং ও ক্ষতিকর রাসায়নিক মেশানোর অভিযোগ দীর্ঘদিনের। কিন্তু ভেজাল রোধে প্রশাসনের উদ্যোগ দৃশ্যমান নয়। খাদ্যে ভেজাল রোধে প্রধানমন্ত্রী ‘জিরো টলারেন্স’ ঘোষণা করে ভেজাল বিরোধী অভিযান জোরদার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন। শুধু রমজানের শুরুতে নয়, বছরব্যাপী এ ভেজাল বিরোধী অভিযান চালাতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App