×

সারাদেশ

নৌকা না হারানোর ব্যতিক্রমী উদ্যোগ ইউএনওর

Icon

গাইবান্ধা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৬ জানুয়ারি ২০২৪, ০২:০০ পিএম

নৌকা না হারানোর ব্যতিক্রমী উদ্যোগ ইউএনওর

গাইবান্ধার চরাঞ্চলে এবারের ভোট ব্যবস্থাপনা ছিল অন্যরকম। কুয়াশার রাতে নদীপথে নৌকা যেন না হারিয়ে যায় সেজন্য ব্যতিক্রমী উদ্যোগ ছিল উপজেলা প্রশাসনের। নদীপথের ৮ কিলোমিটার অংশে ৪টি বাঁকে স্থাপিত ছিল ১২০টি খুঁটি। প্রতিটি খুঁটিতে ছিল বিশেষ স্টিকার সম্বলিত নম্বর। যা অন্ধকারে টর্চের আলোয় তা জ্বলজ্বল করে। ৪টি বাঁকের প্রতিটিতে হ্যান্ডমাইকসহ ছিলেন পাঁচ-ছয়জনের দল। তারা বাঁকে দাঁড়িয়ে নৌকাকে সঠিক নির্দেশনা দিয়েছেন। ফলে এবার দ্রুত সময়ের মধ্যে দুর্গম চরের ফলাফল পাওয়া সম্ভব হয়েছে।

সাঘাটা ও ফুলছড়ি উপজেলার ১৭টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত গাইবান্ধা-৫ আসন। ফুলছড়ি উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের ৪টিই ব্রহ্মপুত্রের ওপারে অবস্থিত। ইউনিয়নগুলো হচ্ছে এরেন্ডাবাড়ি, ফুলছড়ি, ফজলুপুর ও গজারিয়া (আংশিক)। উপজেলায় মোট ভোটকেন্দ্র ৫৭টি। এরমধ্যে ৪টি ইউনিয়নের ২৯টি কেন্দ্র দুর্গম চরাঞ্চলে। মুল ভূখণ্ড থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন এরেন্ডাবাড়ি, ফুলছড়ি ও ফজলুপুর ইউনিয়নের ২৭টি ও গজারিয়া ইউনিয়নের ২টি কেন্দ্র চরে অবস্থিত। 

কালিরবাজার ফুলছড়ি উপজেলা হেড কোয়াটার থেকে এরেন্ডাবাড়ি ইউনিয়নের দূরত্ব প্রায় ১৮ কিলোমিটার। এরমধ্যে নদীপথে ৮ কিলোমিটার। এসব কেন্দ্রের মধ্যে ঘুরে ঘুরে যেতে হয়। পানি কম থাকায় কিছু কেন্দ্রে যেতে ৪-৫ ঘণ্টা লেগে যায়। এরেন্ডাবাড়ি, কিশামতধলি, চরহরিচণ্ডি, পাগলার চর, ডাকাতিয়ার চর ও ফেন্ডশীফ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে পৌঁছাতে ৫ঘন্টা পর্যন্ত সময় লাগে।

পূর্ববর্তী সকল নির্বাচনে ভোট গ্রহণ শেষে ফেরার পথে নিশানা ভুলে যেতেন মাঝিরা। রাতের অন্ধকারে দীর্ঘ নৌপথ পাড়ি দিতে অনেক সময় নৌকাই হারিয়ে যেত। ফলে এসব কেন্দ্র থেকে ভোট গ্রহণ কর্মকর্তারা ভোররাত চারটা-পাঁচটার আগে কখনো উপজেলা হেড কোয়াটারে পৌঁছাতে পারেননি। গত ৪ জানুয়ারির নির্বাচনে একটি কেন্দ্র পরদিন ভোর সাড়ে ৬টায় উপজেলা সদরে পোঁছায়।

এ বাস্তবতায় এবারের নির্বাচনে এই প্রথম ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছিলেন ফুলছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবু সাঈদ। উপজেলার বালাসিঘাট থেকে এরেন্ডাবাড়ির নদীপথে চারটি বাঁক। এসব বাঁকে মোট ১২০টি খুঁটি স্থাপন করা হয়। প্রত্যেক খুঁটিতে বিশেষ স্টিকার সম্বলিত নম্বর দেয়া হয়। যা অন্ধকারে টর্চের আলোয়  জ্বলজ্বল করে। ৪টি বাঁকে ৪টি নৌকার প্রতিটিতে হ্যান্ডমাইকসহ ছিলেন পাঁচ-ছয়জনের দল। তারা বাঁকে দাঁড়িয়ে নৌকাকে সঠিক নির্দেশনা দিয়েছেন। এ ছাড়া ওই চারটি বাঁকে আটটি বড় চার্জার লাইট খুঁটিতে বেঁধে দেয়া হয়। এ কাজে স্থানীয় দুটি বেসরকারি সংস্থা সহায়তা করে। সূত্রটি জানায়, ওই চারটি ইউনিয়নে মোট ভোটার ৫৬ হাজার ১২ জন। ভোট পড়েছে ২০ হাজার ৬৯৩টি। অর্থাৎ ৩৬ দশমিক ৯৪ ভাগ ভোট পড়ে।

উপজেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, গোপনীয়তা রক্ষা করে চর এলাকায় ১১৩ জন স্থানীয় ব্যক্তিকে সন্ধ্যার পর থেকে বিভিন্ন পয়েন্টে রাখা হয়। কারণ ভোটের বাক্স নিয়ে ফেরার পথে কেউ হামলার প্রস্তুতি নিলে তা প্রশাসনকে জানাতে পারে। এবারের নির্বাচনে ব্যতিক্রমী উদ্যোগের কারণে গাইবান্ধা-৫ আসনের ফুলছড়িতে নবাগত ইউএনও প্রশংসিত হয়েছেন। এ ছাড়া কোন অভিযোগও পাওয়া যায়নি।

এসব বিষয়ে ফুলছড়ির ইউএনও আবু সাঈদ বলেন, নির্বাচনের ৩ সপ্তাহ আগে যোগদানের পর প্রথমেই চর এলাকার কেন্দ্রগুলোর সমস্যা চিহ্নিত করি। তারপরই সমস্যা সমাধানে নৌকার মাঝি, থানা পুলিশ, র‌্যাব,  এনজিও, সাংবাদিক, ইউপি চেয়ারম্যান, ইউপি সচিব ও গ্রাম পুলিশের সঙ্গে সভা করে এই উদ্যোগ  নেয়া হয়। সকলের আন্তরিকতা না থাকলে এটা সম্ভব হতো না।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App