×

সারাদেশ

তীব্র শীতে নাকাল লালমনিরহাট

'শিকনাগি গেইনো বাহে এ্যকান কম্বল দেও'

Icon

লালমনিরহাট প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৫ জানুয়ারি ২০২৪, ০৫:২৭ পিএম

'শিকনাগি গেইনো বাহে এ্যকান কম্বল দেও'

ছবি: ভোরের কাগজ

এতো ঠান্ডা শিকনাগি গেইনো বাহে একান কম্বলের ব্যবস্থা করি দেও। ঠান্ডা সহতে না পেয়ে জরো সরো হয়ে কাঁপা কাঁপা স্বরে কথা গুলো বললেন, লালমনিরহাটের আদিতমারীর দক্ষিণ বত্রিশ হাজারী গ্রামের ৮০উর্দ্ধো আবলা বেওয়া। 

সীমান্তবর্তী জেলা লালমনিরহাট। উত্তরের জেলা হওয়ায় হিমালয়ের হিমেল হাওয়ায় জেলার পাঁচটি উপজেলা শীত তীব্র আকার ধারণ করেছে। কনকনে ঠান্ডায় কাঁপছে এ জেলার খেটে খাওয়া নিম্ন আয়ের দিন মজুর সহ ছিন্নমূল সাধারণ মানুষ। 

গত কয়েক দিন থেকে হিমেল হাওয়ার কারণে শীতের তীব্রতা বাড়ায় জন-জীবন স্থবির হয়ে পড়েছে। এতে সাধারণ খেটে খাওয়া নিম্ন আয়ের মানুষের কষ্টের সীমা নেই। এর মধ্যে নেই তীব্র এ শীত-ঠান্ডা নিবারণের লেপ, কম্বলসহ গরম কাপড়।  

এদিকে পেটের ক্ষুধা কি আর খবর রাখে এ বৈরি পরিস্থিতির। হাঁড় ভাঙা শীতে কি কষ্ট তা বুঝতে পারেন খেটে খাওয়া নিম্ন আয়ের দিন মজুর ও সাধারণ মানুষ। ঠান্ডার তীব্রতায় টিকতে না পেরে কিছুটা স্বস্তির জন্য আগুন জ্বালিয়ে চেষ্টা করছেন শীতে কষ্ট পাওয়া অসহায় দিনমজুরেরা। 

সোমবার (১৫ জানুয়ারি) লালমনিরহাটের কয়েকটি উপজেলা ঘুরে দেখা গেল এমন সব চিত্র। সরেজমিন ঘুরে আদিতমারীর ভেটেশ্বর ও দক্ষিণ বত্রিশ হাজারী গ্রামের কয়েকজন খেটে খাওয়া মানুষের সঙ্গে আলোচনা হলে তারা বলেন, 'ঠান্ডাত হামরা কামোত যাবার পাই না। কামোত না গেইলে খামো কি।' 

আগুন তাপানো খেটে খাওয়া দিন মজুর আচিয়া বেওয়া ও সমচেল মিয়া ভোরের কাগজকে তীব্র ঠান্ডায় কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বলেন, 'হামার এলাকাত এ্যলাও হামার গুলার কোনো খোঁজ খবর নেয় কায়ো নেয় নাই। হামরা সাধারণ গরীব মানুষ, বড় কষ্টে আছি। শীতোত কামোত যাবার পাইনা হামাক গুলাক এ্যালাও কায়ও কম্বল দেয় নাই। ঠান্ডা সবার না পায়া হামরাগুলা আগুন তাপাইতেছি । অনেক গরীর মানুষ কামোত যাবার পায় নাই এই ঠান্ডার কারণে। যদি হামার কম্বলের ব্যবস্থা করি দেনেন হয় তা হইলে হামার গুলাক আর আইতোত ঠান্ডা নাগিল না হয়।'

এদিগে ঠান্ডা জনিত রোগে অনেক মানুষ ভীর করছেন হাসপাতালে। এ বিষয়ে হাসপালের কর্তব্যরত চিকিৎসকের সঙ্গে আলোচনা হলে তিনি বলেন, ঠান্ডা জনিত রোগীর সংখ্যা বেরেছে অনেক। এদের মধ্যে বাচ্চা ও বৃদ্ধদের সংখ্যা বেশী। তারা হাসপাতালে এসে চিকিৎসা নিয়ে চলে যাচ্ছেন। বিশেষ করে ঠান্ডা জনিত রোগ নিউমোনিয়া, সর্দি,কাশি কোল্ড ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন বেশী। চিকিৎসকরা এসব রোগীদের ঘরে থেকে গরম পানি ব্যবহার ও শরীর গরম রাখার পরামর্শ দেন। 

অন্যদিকে, লালমনিরহাটে টানা ৪ থেকে ৫ দিন সূর্যের দেখা মেলেনি ফলে তাপমাত্রা কম থাকায় বোরো বীজ তলা সাদা রং ধারণ করেছে। এছাড়া সবজীর মধ্যে বেগুন, টমেটো,গাজর, পেয়াজ,রসুন আলুর মধ্যে বিভিন্ন রোগ দেখা দিয়েছে। এ বিষয়গুলো কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের তদারকি না থাকায় চিন্তিত স্থানীয় কৃষকরা।

এদিকে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা বিশেষ করে যারা মাঠ পর্যায়ে দায়িত্বরতদের সঙ্গে কৃষকদের উঠান বৈঠক বা পরামর্শ না থাকায় চরম হতাশাগ্রস্ত স্থানীয় কৃষকরা। এমতাবস্থায় জরুরী ভিত্তিতে জেলার প্রত্যেকটি উপজেলায় মাঠ পর্যায়ে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের জোর তদারকি বাড়ানো ও কৃষকদের পরামর্শ প্রদানে দ্রুত তৎপরতার জোর আহ্বান জানান কৃষকরা। অন্যথায় ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে রবি শস্য সহ-বোরো মৌসুমের চাষাবাদ। 














সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App