×

সারাদেশ

গাজীপুর জেলার শ্রেষ্ঠ জয়িতা পারুল আক্তার

Icon

কালিয়াকৈর (গাজীপুর) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১১ জানুয়ারি ২০২৪, ০৩:৫৫ পিএম

গাজীপুর জেলার শ্রেষ্ঠ জয়িতা পারুল আক্তার

গাজীপুর জেলা প্রশাসকের হাত থেকে সম্মাননা স্মারক গ্রহণ করছেন জেলার শ্রেষ্ঠ জয়িতা পারুল আক্তার। ছবি: ভোরের কাগজ

আন্তর্জাতিক নারী প্রতিরোধ দিবস ও বেগম রোকেয়া দিবস উপলক্ষে মহিলা ও শিশু বিষয়ক অধিদপ্তর এবং  মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে সারা দেশ ব্যাপী পরিচালিত "জয়িতা অন্বেষণে বাংলাদেশ " শীর্ষক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে  “সফল জননী” ক্যাটাগরিতে গাজীপুর জেলার শ্রেষ্ঠ জয়িতা নির্বাচিত হয়েছেন কালিয়াকৈরের মোসা. পারুল আক্তার ওরফে ফরিদা বেগম পারুল। 

গাজীপুরের জেলা প্রশাসক আবুল ফাতে মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম তার হাতে সম্মাননা স্মারক তুলে দেন। 

জয়িতা পারুল গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার লতিফপুর গ্রামের ফজল শিকদারের কন্যা এবং মো. শহিদুল্লাহর স্ত্রী। তিন মেয়ে ও এক ছেলের জননী পারুল আক্তার। তিনি জানান, জীবনের নানা চড়াই উৎরাই পেরিয়ে  ছেলে-মেয়েদের বড় করেছেন। সন্তানদের পড়াশোনা করাতে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন। প্রত্যন্ত অঞ্চল স্বামীর গ্রামের বাড়িতে সন্তানদের নিয়ে বসবাস করতেন; সেখানকার যাতায়াত ব্যবস্থা ভালো ছিল না। স্বামী শহিদুল্লাহ বাংলাদেশ সেনা বাহিনীতে কর্মরত থাকায় বেশি সময় দিতে পারতেন না পরিবারকে। অতি বৃদ্ধ শ্বশুড় আর চার সন্তানের সকল দায়িত্ব তাকেই পালন করতে হয়েছে। সকলের জন্য বাজার করা, খাবার যোগান ও ছেলে মেয়েদের স্কুল কলেজে নিয়ে যাওয়াটা ছিলো কষ্টসাধ্য ব্যাপার। 

তবু সন্তানের ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে সংগ্রাম করেছেন জীবনের সাথে। এখন এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হলেও তখন বাজার, হাই স্কুল ও কলেজ দূরে ছিল। যখন বড় মেয়ে প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে তখন পায়ে হেঁটে ও ইঞ্জিন চালিত নৌকা করে পরীক্ষা কেন্দ্রে নিয়ে গিয়েছেন। এ ছাড়া বিভিন্ন বেসরকারি বৃত্তি পরীক্ষায় মেয়েদেরকে অংশগ্রহণ করাতেন।  তিনি জানান, প্রথম তিন সন্তান মেয়ে ছিল। অনেকে অনেক কথা বলত কারোর কথা মনে না করে মেয়েদেরকে নিয়ে সামনে যেতাম। কোন কাজের হাল ছাড়িনি। তিন মেয়ের পর যখন ছেলে হয় তখনও আমি মেয়েদের নিয়ে ভাবতাম। কখনো ছেলে মেয়েদেরকে আলাদা চোখে দেখিনি। একটি কথা ভাবতাম আমি যদিও এসএসসি পাস করিনি কিন্তু ছেলে মেয়েকে অবশ্যই উচ্চ শিক্ষিত করে গড়ে তুলবো। আর এজন্য যখন মেয়েরা কলেজ ভার্সিটিতে ভর্তি হয় তখন গ্রামের সংসার ছেড়ে লতিফপুর বাড়িতে চলে আসেন। 

সন্তানদের মধ্যে বড় মেয়ে শামিমা আক্তার একাউন্টিং এ মাস্টার্স শেষ করে ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের ভাইস প্রিন্সিপাল, মেজো মেয়ে শারমিন আক্তার রাষ্ট্র বিজ্ঞানে মাস্টার্স শেষ করে গাজীপুর জজকোর্টের আইনজীবী, ছোট মেয়ে শাবনাজ আক্তার পদার্থ বিজ্ঞানে মাস্টার্স শেষ করে ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের ও লেভেলের ইংরেজি লেকচারার এবং একমাত্র ছেলে ফয়সাল আহমেদ ফাহাদ সিভিল ইঞ্জিনিয়ার। 

এক সময় ছেলেমেয়েদের পড়ালেখা চালিয়ে সংসারের খরচ চালানো কষ্ট হতো। এগুলো এখন আর তাকে কষ্ট দেয় না। আজ তিনি গর্বিত ও আনন্দিত। তিনি সফল এবং জেলার শ্রেষ্ঠ জয়িতা নির্বাচিত হয়েছেন। ছেলে মেয়েরা মানুষের মত মানুষ হয়েছে। তার একটাই চাওয়া তার সন্তানেরা যেন দেশ ও মানুষের কল্যাণে কাজ করে এবং অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ায়।



সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App