×

সারাদেশ

চট্টগ্রামের বেশিরভাগ সড়কেরই বেহাল দশা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২১ আগস্ট ২০২০, ০৯:৪৯ এএম

চট্টগ্রামের বেশিরভাগ সড়কেরই বেহাল দশা

বৃষ্টি আর জোয়ারের কারণে চট্টগ্রাম নগরীর প্রধান সড়কজুড়ে ব্যাপক খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। ঝুঁকি নিয়ে চলছে ভারী যানবাহন। মুরাদপুর থেকে বহদ্দারহাট পর্যন্ত রাস্তায় বড় বড় গর্তে কাদাপানি জমে যানবাহন চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। ছবি: ভোরের কাগজ।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন-চসিক প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেই নগরীর খানাখন্দে ভরা বেহাল সড়ক সংস্কারের কথা বলেছিলেন খোরশেদ আলম সুজন। নগরীর লাইফলাইন খ্যাত পোর্ট কানেক্টিং রোড, মাঝিরঘাট সড়কসহ বেশ কয়েকটি সড়ক দ্রুততম সময়ের মধ্যে সংস্কার করে জনদুর্ভোগ নিরসনের উদ্যোগও নিয়েছেন তিনি। কিন্তু এর বাইরে চট্টগ্রামের বেশির ভাগ সড়কেরই বেহাল অবস্থা। বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হয়ে পানি জমে থাকে প্রতিটি সড়কে। দেখলে মনে হবে যেন গ্রামীণ কোনো মেঠো পথ। সেখানেই চলাচল করছে সব ধরনের যান।

সরেজমিন দেখা যায়, বৃষ্টি আর জোয়ারের কারণে চট্টগ্রাম নগরীর প্রধান প্রধান সড়কজুড়ে ব্যাপক খানাখন্দ। কোথাও বড় বড় গর্ত। নগরীর এক্সেস রোড, পোর্ট কানেকটিং সড়ক, বহদ্দারহাট, ঈদগাহ, চকবাজারসহ প্রতিটি সড়কে খানাখন্দকের সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া মুরাদপুর থেকে বহদ্দারহাট অংশের রাস্তায় বড় বড় গর্ত। তাতে কাদাপানি জমে যানবাহন চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। নগরীর পাহাড়তলী, অলঙ্কার, সাগরিকা, বন্দর, ফকির হাট, নিউমার্কেট, আন্দরকিল্লা, চকবজার, কালামিয়া বাজারসহ প্রায় সব এলাকায় সড়কের বেহাল দশা। চট্টগ্রাম ওয়াসা পাইপ লাইন স্থাপনের জন্য নগরীর অলিগলিতে ব্যাপক খোঁড়াখুঁড়ি করে। এসব সড়কও পুরোপুরি সংস্কার না হওয়ায় জনদুর্ভোগ বেড়েছে। করোনার কারণে টানা প্রায় তিন মাসের অঘোষিত লকডাউনে সড়কের উন্নয়ন ও সংস্কার কাজ বন্ধ ছিল। এখন বর্ষায় বৃষ্টিতে ব্যাহত হচ্ছে সংস্কার কাজ। ভাঙাচোরা সড়ক আর বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়ে পানি জমে থাকায় চলাফেরা করতে চরম বেকায়দায় পড়তে হচ্ছে মানুষজনকে। ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে গাড়ি চালকদেরও। গর্তের কারণে বারবার গাড়ি নষ্ট হচ্ছে। ঘটছে ছোট বড় দুর্ঘটনা। যানজটে আটকা পড়ে কর্মজীবীদের নিত্য দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

এদিকে নগরীর লাইফ লাইন বলে পরিচিত পোর্ট কানেক্টিং সড়কের বেহাল দশায় কয়েক লাখ মানুষকে প্রতিদিন নরক যন্ত্রণা পোহাতে হচ্ছে। বন্দরের আমদানি-রপ্তানির পণ্য পরিবহনের অন্যতম সড়ক হওয়ায় ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। চার বছরেও এই সড়কের উন্নয়ন কাজ শেষ হয়নি। তবে চসিক প্রশাসক জানান, নভেম্বরের মধ্যে সড়কটির কাজ শেষ করা হবে। বন্দরের মালামাল পরিবহনের অতি গুরুত্বপূর্ণ নগরীর সদরঘাট থেকে বারিক বিল্ডিং মোড় পর্যন্ত চট্টগ্রামের স্ট্যান্ড রোডটির অবস্থাও করুণ। বাংলাবাজার, মাঝিরঘাট, সদরঘাট ও মাদারবাড়ীর হাজার হাজার ব্যবসায়ী ও বসবাসরত জনগণকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। অপরদিকে আরাকান সড়কের বিশাল একটা অংশের একপাশ বন্ধ থাকায় যান চলাচলের ভোগান্তি চরম পর্যায়ে আছে টানা কয়েক বছর। যে পাশে যান চলে, সেই পাশে আছে চোরা গর্তও। সেরকম একটি গর্তে পড়ে গত ১৭ আগস্ট একটি কাভার্ড ভ্যান আছড়ে পড়ে সিএনসি অটোরিকশার ওপর। সিএনজি অটোরিকশা চালক এবং তার যাত্রী গুরুতর আহত হয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জীবন-মৃত্যুর সন্ধীক্ষণে রয়েছেন। অক্সিজেন-কুয়াইশ সংযোগ সড়কও বছরের পর বছর ব্যবহার অনুপযোগী। ওই এলাকার বাসিন্দা সিরাজুল ইসলাম বলেন, অক্সিজেন-কুয়াইশ সড়ক ও আরাকান সড়ক হয়ে কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র, রাউজান তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র, জীবতলী ক্যান্টনমেন্ট, নৌবাহিনীর শহীদ মোয়াজ্জম ঘাঁটির যানবাহন ছাড়াও দৈনিক হাজার হাজার গাড়ি যাতায়াত করে। এ ছাড়া কালুরঘাট শিল্পাঞ্চলের যানবাহন তো আছেই। এই সড়কটির অবস্থা খুবই খারাপ।

চসিক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন বলেন, ‘বন্দরের সঙ্গে সংযুক্ত পোর্ট কানেক্টিং সড়ক হলো দেশের লাইফলাইন। এই সড়ক কয়েক বছর ধরে ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে আছে। তাই এটিকে অগ্রাধিকার দিয়েছি। এর পাশাপাশি মাঝিরঘাট সড়কের কাজও আমি পরিদর্শন করেছি। অন্যান্য এলাকায় যাব। নগরীর ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক দ্রুত সংস্কারের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সেবা সংস্থাগুলোর কাজ শেষ হওয়া মাত্রই আমরা আমাদের কাজ শুরু করব। ভোগান্তি তখন আর থাকবে না।’

সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী লে. কর্নেল সোহেল আহমদ বলেন, চলমান বর্ষায় কত কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তার হিসাব এখনো করা হয়নি। করোনার কারণে প্রায় তিন মাস এবং বৃষ্টির কারণে সংস্কার কাজ করতে না পারায় সড়কে ক্ষতি হয়েছে বেশি। যেসব সড়কে বড় বড় গর্ত হয়েছে সেখানে জরুরি সংস্কার কাজ চলছে। পুরোদমে সংস্কার কাজ শুরু করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত সব সড়ক ঠিক করা হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App