×

সারাদেশ

কালাইয়ের মোল্লাপাড়া পাখির অভয়ারণ্য

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৭ আগস্ট ২০২০, ০১:১৬ পিএম

কালাইয়ের মোল্লাপাড়া পাখির অভয়ারণ্য

ছবি: প্রতিনিধি

কালাই উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার উত্তরে মাত্রাই ইউপির মাত্রই মোল্লাপাড়া গ্রামের বিভিন্ন বাঁশ বাগানে নানান প্রজাতির পাখিদের অভয়ারণ্য গড়ে উঠেছে।  সম্প্রতি সেখানে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, পাখিদের কলরবে মুখরিত চারপাশ। কিছু বড় আকারের পাখি উড়ে বেড়াচ্ছে। মোল্লাপাড়ার আশপাশে পুকুরপাড়ের বাঁশ বাগানে প্রতি বছর এ সময় গ্রামের বিভিন্ন বাঁশ বাগানে পাখিরা এসে বাসা বাঁধে।

গোটা পাড়াজুড়ে বাঁশ বাগান ও ছোট-বড় প্রায় ১০টি রেইনটি গাছ, ২০টি আম গাছ, ৬টি খেঁজুর গাছ, ৭টি নিম গাছ, ৫টি শিশু গাছ, ১০টি কাঁঠাল গাছ ও ৪টি তাল গাছ রয়েছে। বিলুপ্তপ্রায় কালো পানকৌড়ি, সাদা বক, জ্যাঠা বক, আম বক, কানি বক, শামখৈল ও রাতচোরাসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখির উপস্থিতিতে মোল্লাপাড়া এখন অপরূপ সুন্দর দৃশ্যের একটি গ্রাম।

জানা যায়, সকালে পাখিগুলো উড়ে আহারের সন্ধানে আশপাশে খোলা মাঠের ধানক্ষেতে ছুটে বেড়ায়। তবে রাতচোরা পাখি সন্ধ্যায় আহারের সন্ধানে বের হয়। যারা সকালে বের হয় তারা আহার শেষে সন্ধ্যা নামার আগেই বাসায় ফেরে। আর যারা সন্ধ্যায় বের হয় তারা সকাল হবার আগে আহার শেষে ফিরে আসে নিজ আবাসস্থলে।

মোল্লাপাড়ায় প্রায় ৬ বছর ধরে পাখিরা বসবাস শুরু করেছে। ফি বছর বেড়েই চলেছে পাখির সংখ্যা। সকাল-সন্ধ্যায় ঝাঁকে ঝাঁকে পাখির কোলাহল মুগ্ধতা ছড়ায় মানুষের মনে। ওই পাড়ার বিভিন্ন বাড়ির বাঁশঝাড়, গাছ-গাছালি যেন পাখিদের এক একটি স্বর্গরাজ্য ও অভয়াশ্রম। চারপাশে শুধু পাখিদের কোলাহল ও কিচিরমিচির শব্দ। পানকৌড়ি, সাদা বক, রাতচোরা পাখিরা বাঁশের বা বিভিন্ন গাছের চ‚ড়ায় বসে ডানা ঝাপটায়। পাখির বাসার ভেতর থেকে ছানাগুলোর শব্দ কানে আসে। তাদের খাওয়াতে ব্যস্ত মা-পাখি। কোনো পাখি বাসা বাঁধছে আপন মনে। কোনোটি ডিমে তা দিচ্ছে।

চোখে না দেখলে বোঝা যাবে না পাখির সঙ্গে মানুষের কতটা নিবিড় বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছে। পাড়ার মানুষের কাছে পাখিগুলো অতিথি, বন্ধু ও সন্তানের মতো। তাই মানুষের সঙ্গে মিতালি তৈরি করে নিরাপদে ও খুব কাছাকাছি বসবাস করে তারা। মোল্লাপাড়ার বাসিন্দাদের পাখিদের প্রতি ভালোবাসা তুলনাহীন। তাদের দাবি, সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা পেলে মোল্লাপাড়া গুরুত্বপূর্ণ পাখির অভয়ারণ্য হিসেবে গড়ে উঠতে পারে।

পাখিদের অভয়ারণ্য প্রসঙ্গে মোল্লাপাড়ার মোফাজ্জল হোসেন ও মনছুর রহমান জানান, ২০১৪ সালের দিকে বাঁশ বাগানে ও বিভিন্ন ছোট-বড় গাছে এসে পাখিরা আশ্রয় নেয়। বেশ কয়েক মাস থেকে সংখ্যায় বেশি করে ফের ওরা চলে যায়। পরের বছর সংখ্যায় কম নিয়ে আবার আসে। আবার চলে যায়। পাখিগুলো দেখতে খুবই ভালো লাগে। দিন-রাত কিচিরমিচির শব্দ করলেও তাতে এলাকাবাসীর কোনো সমস্যা হয় না। পাখিগুলো দেখার জন্য আশপাশের এলাকা থেকে প্রতিদিনই ভিড় করেন অসংখ্য পাখিপ্রেমীরা।

রবিউল ইসলাম ও আব্দুল মান্নান জানান, পাখিরা আশপাশের বাড়ির আম, রেইনট্রি, নিম, কাঁঠাল, লিচুসহ বিভিন্ন গাছের অনেক নতুন ডাল এবং বাঁশের মাথা ভেঙে ফেলছে। এদের বিষ্ঠার দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে চারদিকে। তারপরও পাড়ার সবাই পাখিদের ভালোবাসে। ঝড়-বৃষ্টি হলেই যুবকরা ছুটে যায় বাঁশ বাগানে। পাখির ছানা নিচে পড়ে থাকতে দেখলেই যুবকরা নীড়ে তুলে দিয়ে আসে।

মাত্রাই ইউপি চেয়ারম্যান আ ন ম শওকত হাবিব তালুকদার লজিক বলেন, সরকারি উদ্যোগে পাখি সুরক্ষা ও সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। এই পাড়াকে পাখিদের অভয়াশ্রম হিসেবে গড়ে তুলতে উদ্যোগ নেয়া উচিত। এতে করে পরিবেশের ওপর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।

কালাই উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আবু তালেব বলেন, উপজেলার মোল্লাপাড়ার পাখি যেন কেউ শিকার করতে না পারে সেবিষয়ে আমরা সচেতনতামূলক কাজ করছি। পাখির সুরক্ষা বিষয়ে প্রাণিসম্পদ অফিস দেখভাল করছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App