×

সারাদেশ

যমুনার ভাঙনে বিলীন হচ্ছে ঘরবাড়ি-স্থাপনা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৯ জুন ২০২০, ১০:৫০ এএম

যমুনার ভাঙনে বিলীন হচ্ছে ঘরবাড়ি-স্থাপনা

বর্ষা এলেই ভাঙন আতঙ্কে থাকে নদীতীরের অসহায় মানুষ। পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হয়েছে যমুনার তীব্র ভাঙন। এতে হুমকির মুখে রয়েছে ঘরবাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও রাস্তাঘাটসহ বিভিন্ন স্থাপনা। ছবি -ভোরের কাগজ

বর্ষা মৌসুম আসার আগেই পানি বাড়তে শুরু করেছে। আর পানি বাড়তে না বাড়তেই শুরু হয়েছে যমুনা নদীর তীব্র ভাঙন। পানি বৃদ্ধির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে এই ভাঙন। কোনোভাবেই যেন শান্ত হচ্ছে না রাক্ষুসে যমুনা। একযোগে এই ভাঙন দেখা দিয়েছে যমুনার পশ্চিম পাড়ে সিরাজগঞ্জ জেলার সদর ও চৌহালী উপজেলা এবং পূর্ব পাড়ে টাঙ্গাইল জেলার ভ‚ঞাপুর উপজেলায়। কয়েক দিনের ভাঙনের ফলে এসব স্থানে বাঁধে ধস নেমেছে, যমুনাগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে ঘরবাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও রাস্তাঘাটসহ বিভিন্ন স্থাপনা। ভাঙন আতঙ্কে রাত কাটছে এসব এলাকার কয়েকটি গ্রামের মানুষের। হেলাল উদ্দিন, সিরাজগঞ্জ থেকে জানান, বর্ষা মৌসুম আসার আগেই সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীর ভাঙন শুরু হয়েছে। পানির প্রবল স্রোতে সদর উপজেলার শিমলা স্পারের মাটির তৈরি স্যাংকে ধস নামে । এতে প্রায় ২৫ মিটার মাটির তৈরি বাঁধ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। তীব্র ভাঙনের ফলে যমুনাগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে চৌহালীর ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাটসহ বিভিন্ন স্থাপনা। ভাঙন আতঙ্কে রয়েছে ৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ খাস পুকুরিয়া ও বাগুটিয়া ইউনিয়নের অন্তত পাঁচটি গ্রাম।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বর্ষা মৌসুম শুরুর আগেই দ্রুত বাড়ছে যমুনা নদীর পানি। পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে সদর উপজেলার শিমলা স্পারের মাটির তৈরি স্যাংকে ধস, চৌহালী উপজেলা সদরের জনতা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে খাস পুকুরিয়া হয়ে বাঘুটিয়া ইউনিয়নের চরবিনুনাই-ভ‚তের মোড় পর্যন্ত প্রায় সাড়ে চার কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যমুনা তীরবর্তী অঞ্চলে ভাঙন দেখা দিয়েছে।

গত তিন সপ্তাহের ব্যবধানে দক্ষিণ খাসপুকুরিয়া, মিটুয়ানী, রেহাই পুকুরিয়া ও চরবিনানই এলাকার প্রায় শতাধিক ঘরবাড়ি, সাতটি তাঁত কারখানা, তিনটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান এবং প্রায় দেড় কিলোমিটার পাকা সড়ক নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙনরোধে এখন পর্যন্ত কোনো কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়ায় এলাকাবাসীর মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। খাসপুকুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ সরকার বলেন, যমুনার ভাঙনে তার ইউনিয়নের খাস পুকুরিয়া ও মেটুয়ানি গ্রামের তীরবর্তী এলাকার অন্তত ২০-২৫টি বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙন আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটছে এ অঞ্চলের মানুষের। বাঘুটিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল কাহ্হার সিদ্দিকী বলেন, গত এক মাসের ব্যবধানে বাঘুটিয়া ইউনিয়নের রেহাই পুকুরিয়া, চর নাকালিয়া, বিনানুই ও চর সলিমাবাদ গ্রামের তীরবর্তী অঞ্চলের শতাধিক ঘরবাড়ি এবং মেটুয়ানি ও দেওয়ানগঞ্জ বাজারসহ তাঁত কারখানা এবং তিনটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এছাড়াও এ অঞ্চলের মানুষের উপজেলা সদরে যাতায়াতের প্রধান পাকা সড়কটির প্রায় দেড় কিলোমিটার ধসে গেছে। জরুরি ভিত্তিতে ভাঙনরোধে কার্যকরী ব্যবস্থা না নিলে কয়েক হাজার ঘরবাড়ি, রাস্তা, কালভার্ট- সেতুসহ বহু শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ভাঙনের কবলে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

চৌহালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) দেওয়ান মওদুদ আহমেদ জানান, নদী ভাঙনরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিস্তারিত জানানো হয়েছে।

টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী (চৌহালী উপজেলার দায়িত্বে) সিরাজুল ইসলাম জানান, ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করা হয়েছে। ওই এলাকায় স্থায়ী নদী তীর সংরক্ষণ বাঁধ নির্মাণে প্রকল্প অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। প্রকল্প পাস হলেই দ্রুত বাস্তবায়নের মাধ্যমে ভাঙনরোধ করা সম্ভব হবে।

সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী এ কে এম রফিকুল ইসলাম জানান, ২০০০-০১ অর্থবছরে ভাঙন এড়াতে যমুনার গতিপথ পরিবর্তনের লক্ষ্যে শিমলা এলাকায় এ স্পার বাঁধটি নির্মাণ করা হয়। এরপর বেশ কয়েকবার স্পারটি সংস্কারও করা হয়েছে। আকস্মিক পানি বৃদ্ধির কারণে বাঁধটি ধসে গেছে, আমরা দ্রুততম সময়ের মধ্যে সংস্কারের চেষ্টা করছি।

কে এস রহমান শফি, টাঙ্গাইল থেকে জানান, টাঙ্গাইলের ভ‚ঞাপুরে যমুনা নদীর পানি বাড়তে না বাড়তেই শুরু হয়েছে ভাঙন। পানি বৃদ্ধির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ভাঙন। কোনোভাবেই যেন শান্ত হচ্ছে না রাক্ষুসে যমুনা। রক্ষা পাচ্ছে না যমুনা পূর্ব পাড়ের হাজারো মানুষ। উপজেলার গোবিন্দাসী ইউনিয়নের খানুরবাড়ি, কষ্টাপাড়া, ভালকুটিয়া, চিতুলিয়াপাড়াসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের মানুষ ভাঙন আতঙ্কে রাত কাটাচ্ছেন। যেন তাদের দেখার কেউ নেই।

জানা যায়, যমুনা নদী গোবিন্দাসী থেকে ৪-৫ কিলোমিটার দূরে ছিল। দীর্ঘদিন ধরে ভাঙনের ফলে ঘরবাড়ি, ফসলি জমি নদীতে বিলীন হয়ে যাওয়ায় সর্বস্বান্ত হচ্ছে ভাঙনকবলিত এলাকার মানুষ। নদী থেকে অত্যধুনিক ড্রেজার মেশিনের মাধ্যমে বালু উত্তোলনের ফলে এই ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে। গত কয়েক দিন ধরে ভাঙনের মুখে আছে বেশ কয়েকটি মসজিদ, প্রাথমিক বিদ্যালয়, উচ্চ বিদ্যালয়, মন্দিরসহ পাকা-আধা পাকা ঘরবাড়ি। স্থানীয়দের অভিযোগ, বিভিন্ন সময়ে জনপ্রতিনিধিরা ভাঙন রোধে বাঁধ দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও তা বাস্তবে রূপ নিচ্ছে না। সরকারিভাবেও নেয়া হচ্ছে না কোনো ব্যবস্থা। এখনো দেখা মেলেনি কোনো জনপ্রতিনিধির। নেয়া হচ্ছে না ভাঙন রোধে কোনো ব্যবস্থা। স্থানীয়রা জানান, তাদের এলাকায় প্রভাবশালী কোনো জনপ্রতিনিধি না থাকায় এমন দুর্ভোগে থাকতে হচ্ছে তাদের। মূলত, টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশীলদের দায়িত্বহীনতার কারণেই নদীতে বিলীন হওয়ার মুখে এসব বাড়িঘর। নদীভাঙনকবলিত এলাকাবাসীর দাবি, অতি দ্রুত নদী ভাঙনরোধে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করা হোক।

টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সিরাজুল ইসলাম বলেন, ভাঙনকবলিত এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের জন্য একটি প্রকল্প পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পেলে কাজ শুরু হবে।

উল্লেখ্য, গত বন্যায় খানুরবাড়ী অংশে কিছু জিও ব্যাগ ফেলা হলেও তা কাজে লাগেনি। এ বছরও কিছু জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে যা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই সামান্য।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App