×

সারাদেশ

করোনা মোকাবিলায় জয়পুরহাটের সাফল্য

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৫ জুন ২০২০, ১১:২৩ এএম

করোনা মোকাবিলায় জয়পুরহাটের সাফল্য

ফাইল ছবি

করোনা ভাইরাস শনাক্ত, স্বতন্ত্র আইসোলেশন প্রতিষ্ঠা, সরকারি হাসপাতালগুলোতে সাধারণ রোগীদের নির্বিঘ্নে চিকিৎসা ও সুস্থতার দিক দিয়ে জয়পুরহাট জেলার সাফল্য অনুসরণীয়। জেলায় করোনা ভাইরাসের স্যাম্পল সংগ্রহ ও পরীক্ষার পরিমাণ পাশের জেলার থেকে অনেক বেশি এবং সুস্থতার হারও সন্তোষজনক।

তবে এ পর্যন্ত করোনায় কারো মৃত্যু হয়নি। চিকিৎসা ব্যবস্থায় সন্তুষ্ট করোনায় সুস্থ হওয়া রোগীরাও। করোনা মোকাবিলায় জয়পুরহাট একটি সফল জেলা হিসেবে অনেকে মনে করছেন। এ সাফল্যের পেছনে কাজ করেছে সমস্যার গভীরে গিয়ে রাজনীতিবিদ, সিভিল প্রশাসন, পুলিশ বিভাগ ও স্বাস্থ্য বিভাগের সমন্বিত টিমওয়ার্ক।

জানা গেছে, জয়পুরহাটের পাঁচ উপজেলায় প্রায় সাড়ে নয় লাখ লোকের বসবাস। বুধবার (৩ জুন) পর্যন্ত জেলায় স্যাম্পল কালেকশন হয়েছে পাঁচ হাজার ৫৪৮টি। পরীক্ষা করা হয়েছে পাঁচ হাজার ৭৭টি। তাদের মধ্যে নেগেটিভ ফলাফল চার হাজার ৮৬১ জনের। করোনা আক্রান্ত রোগী মোট ১৯৯ জন। দুই শিশুসহ সুস্থ হয়েছেন ৭৮ জন।

স্যাম্পল টেস্টে ও অন্যান্য জেলা থেকে জয়পুরহাট অনেক এগিয়ে। পার্শ্ববর্তী বগুড়ার ১২টি উপজেলায় লোকসংখ্যা ৩০ লাখ। স্যাম্পল কালেকশন হয়েছে প্রায় সাড়ে চার হাজার। গাইবান্ধার সাত উপজেলায় লোক সংখ্যা ২৫ লাখ। স্যাম্পল কালেকশন হয়েছে প্রায় ৯০০ জনের। সুস্থতার হার অন্য জেলাগুলোর তুলনায় জয়পুরহাটে বেশি।

জয়পুরহাটে করোনা মোকাবিলার পদ্ধতি ভিন্ন। জেলার কোনো হাসপাতালে নয়, আক্কেলপুর উপজেলার গোপীনাথপুর ইউনিয়নে একটি আইসোলেশন সেন্টার করা হয়েছে। সেখানে আটজন ডাক্তার সার্বক্ষণিক চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন সার্বক্ষণিকভাবে সেখানে মনিটরিং করছেন। চিকিৎসাসেবা দেয়ার ক্ষেত্রে কোনো ঘাটতি বা অসুবিধা যেন না থাকে, সেজন্য কঠোর মনিটরিং করছেন তিনি। ফলে চিকিৎসার পাশাপাশি গরম পানির ভাপ নেয়া, ইন্টারনেট সংযোগ দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বাইরের যোগাযোগ ও বিনোদনসহ রোগীদের মানসিক শক্তি জোগানোর ব্যবস্থাও তিনি করেছেন। এতে করে রোগীদের মনোবল চাঙ্গা থাকছে।

এ বিষয়ে জয়পুরহাট জেলার বিএমএ সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিবার পরিকল্পনার উপপরিচালক ডা. জোবায়ের গালিব বলেন, জাতীয় সংসদেন হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপনের আন্তরিকতা, কঠোর মনিটরিং ও প্রচেষ্টায় জেলা প্রশাসন, সিভিল সার্জন-স্বাস্থ্যকর্মী, পুলিশ ও জনপ্রতিনিধিদের সমন্বিত টিমওয়ার্কে আমরা করোনা মোকাবিলা করছি। অন্যান্য জেলা থেকে আমরা স্যাম্পল সংগ্রহ, পরীক্ষা ও সুস্থতার দিক থেকে অনেক বেশি এগিয়ে আছি। করোনা উপসর্গ যাদের আছে, তাদের দ্রুত অন্যদের থেকে পৃথক করে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, বর্তমানে আমাদের টেস্টে বেশিরভাগ রোগী নেগেটিভ ফল আসছে। আশা করছি, এই কার্যক্রমের মাধ্যমে আমরা সামনের দিনগুলোতে আরো উন্নতি করব।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন ভোরের কাগজকে বলেন, পরম মমতাময়ী রাজনীতিবিদ শেখ হাসিনা আমার নেতা ও শিক্ষক। আমি তার কাছ থেকে মানুষের প্রতি দায়বদ্ধতার দীক্ষা নিয়েছি। জনপ্রতিনিধি হিসেবে আমি আমার নির্বাচক মণ্ডলী ও শুভাকাক্সক্ষীদের কাছে দায়বদ্ধ। সেই দায়বদ্ধতা থেকেই আমি কাজ করছি। ভালো ফলাফল পাচ্ছি। জয়পুরহাট মডেল বেশ কার্যকর ভূমিকা পালন করছে।

করোনা উপসর্গ নিয়ে ২৫ এপ্রিল আইসোলেশন সেন্টারে ভর্তি হন কালাই উপজেলার পাঁচগ্রাম এলাকার গৃহিণী মারুফা খাতুন। ১৬ দিন চিকিৎসা শেষে ১০ মে সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে বাড়িতে ফিরে যান তিনি। গত বুধবার ভোরের কাগজকে মারুফা জানান, জ¦র-সর্দি-কাশি নিয়ে করোনা টেস্ট করিয়েছি। ফলাফল পজিটিভ আসায় আইসোলেশন সেন্টারে ভর্তি হয়েছি। সেখানে ১৬ দিন চিকিৎসা নিয়েছি। ডাক্তার, নার্সসহ হাসপাতালের সবাই খুব ভালোভাবেই আমার চিকিৎসা করেছেন। খাবারের মানও ভালো ছিল। ঠিকমতো ওষুধ দিত। হুইপ সাহেব নিয়মিত খোঁজখবর রাখতেন। সবার আন্তরিক প্রচেষ্টায় আমি সুস্থ হয়েছি। এখন বাড়িতেই আছি, ভালো আছি।

হুইপ স্বপনের প্রচেষ্টায় জেলার টিটিসিতে একটি প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন সেন্টার চালু হয়েছে। কালাই সরকারি মহিলা কলেজ ও পাঁচবিবি মহিলা কলেজকে কোয়ারেন্টাইনের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। হোম কোয়ারেন্টাইন না মানা এরকম শতাধিক ব্যক্তিকে কোয়ারেন্টাইনে রেখে টেস্ট করানো হয়েছে। তাদের মধ্যে ১৬ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। তারা সবাই অন্য জেলা থেকে এসেছেন।

আইসোলেশন সেন্টার ও কোয়ারেন্টাইন সেন্টারের সিংহভাগ অর্থ ব্যয় করছেন হুইপ নিজেই। ১ মে থেকে আইসোলেশন সেন্টারের শুধুমাত্র রোগীদের খাবার স্বাস্থ্য বিভাগ এবং কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে খাবার চাল দিচ্ছেন জেলা প্রশাসন। জেলার সকল সরকারি হাসপাতালে স্বাভাবিক চিকিৎসা কার্যক্রম চলছে। ৩২টি ইউনিয়নের মধ্যে ২৪টিতে হেলথ ক্যাম্প করে চিকিৎসাসেবা দেয়া হচ্ছে। গুরুত্বপূর্ণ সড়কসহ প্রত্যন্ত অঞ্চলের জনবহুল স্থানগুলোতে ব্লিচিং পাউডার মিশ্রিত পানি ছিটানো হয়েছে। চিকিৎসকদের পর্যাপ্ত পিপিই, সাড়ে তিন হাজার কেএন-৯৫ মাস্ক, গাউন ও ফেস সিল্ড সরবরাহ করেছেন তিনি। এছাড়া ইউপি সদস্য ও গ্রাম পুলিশদেরও সুরক্ষার সামগ্রী দিয়েছেন।

স্বতন্ত্র আইসোলেশন সেন্টার করায় ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মীদের ঝুঁকির মাত্রা অনেক কমেছে। করোনা মোকাবিলায় স্বতন্ত্র আইসোলেশন সেন্টার ও স্যাম্পল কালেকশনের মডেল সব জেলায় চালু করলে স্বাস্থ্যকর্মীদের ঝুঁঁকির মাত্রা ৮০ ভাগ কমবে। এ জেলায় কর্মরত ৯৪ জন ডাক্তারের মধ্যে আটজন আইসোলেশন সেন্টারে ও ১০ জন স্যাম্পল কালেকশনের কাজ করছেন। বাকি চিকিৎসকদের করোনা রোগী সেবা দিতে হচ্ছে না, ফলে তাদের ঝুঁকির মাত্রাও কম।

এর আগে গত ২২ মার্চ জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বগুড়া ও জয়পুরহাটে কর্মকর্তাদের সঙ্গে সভা করেন। সভা থেকে বগুড়ার মোহাম্মদ আলী হাসপাতাল ও জয়পুরহাটে আইএইচটিকে বিশেষায়িত আইসোলেশন কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন। মোহাম্মদ আলী হাসপাতাল প্রতিষ্ঠিত কিন্তু জয়পুরহাটের আইএইচটি একটি নবনির্মত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। সেখানে নেই তেমন কোনো সুবিধা। হুইপ স্বপন দ্রুত এটিকে উপযোগী করে তোলেন। যদিও ভেন্টিলেশন, আইসিইউ বা আধুনিক চিকিৎসা যন্ত্রপাতি নেই এখানে কিন্তু ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা কর্মী, অক্সিমিটার, অক্সিজেন সিলিন্ডার ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি রাখা হয়েছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App