×

সারাদেশ

শ্রীপুর থানার গোল ঘরে নির্ধারিত হয় জমির মালিকানা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১২ মার্চ ২০২০, ০৩:১৪ পিএম

শ্রীপুর থানার গোল ঘরে নির্ধারিত হয় জমির মালিকানা

শ্রীপুর থানার গোল ঘর

গাজীপুরের শ্রীপুর থানায় প্রবেশ করতেই চোখে পড়ে গোল ঘর। গোল ঘরের দরজার উপরে লেখা “সার্ভিস ডেলিভারী অফিসার ও কমিউিনিটি পুলিশিং”। মূলত শ্রীপুর উপজেলায় জমি সংক্রান্ত অভিযোগের সিদ্ধান্ত আসে থানার গোল ঘর থেকে। গোল ঘর থেকে যে সিদ্ধান্তই আসবে সে সিদ্ধান্তই অভিযোগকারীকে মেনে নিতে হয়। অন্যথায় তাকে আদালতের শরণাপন্ন হতে হয়। শ্রীপুর উপজেলা ক্রমবর্ধমান শিল্পাঞ্চল হওয়ায় এ অঞ্চলের জায়গা জমির মূল্য দিন দিন বেড়ে চলেছে। আর অনাকাঙ্খিত ঘটনাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি হচ্ছে জমি জমা সংক্রান্ত। কিন্তু শ্রীপুর থানায় অভিযোগ দায়েরের পর যা ঘটছে তা হল থানার গোল ঘরের শালিস বৈঠক। এ বৈঠকি থেকে যে সিদ্ধান্ত আসে তা-ই কার্যকর হয়, হোক সেটা দলিল দস্তাবেজের পক্ষে বা বিপক্ষে। ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার কাঁশর গ্রামের মৃত আব্দুল বারেকের ছেলে তাইজ উদ্দিন। তিনি জানান, ২০০৩ সনে পার্শ্ববর্তী গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপরে উপজেলার নগরহাওলা গ্রামের (তরমুজপাড়া মোড়) এলাকার আলমের কাছ থেকে সাড়ে ৪৫ শতক জমি ক্রয় করে ভোগদখল করেন। এর কয়েক বছর পর তিনি প্রবাসে চলে যান। প্রবাস থেকে ফিরেও জমিটি ভোগদখল করেন। এক পর্যায়ে বাণিজ্যিকভাবে জমিটি ব্যবহারের উদ্দেশে ওই জমিতে বছর দুয়েক আগে স্থাপনা তৈরী করার উদ্যোগ নেন। ওই সময় জমির মালিকানা দাবী করে তার জমিতে কাজ করতে বাধা দেন স্থানীয় প্রভাবশালী একটি চক্র। এ নিয়ে তিনি থানায় অভিযোগ দেন। তারপর থেকে একের পর এক থানার গোল ঘরে শালিস বৈঠকির আয়োজন করেন থানা পুলিশ। বৈঠকির ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে তাইজ উদ্দিন বলেন, থানা পুলিশের একজন নির্ধারিত লোক রয়েছে শ্রীপুর বাজারে। যিনি জমি জমার কাগজপত্র ভাল বোঝেন বলে পুলিশ দাবি করেন। পুলিশের পক্ষে ওই লোকটি মধ্যস্থথা করেন এবং বাদী বিবাদী দুই পক্ষ তাদের মনোনীত দুইজন লোক রাখেন। শালিস মীমাংসা না হওয়া পর্যন্ত একের পর এক চলে শালিস কখনও কখনও শালিসের দিন তারিখ পরিবর্তন করা হয়। তাইজ উদ্দিন জানান, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে শ্রীপুর থানায় গোল ঘরে সর্বশেষ শালিস বৈঠকি অনুষ্ঠিত হয়। তার জমি সংক্রান্ত সংরক্ষিত দলিল দস্তাবেজ তার মনোনীত লোক ছাড়া শালিস বৈঠকিতে উপস্থিত কেউ সেগুলো পর্যবেক্ষণ করেন না। তার কাগজপত্র না দেখে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার মনোনীত ব্যাক্তি বা পর্যবেক্ষক কেবলমাত্র এক পক্ষের কাগজপত্র দেখে সিদ্ধান্ত দিয়ে দেন। ওই সিদ্ধান্ত মাথায় নিয়েই অভিযোগকারীকে বাড়ি ফিরে যেতে হয়। শ্রীপুর উপজেলার তেলিহাটি ইউনিয়নের উদয়খালী গ্রামের আব্দুল মান্নানের ছেলে কাজল বলেন, সাফির উদ্দিনের কাছ থেকে তিনি ৯ শতক জায়গা কিনেছেন ২০০৪ সনে। কিন্তু এ পর্যন্ত সাফির উদ্দিন জায়গা জমি বুঝিয়ে দিচ্ছেন না। এ নিয়ে থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে অভিযোগ নিয়ে শ্রীপুর থানার গোল ঘরে শালিস বৈঠক বসে। ওই ঘরে আলোচনা করে বিষয়টি শ্রীপুর থানা পুলিশ আমাদের এলাকার আওয়ামী লীগের একজন নেতা পর্যায়ের লোককে মীমাংসা করে দিতে বলেন। এরপর থেকে আর কোনো অগ্রগতি নেই। ভুক্তভোগীরা জানান, জমি সংক্রান্ত অভিযোগ দিলেই পুলিশের কর্তারা থানার গোলঘরে বসে শালিস বৈঠকের কথা বলে। দিনের পর দিন তারিখ ও সময় পেছানোর রুটিন শুরু হয়। পুলিশের নির্ধারিত লোক জমি জমার কাগজপত্র পর্যালোচনা করেন। নিয়মিত রুটিন অনুসারে ওই ব্যাক্তি এসব কাজ করে থাকেন। সালিশ বৈঠকের আগে পুলিশ এবং ওই পর্যবেক্ষকের সাথে অর্থিক লেনদেন করতে না পারলে কাগজপত্র সঠিক থাকলেও নিজের পক্ষে কোনো সিদ্ধান্ত মেলে না। এসব বিষয়ে শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) লিয়াকত আলীর দাবি, গোল ঘরে উভয় পক্ষকে ডেকে এনে জমির কাগজপত্র দেখে আলোচনার ভিত্তিতে জমির প্রকৃত মালিককে মালিকানা বুঝিয়ে দেওয়া হয়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App