×

সারাদেশ

শ্রীনগরে চলছে রমরমা কোচিং বাণিজ্য

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৩ মার্চ ২০২০, ০৫:১৭ পিএম

শ্রীনগরে চলছে রমরমা কোচিং বাণিজ্য
সরকার আইন করে কোচিং নিষিদ্ধ করলেও সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে শ্রীনগর উপজেলা প্রশাসনের নাকের ডগায় চলছে রমরমা কোচিং বাণিজ্য। কিছুতেই যেন কোচিং বানিজ্য বন্ধ হচ্ছে না। এ ধরনের কোচিং বাণিজ্যে এগিয়ে আছে শ্রীনগর সরকারি সুফিয়া এ হাই খান বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রায় শিক্ষকই। সরকারি আইন অমান্য করে উপজেলার প্রাণ কেন্দ্রে অবস্থিত গুরুত্বপূর্ণ এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকেরা কিভাবে কোচিং বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে এ নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। সরেজমিনে দেখাগেছে, ওই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক সানাউল্লাহ হক সানি, আহসান হাবিব, মনোয়ার হোসেন,শফিকুর রহমান, আতিকুর রহমান স্কুলের পাশেই নূরুল আমিনের বিল্ডিংয়ে প্রতি সপ্তাতে তিনদিন প্রায় ৪০/৫০ জন শিক্ষার্থীকে এক সাথে প্রাইভেট পড়িয়ে থাকেন। এদের মধ্যে কোচিং বানিজ্যে সানাউল্লাহ হক সানি ও আহসান হাবিব অন্যতম। এ বিষয়ে তাদের সাথে আলাপ হলে, তারা এমনটাই বুঝানোর চেষ্টা করেন যে, তারা কারও পরোয়া করেননা। সরকারের প্রচলিত আইনে কোচিং সম্পূর্ণ নিষেদ রয়েছে এমন প্রশ্নেনের জবাবে তারা বলেন, কত আইনই তো হয়। কখনও কি কোচিং বন্ধ হয়েছে। এছাড়াও উপজেলার ষোলঘর একে এসকে উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক আনোয়ার হোসেন, আতাউর রহমান, আব্দুর রশিদ, রাজিব হাসান, মো. মহসিন, সাইফুল ও জাহিদসহ অনেক শিক্ষকই কোচিং করাচ্ছে। ভাগ্যকুল হরেন্দ্রলাল স্কুল এন্ড কলেজের তাহিদুল ইসলাম খোরশেদ, উজ্জল তালুকদার, সাঈদ তালুকদার, বিভূতি বসু, সাধন মন্ডল, প্রার্থিব মন্ডল, পিন্টু কুমার দাস, মোকলেছ মোল্লা, তাইজুল ইসলাম, হেলালসহ অনেক শিক্ষকই বিদ্যালয়ের আশ পাশের বাসা বাড়ি ও রাস্তার পাশের দোকানঘর ভাড়া নিয়ে নিয়মিত কোচিং বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে। এ ছারা বাঘড়া স্বরূপচন্দ্র পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক তুষার চক্রবর্ত্তী, নুরুজ্জামান, ফেরদৌস আলমসহ অনেক শিক্ষকই কোচিং করাচ্ছে। অন্যদিকে হিসাব বিজ্ঞান কোচিং সেন্টারের অনিক সাহা, ইউএসএ এফ-২১ দেলোয়ার হোসেন, অগ্রপথিক কোচিংসহ নামে বেনামে প্রায় অর্ধশতাধিক কোচিং সেন্টার গড়ে উঠেছে শুধু শ্রীনগর বাজার ও এর আশপাশে। কোচিং বাণিজ্য বন্ধ করার জন্য সরকারি ভাবে আইন ও নীতিমালা করে বার বার কোচিং বন্ধের ঘোষনা দেওয়া হলেও শ্রীনগরে কোচিং সেন্টার গুলো এখনো বহালতবিয়তে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। লক্ষ্য করা যায়, সকাল, দুপুর ও বিকালে পালাক্রমে চলছে শিক্ষকদের প্রাইভেট পাঠদান। ২০২০ সালের এসএসসি পরীক্ষা চলাকালীন সময়েও সরকারি আইনের তোয়াক্কা না করে শিক্ষকরা দেদারছে কোচিং বাণিজ্য চালিয়ে গেছেন। খোঁজ নিয়ে আরো জানা যায়, হাঁসাড়া কালী কিশোর স্কুল এন্ড কলেজ, বাড়ৈখালী উচ্চ বিদ্যালয়, বেলতলী জিজে উচ্চ বিদ্যালয়, কুকুটিয়া কমলাকান্ত উচ্চ বিদ্যালয়, আলহাজ কাজী ফজলুল হক উচ্চ বিদ্যালয়, বাড়ৈগাঁও ইসলামীয়া স্কুল এন্ড কলেজসহ উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রায় শিক্ষকই এ কোচিং বানিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে। এসময় শিক্ষার্থী আবির, শান্ত, রিয়া, মীম, সুমাইয়াসহ অনেকের সাথে আলাপ হলে তারা বলেন, কি করবো কোচিং না করলে পরীক্ষায় পাস করা দুঃস্কর হয়ে যায়। ক্লাসেতো আর সব কিছু পড়ানো হয়না। আবুল হোসেন, রফিকুল ইসলাম, রোকেয়া বেগম, আতিকুর রহমানসহ কয়েজন অবিভাবক বলেন, বিদ্যালয়ের পড়া লেখার যে মান সে অনুযায়ী অনেকটা বাধ্য হয়েই ছেলে মেয়েদের কোচিংয়ে পড়তে দিতে হচ্ছে। এমনও শিক্ষক রয়েছে তার কাছে প্রাইভেট না পড়লে পরীক্ষায় ভাল নম্বর পাওয়া যায়না। উপজেলার সরকারি ও এমপিও ভুক্ত প্রায় সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোনও না কোনও শিক্ষক কোচিং পড়াচ্ছেন। কোচিং বাণিজ্যকেই তারা প্রধান পেশা হিসেবে নিয়েছেন এমনটাই মনে করছেন সুশিল মহল। এ বিষয়ে একাধিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কাছে জানতে চাইলে তারা কোচিংয়ে পড়ানোর বিষয়টি স্বীকার করেন। আবার কেউ কেউ জানান, আমাদের অজান্তে কিছু শিক্ষক তাদের বাসা বাড়ীতে গোপনে প্রাইভেট পড়িয়ে থাকেন। সে ক্ষেত্রে তাদের কিছুই করার থাকেনা বলেন তারা। কোচিং বাণিজ্যের সাথে জড়িত থাকা প্রায় শিক্ষকই এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি। সরকারি সুফিয়া এ হাই খান বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. নূরে আলমের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি একাধিকবার আমার প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের কোচিং থেকে বিরত থাকার কথা বলা সত্বেও আমার কথার কোনও কর্ণপাত করেননি। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার সুরাইয়া আশ্রাফির কাছে এবিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সরকারের প্রচলিত আইন ও নিতীমালা না মেনে কোন শিক্ষক কোচিং বাণিজ্য করে থাকলে এবং কেউ যদি তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করে, তদন্ত করে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App