×

সারাদেশ

২৮ মৃত ব্যক্তির নামে তোলা হচ্ছে বয়স্ক ভাতা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০৭:২৮ পিএম

২৮ মৃত ব্যক্তির নামে তোলা হচ্ছে বয়স্ক ভাতা

বয়স্ক ভাতা/ প্রতীকী ছবি

মৃত ব্যাক্তিকে কাগজে কলমে জীবিত দেখিয়ে তাদের নামে বছরের পর বছর ভাতা উত্তোলন করা, একই পরিবারে স্বামী-স্ত্রী ভাতা সুবিধা পাওয়া, ভাতা গ্রহিতার কাছ থেকে অর্থ নেয়া এবং অপেক্ষাকৃত কম বয়সি ব্যক্তিকে ভাতার কার্ড দেয়াসহ বয়স্কভাতা বাস্তবায়নের সকল নীতিমালাকে উপেক্ষা করে ঘাটাইল ইউপিতে প্রণয়ন করা হয়েছে এ তালিকা। যাচাই বাছাই ছাড়াই চেয়ারম্যান নিজ স্বার্থকে চরিতার্থ করার জন্য ইউনিয়ন কমিটির কাউকে না জানিয়ে এ তালিকা করে। আর এতে নানা অসঙ্গতির পাশাপাশি রয়েছে কমপক্ষে ২৮ মৃত ব্যক্তির নাম। ফলে চেয়াম্যানের এহেন কর্মকাণ্ড আর সিমাহীন দুর্নীতির কারণে একদিকে সরকারের ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে অপরদিকে প্রকৃত ব্যক্তি বঞ্চিত হচ্ছে ভাতা থেকে।

২ নং ঘাটাইল ইউনিয়নের ২০ টি গ্রামে অনুসন্ধানে এমন ভয়ঙ্কর তথ্য মিলেছে সাংবাদিকের ওপর হামলাকারি সন্ত্রাসি ইউপি চেয়ারম্যান হায়দর আলীর বিরুদ্ধে। উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তার সাক্ষরিত চলতি মাসের ১৮ ফেব্রুয়ারি তারিখের সর্বশেষ চুড়ান্ত তালিকায় ওই ইউনিয়নের মোট বয়স্ক ভাতাভোগির সংখ্যা রয়েছে ৬৩৩ জন। সরেজমিনে দেখা গেছে, ওই তালিকার ২১১ নম্বরে রয়েছে বিরাহিমপুর গ্রামের আজাহেরের নাম। তিনি মারা গেছেন ৯ বছর আগে। ওই গ্রামের নার্গিছ বেওয়ার নাম রয়েছে তালিকার ১৯ নম্বরে। আর তিনি মারা গেছেন দুই বছর আগে। তারা মারা গেলেও তাদের নামে নিয়মিত উঠানো হচ্ছে ভাতার টাকা। কে নিচ্ছেন এ টাকা হিসেব মিলাতে পারছেনা মৃতের স্বজনরা।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মৃত আজাহেরের ছেলে হাফেজ মনির হোসেন বলেন, বাবা মারা যাওয়ার পর ভাতার কার্ড কে নিয়ে গেছে কোথায় আছে আমরা কিছুই জানিনা। তবে জানতে ইচ্ছে করছে বাবার নামে আসা এ টাকা ব্যাংক থেকে তোলেন কে! একই গ্রামের নার্গিছ বেওয়ার বোন খোদেজা বলেন, আমার বোন মারা যাবার পর খলিল মেম্বার আইয়া কার্ড নিয়া গেছে, তারপর আর কিছুই জানিনা। স্থানিয় ৫ নং ওয়ার্ড মেম্বার খলিল বলেন, আজাহের মারা গেছেন আমি মেম্বার হওয়ার আগেই, ওই কার্ডের বিষয়ে আমি কিছইু জানিনা। তবে নার্গিছ বেওয়ার কার্ড আমার কাছে আছে। সুত্র মতে, কোন ব্যক্তি মারা গেলে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মৃত্যু রেজিষ্টাওে নাম লিপিবদ্ধ করে সমাজসেবা কার্যালয়ে মৃত্যু সনদ দেয়ার পর অগ্রাধিকারভিত্তিতে আরেকটি নাম প্রতিস্থাপিত হবে। কিন্তু চেয়ারম্যান তা না করে কৌশলে ওই মৃত ব্যক্তিকে জীবিত দেখিয়ে বছরের পর বছর ভাতা উত্তোলন করে নিচ্ছে বলে জানা গেছে। এদিকে অর্থের বিনিময়ে কার্ড নিলেও নানা কারনে ভোক্তভোগিরা মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেনা। অপর দিকে তালিকার ৩১৫ নম্বরে রয়েছে শাহপুর গ্রামের আব্দুর রহমানের নাম। তিনি মারা গেছেন ৪ বছর আগে।

একই গ্রামের ২১৯ নম্বও তালিকায় থাকা আমিনা মারা গেছেন পাঁচ বছর আগে। তার ছেলে জুলহাস বলেন, মা যে বয়স্ক ভাতা পেতেন তাই তো জানিনা। শুধু এরাই নয় এদের মতো তালিকায় নাম রয়েছে সখিনা, নবাব আলী, জয়গন বেওয়া, ছাহেরা, আজিরন, জোয়াহের, নবিরন, হামিদ, মান্নান,মাজেদা, উদয় ভানু ও জমিলা খাতুনসহ আরো ২৬ জনের।

ঘাটাইল ইউনিয়নে দীর্ঘদিন কারিগরি প্রশিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করা নাসরিন সুলতানা বলেন, সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের চেয়ারম্যানরা মৃত্যু সনদ প্রদানের মধ্যে দিয়ে তাদের হাত হয়েই ভাতাপ্রাপ্ত মৃত ব্যক্তির কার্ড আমাদের হাতে আসে। প্রতিস্থাপনের তালিকাও ওনারা দিয়ে থাকেন। উপজেলা যুবলীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক জহুরুল ইসলাম জিএম বলেন, এ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হায়দর আলীর বিরুদ্ধে অভিযোগের অন্ত নাই। এ ইউনিয়নে বয়স্কভাতা যাচাই বাছাই কার্যক্রমের আমি উপজেলা চেয়ারম্যানের প্রতিনিধি। অথচ এ কাজে হায়দর আলী আমাকে সাথে রাখে না। ভাতাভোগি কেউ মারা গেলে সেই কার্ড সে নিয়ে নেয় এবং মৃত্যু নিবন্ধন না করে মৃত ব্যক্তিকে জীবিত দেখিয়ে তাদের নামে উঠানো টাকা সে নিজেই ভোগ করে।

জানতে চাইলে ঘাটাইল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হায়দর আলী সাংবাদিকদের জানায়, মৃত ব্যক্তিদের নামে বয়স্কভাতার টাকা উঠানো হয় আমার জানা নাই এবং এ বিষয়টা আমার নলেজে নাই। ঘাটাইল শাখার অগ্রণী ব্যাংক ম্যানেজার মো.শামছুল হক বলেন, যারা স্বশরীরে ভাতা বই নিয়ে উপস্থিত হয় আমরা তাদের ভাতা দিয়ে থাকি। আবার কেউ জীবিত আছে কিন্তু অসুস্থ, সেক্ষেত্রে চেয়ারম্যান প্রত্যয়ন দিলে আমরা সেই লোকের টাকা দিয়ে দেই।

উপজেলা সমাজবেসা কর্মকর্তা আসাদুল ইসলাম বলেন, যতক্ষণ চেয়ারম্যান আমাদের মৃত ব্যক্তির তথ্য ও বই ফেরত না দিবেন, ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারিনা। মৃত্যু সনদ দেন চেয়ারম্যান। আর ভাতা উত্তোলনের ক্ষেত্রে ভাতাপ্রাপ্তদের সনাক্ত করেন সংশ্লিষ্ট ব্যাংক। প্রতিটি ইউনিয়নে সব ধরনের ভাতা কমিটির সভাপতি থাকেন ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অঞ্জন কুমার সরকার বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এতো কিছু করার পরও পরিবর্তন হচ্ছেনা। যদি এমন কিছু হয়ে থাকে তবে তদন্ত করে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App