×

সারাদেশ

বড়পুকুরিয়া খনির এমডি’র বিরুদ্ধে অনিয়ম-দূর্নীতির অভিযোগ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৫ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৮:১৬ পিএম

বড়পুকুরিয়া খনির এমডি’র বিরুদ্ধে অনিয়ম-দূর্নীতির অভিযোগ

ছবি: সংগৃহীত

পার্বতীপুরে বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. সাইফুল ইসলাম অনৈতিক সুবিধা নিয়ে নিজ খেয়াল খুশিমত খনির প্রায় ১ হাজার ১০০ কোটি টাকার স্থায়ী আমানত (এফডিআর) বিভিন্ন ব্যাংকে স্থানান্তরসহ নানা অনিয়ম, দূর্নীতি ও স্বজনপ্রীতিতে জড়িয়ে পড়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। বৈদেশিক মূদ্রায় বকেয়া পরিশোধ করতে না পারায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এক্সএমসি-সিএমসি কনসোর্টিয়াম কয়লা উৎপাদন বন্ধ করার হুমকি দিয়েছে। তবে সে মূর্হুতে ৫০ হাজার ডলার খরচ করে এমডি দলবল নিয়ে বিদেশ ভ্রমন করেছেন। এমডি’র নানা বিতর্কিত কর্মকান্ডের ফলে কয়লা উৎপাদন বন্ধের আশংকা দেখা দিয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, বড়পুকুরিয়া খনির বিভিন্ন ব্যাংকে ১ হাজার ১০০ কোটির টাকার বেশী স্থায়ী আমানত (এফডিআর) রয়েছে। এরমধ্যে দিনাজপুর অঞ্চলে প্রায় সাড়ে পাঁচশত কোটি টাকা, গাইবান্ধা, রংপুর, নীলফামারী ও পঞ্চগড় অঞ্চলে ২৫০-৩০০ কোটি টাকা, ঢাকায় কয়েকটি প্রাইভেট ব্যাংকে প্রায় ১০০ কোটি টাকা এবং বগুড়ায় রয়েছে প্রায় ১২০ কোটি টাকা। ইতিপূর্বে তার নিজ জেলা বগুড়ায় কোন ব্যাংকের শাখায় এফডিআর ছিল না। কোনো কোনো ব্যাংকের শাখায় খুলেছেন একাধিক এফডিআর। পদ্মা ব্যাংকের কাছে ১২ কোটি টাকা দীর্ঘদিন ধরে অনাদায়ী থাকা সত্বেও তিনি ওই ব্যাংকে নতুন করে আরও ২ কোটি টাকা এফডিআর করেছেন। ছয়মাস মেয়াদী এসব স্থায়ী আমানত হিসাব খোলা ও নবায়নের ক্ষেত্রে তিনি একটি নির্দিষ্ট হারে কমিশন গ্রহণ করে থাকেন বলে অভিযোগ আছে। তবে কমিশন গ্রহণের কথা অস্বীকার করে এমডি জানান, উপরমহলের চাপে বিভিন্ন ব্যাংকে এফডিআর স্থানান্তর করা হয়।

সুত্র জানায়, চলতি বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারী খনির ২৪তম বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার ব্যয় দেখানো হয় ৩৮ লাখ ৫ হাজার টাকা। এ থেকে ভুয়া ভাউচারের মাধ্যমে প্রায় ১৫ লাখ টাকা আত্মসাত করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। খনির ১৮২ কর্মকর্তা-কর্মচারীর জন্য ৪ লাখ ৬৫ হাজার ৯২০ টাকার বিছানার চাদর ও ছাতা ক্রয় দেখানো হলেও কেউই তা পাননি বলে কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী জানিয়েছেন।

এসব বিলের ভাউচারগুলো এ প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। ভাউচারগুলো যাচাই করে দেখা যায়, যেসব প্রতিষ্ঠান থেকে মালামাল ক্রয় করা হয়েছে, সেসব প্রতিষ্ঠানের কোন অস্তিত্ব নেই। গত ১৬ মাসে আউটসোর্সিং কর্মচারী হিসেবে ১৮/২০ জনকে মোটা অঙ্কের উৎকোচের বিনিময়ে নিয়োগ দিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এসময়ে বিভিন্ন কাজের অজুহাতে প্রায় ৩০০ দিন ঢাকায় অবস্থান করে তিনি টিএডিএ বাবদ প্রায় ৪০ লাখ টাকা নিয়েছেন। তবে এমডি দাবি করেন কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়েই তিনি দাপ্তরিক কাজেই ঢাকায় অবস্থান বা যাতায়াত করেন।

এদিকে, খনির উৎপাদন ও রক্ষণাবেক্ষণ কাজে নিয়োজিত চীনা ঠিকাদার এক্সএমসি-সিএমসি কনসোর্টিয়াম ২০১৭ সালে সম্পাদিত তৃতীয় চুক্তির সমূদয় অর্থ এবং চতুর্থ চুক্তির ১২.৯১ মিলিয়ন মার্কিন ডলারসহ ১৯.৭১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বকেয়া পাওনা ডিসেম্বর ২০২৩-এর মধ্যে বৈদেশিক মুদ্রায় পরিশোধ করা না হলে চাইনিজ জনবল প্রত্যাহারসহ কয়লা উৎপাদন বন্ধ করে দিবে বলে গত ৮ নভেম্বর লিখিতভাবে জানিয়েছে খনি কর্তৃপক্ষকে। এ অবস্থায় ৫০ হাজার মার্কিন ডলার ব্যয় করে ১৭ নভেম্বর থেকে ২৮ নভেম্বর পর্যন্ত এমডি সাইফুল ইসলামসহ ৬ কর্মকর্তা ফ্যাক্টরি পরিদর্শনের নামে চায়না সফর করেন।

এমডি’র সফরসঙ্গীরা হলেন- খান মো. জাফর সাদিক মহাব্যবস্থাপক (মাইন অপারেশন), নজমুল হক, মহাব্যবস্থাপক (মার্কেটিং), ইউনোছ আলী, ব্যবস্থাপক (মাইন ডেভেলপমেন্ট) ও শাফায়েত আলী, ব্যবস্থাপক (ডিএলও) ও পেট্রোবাংলার ডিজিএম মামুন। তবে এক্সএমসি-সিএমসি চীন সফরের ব্যয় বহন করে বলে সাইফুল ইসলাম দাবি করেন। যদিও তা সঠিক নয়।

গত তিনমাস ধরে অনুসন্ধান করে এমডি সাইফুল ইসলামের ব্যাংক হিসাবে (সোনালী ব্যাংক, বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি শাখা, হিসাব নং ১৮৩১৭৩৪০০২৪৯২) অস্বাভাবিক লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। কয়েক বছরে ওই হিসাব নম্বরে এক কোটি ৬০ লাখ টাকার বেশী শুধু নগদ অর্থ জমা করা হয়েছে।

বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানী লিমিটেডের এমডি মো. সাইফুল ইসলাম সরকার অভিযোগগুলো অস্বীকার করে গত রোববার রাতে মোবাইলফোনে ভোরের কাগজকে জানান, আউটসোর্সিং কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে উপরমহলের মৌখিক নির্দেশনায়, কোন উৎকোচের বিনিময়ে নয়। অন্য কেউ যদি সুবিধা নিয়ে থাকেন তা তিনি বলতে পারবেন না।

কোম্পানীর ২৪তম বার্ষিক সাধারণ সভার কেনাকাটাসহ যাবতীয় ব্যয় ও কার্য সম্পাদনের জন্য ৫ জন কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করেছেন। এখানে দূর্নীতির কোন সুযোগ নেই।

এক্সএমসি-সিএমসি’র পাওনা পরিশোধের জন্য কয়েকদফা অগ্রণী ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানানো হলেও তা পরিশোধ করছে না। বিষয়টি পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যানকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App