×

সারাদেশ

কুয়াকাটায় গঙ্গাস্নান ও রাসপুর্নিমা উৎসব অনুষ্ঠিত

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৭ নভেম্বর ২০২৩, ০৩:০১ পিএম

কুয়াকাটায় গঙ্গাস্নান ও রাসপুর্নিমা উৎসব অনুষ্ঠিত

ধর্মীয় ভাব গাম্ভীর্য এবং ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্যদিয়ে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে অনুষ্ঠিত হয়েছে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের গঙ্গাস্নান ও রাস উৎসব। সোমবার (২৭ নভেম্বর) ভোরে হাজার হাজার পুন্যার্থীরা সমুদ্র স্নানের মাধ্যমে এ ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান সম্পন্ন করেন।

রবিবার (২৬ নভেম্বর) রাত আটটায় পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক মো. নুর কুতুবুল আলম রাস পুজা ও মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। এ উপলক্ষে কুয়াকাটা সৈকতের কোলঘেঁষে অবস্থিত শ্রী শ্রী রাধাকৃষ্ণ মন্দির ও তীর্থযাত্রী সেবাশ্রমে এক আলোচনা সভার আয়োজন করে আয়োজক কমিটি। শ্রী শ্রী রাধা কৃষ্ণ মন্দির ও তীর্থ যাত্রী সেবাশ্রের সভাপতি বিপুল চন্দ্র হাওলাদার এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক নুর কুতুবুল আলম।

বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন ট্যুরিস্ট পুলিশ কুয়াকাটা রিজিওনের পুলিশ সুপার মো. আবুল কালাম আজাদ, কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. জাহাঙ্গীর হোসেন, কুয়াকাটা পৌর মেয়র মো. আনোয়ার হাওলাদার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (কলাপাড়া সার্কেল) বিমল কৃষ্ণ, কলাপাড়া থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. ফেরদৌস আলম প্রমুখ।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক নুর কুতুবুল আলম বলেন, রাস পুজা হিন্দু ধর্মাবলম্বী মানুষদের হলেও উৎসব সকল ধর্ম বর্নের মানুষের। হরতাল অবরোধের মধ্যেও সুন্দর এবং সুশৃঙ্খলভাবে অনুষ্ঠান আয়োজনে প্রমানিত হয়েছে অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে এখন দেশ ও দেশের মানুষ নিরাপদ রয়েছে। বিপুল সংখ্যক পুন্যার্থী ও দর্শনার্থীদের আগমন তারই প্রমাণ করে। রাজনৈতিক অস্থিরতার জন্য ব্যাপক আয়োজন না থাকলেও উৎসবের কোন কমতি নেই। আগামীতে ব্যাপকভাবে যাতে রাস উৎসব আয়োজন হয় এ জন্য জেলা প্রশাসন সহযোগিতা করবে।

এর আগে রবিবার সন্ধায় ভগবানকে আমন্ত্রণ, মঙ্গলঘট স্থাপন ও সন্ধ্যা আড়তির মধ্য দিয়ে শুরু হয় রাসলীলার ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা। পরে ভক্তদের মাঝে প্রসাদ বিতরণ করা হয়। রাতভর চলে ভগবাত পাঠ, সঙ্গীতানুষ্ঠান ও মহানাম কীর্তন। এ রাস উৎসবে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে মতুয়া মিশনের কয়েক হাজার মানুষ কুয়াকাটায় সমবেত হয়। পর্যটন মোটেল প্রাঙ্গণে আলাদাভাবে মতুয়া মহা সম্মেলন করে তারা। সেখানে রাতভর ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান শেষে ভোরে সমুদ্র স্নান সেরে নিজ নিজ গন্তব্যে ফিরে যায়।

রাসলীলা উদযাপনে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে রবিবার বিকাল থেকেই ভিড় জমায় ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে সকল শ্রেণিপেশার হাজার হাজার মানুষ। মেলায় অর্ধ লক্ষাধিক লোকের সমাগম হয়েছে বলে ধারণা আয়োজক কমিটির। তবে অবরোধের কারণে লোক সমাগম কম হয়েছে বলে জানান তারা।

অপরদিকে কুয়াকাটা পৌরসভা ও পুজা উৎযাপন কমিটি আলাদাভাবে সাংস্কৃতিক উৎসবের আয়োজন করে। নকুল কুমার বিশ্বাস সহ দেশ বরন্য শিল্পীদের গানে মেতে ওঠে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত এলাকা। সারারাত আনন্দে উল্লাসে সময় পার করছেন হাজার হাজার দর্শক শ্রোতারা।

তবে আবাসিক হোটেল মোটেল ওনার্স এসোসিয়েশন সুত্রে জানাগেছে, আগত পুন্যার্থী ও দর্শনার্থীরা বেশির ভাগই বরিশাল অঞ্চলসহ কাছাকাছি এলাকার। সারারাত ঘোরাঘুরি এবং বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সময় কাটিয়ে সকালে নিজ নিজ গন্তব্যে ফিরে যায়। আবাসিক হোটেল গুলোর বেশির ভাগই খালি ছিল। তবে খাবার হোটেল গুলোতে প্রচুর পরিমাণ বেচাবিক্রি হয়েছে।

এদিকে মেলাকে ঘিরে প্রতি বছরের ন্যয় এবারও হাজারেরও বেশি ভ্রাম্যমাণ দোকান বসে। এসব দোকানে বাচ্চাদের খেলনাসহ নানা জিনিসপত্রের পসরা সাজিয়ে বসেন ব্যবসায়ীরা। বেচাকেনাও খুবই ভালো হয়েছে। ব্যবসায়ীদের সুত্রে জানাগেছে মেলায় দুইদিনে ৫০ কোটি টাকারও অধিক বেচাকেনা হয়েছে। সব মিলিয়ে পূণ্যার্থী এবং দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখরিত ছিল সৈকতের বিস্তীর্ণ এলাকা।

আগত এ সকল দর্শনার্থীদের নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তায় মোতায়েন করা হয় আইনশৃংখলা বাহিনীর বিপুল সংখ্যক সদস্যকে। সোমবার অতি প্রত্যুষে হিন্দু সম্প্রদায়ের নর-নারীদের পূণ্যস্নানের মধ্য দিয়ে সম্পন্ন হলো হিন্দুধর্মীয় এই উৎসবের। গঙ্গাস্নান সোমবার শেষ হলেও মেলা চলবে মঙ্গলবার পর্যন্ত। তিনদিনের এই রাস উৎসবে হাজার হাজার মানুষের সমাগম হলেও কোথাও কোন ধরনের বিশৃঙ্খলা বা অঘটনের খবর পাওয়া যায়নি। সুশৃঙ্খল ও সুন্দরভাবে সম্পন্ন হয়েছে রাস উৎসব।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App