×

সারাদেশ

নীলফামারীতে আপন চাচার প্রতারণায় নি:স্ব ভাতিজা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৩ নভেম্বর ২০২৩, ০৬:০৯ পিএম

নীলফামারীতে আপন চাচার প্রতারণায় নি:স্ব ভাতিজা

ভুক্তভোগী ফরহাদ নওরোজ নাহিন

নীলফামারীতে আপন চাচার প্রতারণায় নি:স্ব ভাতিজা

নীলফামারীতে জমি-জমা সংক্রান্ত বিষয়ে আপন চাচার কৌশলগত প্রতারণায় প্রায় সব হারিয়ে নি:স্ব ভাতিজা ফরহাদ নওরোজ নাহিন। প্রভাবশালী প্রতিপক্ষের বাধায় পিতার সম্পত্তির ওয়ারিশ হিসেবে খাজনা-খারিজ নিয়েও বিপাকে পড়েছেন নাহিন। আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে এর প্রতিকার চেয়ে চাচার বিরুদ্ধে করেছেন প্রতারণার মামলা।

এদিকে, আপসের শর্তে প্রতারণার মামলায় জামিন প্রাপ্ত হলেও, শর্তের কোন তোয়াক্কা করছেন না অভিযুক্ত চাচা একেএম আমিনুল হক। ২০১৩ সালে ৫৯৫৬ নম্বর বণ্টন নামা দলিল বিধি মোতাবেক বণ্টন মুলে পিতার সম্পত্তি কোন শর্ত ছাড়াই মাসহ আপন ভাই-বোনদের মাঝে ভাগ-বাটোয়ারার পর নিজ নিজ নাম খারিজ করে ভোগদখলকারী হবার পরেও চাচার কৌশলগত প্রতারণায় পুন:রায় নতুন করে জমির অংশ দাবী করছেন আপন বোন ও বোনের স্বামী। দাবী করছেন টাকাও। এ মর্মে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী ফরহাদ নওরোজ নাহিন।

মামলার আরজি সূত্রে জানা যায়. ২০১০ সালে আজিজুল হক ওরফে মাটিয়া এর মৃত্যুর পর পিতার রেখে যাওয়া সম্পত্তিতে 'নাহিন এগ্রো' প্রতিষ্ঠা করেন ফরহাদ নওরোজ নাহিন। ২০২১সালে তার অগ্রযাত্রা বিভিন্নভাবে বাঁধাগ্রস্ত করেন তার চাচা আমিনুল। পরবর্তীতে ২০১৩ সালে বিধি মোতাবেক ৫৯৫৬ নম্বর বণ্টন নামা দলিল মুলে মৃত আজিজুল হক ওরফে মাটিয়ার রেখে যাওয়া সম্পত্তি ভাগ-বাটোয়ারা করে নেন ওয়ারিশ ফরহাদ নওরোজ নাহিনসহ অন্যারা। উক্ত বণ্টন নামা দলিল সম্পাদিত হওয়ার পর নিজ নিজ নাম খারিজ করে ভোগদখলকারী হন মৃত আজিজুল হকের ওয়ারিশরা। পরবর্তীতে ইটাখোলা মৌজায় চাচাসহ আপন-ভাই ও বোনদের জমিও সাব কবলা মুলে ক্রয় করেন ফরহাদ নওরোজ নাহিন। পিতার সম্পত্তির হিস্যা আর সাব কবলা মুলে ক্রয়কৃত সম্পত্তিতে খাজনা-খারিজ ও নাম জারীতে প্রভাবশালী প্রতিপক্ষের দ্বারা বাধাগ্রস্ত হয়ে বিপাকে পড়েছেন তিনি।

ভোরের কাগজকে দেয়া একান্ত সাক্ষাতকারে ভুক্তভোগী ফরহাদ নওরোজ নাহিন বলেন, ‘আমার পিতা মরহুম আজিজুল হক ওরফে মাটিয়া। আমার পিতার মৃত্যুর পর তার রেখে যাওয়া সম্পত্তি আমরা ২০১৩ সালে বিধি মোতাবেক ৫৯৫৬নং বণ্টননামায় দলিল মুলে ভাগ-বাটোয়ারা করে নিয়েছিলাম। এরপর ইটাখোলা মৌজায় আমার চাচা এ.কে.এম আমিনুল হকসহ আমার ভাইবোনদের জমিও আমি সাব-কবলা মুলে কিনে নিয়েছিলাম। আমার ফুপুরা, আমার বোনের স্বামী যারা বিএস রেকর্ডে মালিক নন, আমার বোনের স্বামী যিনি আমার বোনের স্বাক্ষর নিয়ে ২০১৩ সালের বিধি মোতাবেক সম্পাদিত ৫৯৫৬ বন্টননামা দলিলে বাতিল ও আমার পৈত্রিক সূত্রে প্রাপ্ত এবং সাব কবলা মুলে ক্রয় করা বিত্তের খাজনা খারিজ ও নামজারী যাতে করতে না পারি সেজন্য বিভিন্ন অফিস আদালতে দরখাস্ত প্রদান করেন। আমার চাচা সাবেক উপ-সচিব। তিনি আমার পিতার সম্পত্তির ন্যায্য হিস্যা আমাকে বুঝিয়ে না দিয়ে একাই সব ভোগ দখল করে আসছিলেন। আমি বিধি মোতাবেক ন্যায্য হিস্যা দাবি করে চাচার বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি প্রতারণা মামলা করেছি। এর মধ্যে ২০১৯ সালের সিআর ৪৪৭/২০। সেই মামলায় তিনি ৪০৬/২৪০ ধারায় দোষী সাব্যস্ত হয়ে আপোষের শর্তে জামিন প্রাপ্ত হয়ে, ক্ষতিপূরণ বাবদ আমাকে কিছু জমি লিখে দেয়ার অঙ্গীকারে ওই মামলা থেকে অব্যাহতি পান। পরবর্তীতে তিনি যে জমি আমাকে দিয়েছেন সেটিও ত্রুটিপূর্ণ। তিনি আমার ভাই-বোনদের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি করতে যে জমি আমাকে দিয়েছেন, সেই জমি আমার ভাইকে দিয়েছেন, যে জমি আমাকে দিয়েছেন, সেই জমি আমার বোনকে দিয়েছেন। আমাকে জমি দেয়ার পূর্বেই সেই জমি অন্যত্র হস্তান্তর করেছেন। যার কারণে তার নামে নতুন করে আরো দুটি প্রতারণার মামলা দায়ের হয়, যার নম্বর সিআর ১৮৯ এবং সিআর ১১৯।’

জানতে চাইলে, ভুক্তভোগী ফরহাদ নওরোজ নাহিন এর নিয়োগকৃত নীলফামারী জজ কোর্টের আইনজীবী গোলাম মোস্তফা সজীব ভোরের কাগজকে বলেন, ‘আমার মামলার বাদী ফরহাদ নওরোজ নাহিন তিনি তার মৃত পিতার ত্যাক্ত বিত্তের ন্যায্য হিস্যা চেয়ে আপন চাচার কাছে বারবার প্রতারিত হচ্ছেন। বাঁধাগ্রস্ত হচ্ছেন ওয়ারিশ ও সাব কবলা মূলে প্রাপ্ত বিত্তের খাজনা-খারিজ এবং নামজারীতে। যে জমি আমার মামলার ফরহাদ নওরোজ নাহিন এর আপন চাচা এ.কে.এম আমিনুল হক বাদী ফরহাদ নওরোজ নাহিন কে দিয়েছেন, সেই জমি তিনিই তার নামে আবার খারিজের জন্য আবেদন করেছেন। একজন শিক্ষিত মানুষ, যিনি ইতি পূর্বে প্রশাসনের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ছিলেন, তাঁর কাছে একজন আইনজীবী হয়ে আমি এটা আশা করি না। আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে আইনী লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। সরকারের নতুন প্রণীত ভূমি অপরাধ ও প্রতিকার আইনে মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন আমার মামলার বাদী ফরহাদ নওরোজ নাহিন।’

এ বিষয়ে অভিযুক্ত এ.কে.এম আমিনুল হকের সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে, তিনি মিটিং এ ব্যস্ত আছেন বলে সাংবাদিকদের এড়িয়ে যান।

অন্যদিকে, ফরহাদ নওরোজ নাহিন তার পিতার ও আপন চাচা ও ভাই-বোনদের কাছে সাব কবলা মূলে প্রাপ্ত জমি ও সম্পদে গড়ে তোলা নাহিন এগ্রোসহ তার অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে কাজ করছে অত্র এলাকার প্রায় ৫ হাজার পরিবারের প্রায় ২০ হাজার মানুষ। পারিবারিক বিবাদ ভুলে নিজ সন্তান ভেবে সঠিক বণ্টন মুলে প্রাপ্ত হিস্যা বুঝিয়ে দেবেন পিতার সমতুল্য চাচা এমনটাই আশা করছেন ভুক্তভোগী ফরহাদ নওরোজ নাহিনসহ প্রতিষ্ঠানগুলোতে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App