×

সারাদেশ

নীলফামারীতে ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৩ নভেম্বর ২০২৩, ০৩:৩৮ পিএম

নীলফামারীতে ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ

ফিজিওথেরাপিস্ট চিকিৎসক মো. হারুন অর রশিদ এর প্রেসক্রিপশন (বামে) ও ডানে লাল মার্ক করা মো. হারুন অর রশিদ।

নীলফামারীতে ভুল চিকিৎসায় এক রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। নিহতের নাম কাঞ্চন সরকার। এ ঘটনায় ফিজিওথেরাপিস্ট চিকিৎসক মো. হারুন অর রশিদ এর বিরুদ্ধে লিখিত এজাহার দায়ের করেছেন কাঞ্চন সরকারের ভাই চন্দন কুমার সরকার।

এজাহার সূত্রে জানা গেছে, ভুক্তভোগীর বড় ভাই কাঞ্চন সরকার কোমরে আঘাত পেলে ফিজিওথেরাপিস্ট চিকিৎসক মো. হারুন অর রশিদ এর শরণাপন্ন হন। মো. হারুন অর রশিদের ভুল চিকিৎসায় কাঞ্চন সরকারের কোমরে ক্ষতের সংক্রমণ হয়ে শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। প্রথমে নীলফামারী জেনারেল হাসপাতালে নেয়া হলে সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক কাঞ্চন সরকারের উন্নত চিকিৎসার জন্য দ্রুত রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন। এরপর সেখানেই চিকিৎসারত অবস্থায় মারা যান কাঞ্চন সরকার।

এই প্রসঙ্গে কাঞ্চন সরকারের ভাই চন্দন কুমার সরকার সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করে বলেন, “আমার ভাই মৃত কাঞ্চন সরকার কোমড়ে আঘাত প্রাপ্ত হয়ে ক্ষত হয়। আমি ফিজিওথেরাপিস্ট ডাক্তার হারুন অর রশিদ এর কাছে নিয়ে যায়। তিনি শুরুতেই বলেন, আমি আপনার ভাইকে ওষুধ আর ইনজেকশন দিবো পুরোপুরি ভাল হয়ে যাবে। কিন্তু আমার কাছে চিকিৎসা করার পর অন্য কোন ডাক্তারের কাছে যাওয়া যাবে না। আমি আমার ভাইয়ের চিকিৎসা মো.হারুন অর রশিদের কথামত শুরু করি। হারুন অর রশিদ আমার ভাইকে একের পর এক ইনজেকশন ও প্রেসক্রিপশন ভর্তি ওষুধ দিয়ে বিছানায় শুয়ে থাকার পরামর্শ দেন। দীর্ঘ এক মাস তার চিকিৎসার পর আমার ভাইয়ের শারিরীক কোনো উন্নতি না হয়ে বরং অবনতির দিকে যেতে থাকে। তাই আমি আমার ভাইকে দ্রুত নীলফামারী জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন। সেখানে চিকিৎসারত অবস্থায় আমার ভাইয়ের মৃত্যু হয়।

এদিকে, অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মো. হারুন অর রশিদ সাংবাদিকদের দেখেই উপর ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন এবং ‘কি করার আছে করেন’ বলে সাংবাদিকদের সাফ জানিয়ে দেন”।

এই প্রসঙ্গে জেলার কয়েকজন ফিজিওথেরাপিস্ট নাম না প্রকাশ করার শর্তে ভোরের কাগজকে বলেন, “ফিজিওথেরাপি হলো ভৌত চিকিৎসা পদ্ধতি। যেখানে বল, তাপ, চাপ, গতি, তরঙ্গ, শক্তি, পানি, শৈত্য, বিদ্যুৎ ইত্যাদি বিভিন্ন ভৌত উপাদান ও পদ্ধতি দিয়ে চিকিৎসা করা হয়। আর এ্যালোপ্যাথি সিস্টেম অব মেডিসিন হলো এ্যালোপ্যাথিক ড্রাগ দিয়ে চিকিৎসা করা হয়। তাই আমরা যারা ফিজিওথেরাপিস্ট রয়েছি জিওথেরাপিস্ট রিলেটেড ওষুধ লিখতে পারবো। এছাড়াও অর্থোপেডিক কনসালটেন্ট এর পরামর্শে দু-একটা ‘পেইন কিলার’ লিখতে পারবো। কারণ এ্যালোপ্যাথি, হোমিওপ্যাথি এসব হলো ফার্মাসিউটিক্যাল চিকিৎসা পদ্ধতি। আর ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা পদ্ধতি হলো নন-ফার্মাসিউটিক্যাল চিকিৎসা পদ্ধতি’।

এই প্রসঙ্গে জেলা সিভিল সার্জন ডা. মো. হাসিবুর রহমান ভোরের কাগজকে জানান, “বাংলাদেশ মেডিকেল ওডেন্টাল কাউন্সিল আইন অনুযায়ী ফিজিওথেরাপিস্টগণ নামের আগে ‘ডাক্তার’ লিখতে পারবেন না। তবে, ২০১৮ সালের বাংলাদেশ রিহ্যাবিলিটেশন কাউন্সিল আইন অনুযায়ী ব্যাচেলর অফ ফিজিওথেরাপি (বিপিটি) ডিগ্রীধারীগণ নামের পূর্বে ডাক্তার লিখছেন। যেহেতু ফিজিওথেরাপি হলো একটি ভৌত চিকিৎসা পদ্ধতি, সেক্ষেত্রে ফিজিওথেরাপিস্টগণ ফিজিওথেরাপিস্ট রিলেটেড দু-একটা ওষুধ লিখতে পারবে। তবে কোনো এ্যালোপ্যাথিক ড্রাগ (এন্টিবায়োটিক) লিখতে পারবেন না”।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরো বলেন, “স্পোর্টস ইনজুরি বিশেষজ্ঞ হলেন তারাই, যারা মূলত অর্থোপেডিক্স ডাক্তার। এ বিষয়ে যাদের রয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে গ্রহণ করা প্রশিক্ষণের উচ্চতর সনদ। এরকম কোন অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে”।

তবে, আইন অনুযায়ী ফিজিওথেরাপিস্টগণ কোনো ভাবেই প্রেসক্রিপশনে এ্যালোপ্যাথিক ড্রাগ (এন্টিবায়োটিক) ওষুধ লিখতে পারেন না। সেটির কোনো তোয়াক্কা না করেই জেলার বিভিন্ন স্থানে চেম্বার খুলে ইনজেকশনের ব্যবহার আর প্রেসক্রিপশন ভর্তি ওষুধ লিখে অবাধে করছেন বিভিন্ন জটিল ও কঠিনসহ সর্ব রোগের চিকিৎসা। এরফলে, শারিরীক ও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। এসব বন্ধে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছে এ জেলার সচেতন মহল।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App