×

সারাদেশ

দেশ থেকে বিলুপ্তপ্রায় বন্যপ্রাণী পাচার, সক্রিয় আন্তর্জাতিক চক্র

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৪ নভেম্বর ২০২৩, ১০:৩৮ পিএম

দেশ থেকে বিলুপ্তপ্রায় বন্যপ্রাণী পাচার, সক্রিয় আন্তর্জাতিক চক্র

ছবি: ভোরের কাগজ

বাংলাদেশের নানা বনাঞ্চল থেকে বিলুপ্ত প্রায় প্রজাতির বিভিন্ন প্রাণী অবৈধভাবে পাচার হয়ে ইউরোপ-আমেরিকা পাচার হয়ে যাচ্ছে। গত ৫ দিনেই শুধু চট্টগ্রামেই ৫টি ‘ মুখপোড়া হনুমান’ ও দুইটি ‘ গোরখোদক’ উদ্ধার করেছে পুলিশ। পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে এগুলো সংগ্রহ করে সংঘবদ্ধ পাচারকারিদল অবৈধভাবে সীমান্তপথে ভারতে পাচার করে দেয়। আর সেখান থেকেই আমেরিকা ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে এসব মূল্যবান বিলুপ্ত প্রায় বন্যপ্রাণী পাচার হয়ে যাচ্ছে। এই পাচারকারি চক্রের সাথে আন্তর্জাতিক চক্র জড়িত রয়েছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) মোস্তাফিজুর রহমান। সিএমপি’র কর্মকর্তারা জানান, শুক্রবার (৪ নভেম্বর) বিকেলে নগরীর বাকলিয়া থানাধীন শাহ আমানত সেতু এলাকা থেকে প্রায় বিলুপ্ত প্রজাতির পাঁচটি ‘মুখপোড়া হনুমান’ উদ্ধার করেছে বাকলিয়া থানা পুলিশ। এই বন্যপ্রাণী পাচারে জড়িত থাকার অভিযোগে সিএনজি অটোরিকশা চালকসহ ৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর আগে গত ৩০ অক্টোবর একই এলাকা থেকে বিপন্ন প্রজাতির দুইটি গোর খোদককে উদ্ধার করে ছিল পুলিশ। শনিবার (৪ নভেম্বর) দুপুরে নগরীর মোমিন রোডে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানান উপ কমিশনার (দক্ষিণ) মোস্তাফিজুর রহমান। গ্রেফতারকৃতরা হলেন, কক্সবাজার জেলার চকরিয়া থানার ফাসিয়াখালী ইউনিয়নের দিগরপান খালী স্কুলের পাশে মৃত আবদুল মালেকের ছেলে মো. সেলিম (৫৩), একই থানার চকরিয়ার পৌরসভার মৌলভীর চরের আবুল খায়েরের বাড়ীর ফয়েজ আহাম্মদের ছেলে নুরুল কবির (৩১) ও একই জেলার মহেশখালী থানার শাপলাপুর বাড়িয়াছড়ি এলাকার আলতাফ হোসেনের ছেলে সালাউদ্দিন কাদের প্রকাশ হেলাল উদ্দিন (৩৫)। পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, গ্রেফতার তিনজনের বিরুদ্ধে বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনের অনুযায়ী গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হবে। প্রাণীগুলোকে আদালতের মাধ্যমে আইন অনুযায়ী বন বিভাগের কাছে হস্তান্তর করা হবে। গ্রেফতার সালাউদ্দীন কাদের মহেশখালী থানায় তিনটি মামলা রয়েছে। পুলিশ কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, সাম্প্রতিক বন্যপ্রাণী বিলুপ্ত ও পাচার প্রতিরোধে বিভিন্ন সংস্থার বৈশ্বিকভাবে কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থার (ইন্টারপোল) তথ্য অনুযায়ী, শুক্রবার বিকেলে সাড়ে তিনটার দিকে নগরের বাকলিয়া থানার নতুন ব্রিজ এলাকায় অভিযান চালিয়ে পাঁচটি মুখপোড়া হনুমান উদ্ধার করা হয়। পাচারকারীরা পার্বত্য চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার থেকে এসব বিরল বন্যপ্রাণী সংগ্রহ করে। এরপর বিভিন্ন জনের হাত ধরে ভারত সীমান্ত হয়ে ইউরোপ-আমেরিকা পাচার হচ্ছে। সিএমপির অতিরিক্ত উপ পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) নোবেল চাকমা পাচার চক্রে আরও যারা জড়িত তাদেরকেও গ্রেফতার করতে পুলিশের অভিযান চলছে জানিয়ে বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পাচারকারীরা জানিয়েছে কক্সবাজারের মহেশখালী থেকে হনুমান পাঁচটি চট্টগ্রামে নিয়ে আসা হয়। এরপর চট্টগ্রামের শাহ আমানত সেতু পার হয়ে বাকলিয়ায় ইমরান নামে এক ব্যক্তির কাছে দেওয়ার কথা ছিল। ইমরানকে গ্রেফতার করতে কয়েকটি স্থানে অভিযান চালানো হয়েছে। উদ্ধার হওয়া ‘মুখপোড়া হনুমান’ গুলো ভারতের সীমান্ত দিয়ে পাচারের পরিকল্পনা ছিল। বাকলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রহিম বলেন, গ্রেপ্তার তিন জনের মধ্যে মো. সেলিমকে বাঁশখালী থানায় চারটি ধনেসসহ গত ২৪ মে গ্রেফতার হওয়ায় ভ্রমমাণ আদালতের মাধ্যমে বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন ২০১২ সাল মোতাবেক ৬ মাসের কারাদণ্ড প্রদান করে। ১ মাস ২ দিন কারাভোগ করার পরে কারাগার থেকে বের হয়ে পুনরায় বন্যপ্রাণী পাচারে জড়িয়ে পড়ে। কম পরিশ্রমে বেশি টাকার লোভে এই কাজটা করে থাকে। এই পুলিশ কর্মকর্তা আরো বলেন, গত ৩০ অক্টোবর মহা-বিপন্ন দুইটি গোরখাদকসহ কুমিল্লার দেবীদ্বার উপজেলার সুবিল ফতেয়াবাদ এলাকার বাবুল মিয়ার ছেলে আমজাদ হোসেন ওরফে আমজু (২৬) ও কর্ণফুলী থানার শিকলবাহা কলেজবাজার এলাকার জাহাঙ্গীর আলমের ছেলে মো. সাকিব (২২)কে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। সেগুলো খুলনায় নিয়ে এরপর বিদেশে পাচারের পরিকল্পনা ছিল তাদের। জানতে চাইলে চট্টগ্রামের বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ কর্মকর্তা দীপান্বিতা ভট্টাচার্য বলেন, এই ‘ মুখপোড়া হনুমান ও ‘গোরখোদক’ বিরল প্রজাতির প্রাণী। ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচারের-আইইউসিএন করা তালিকা অনুযায়ী বিলুপ্ত প্রজাতির প্রাণী হিসেবে লিপিবদ্ধ। দেখতে অনেকটা বন্যশুকুরের মতই। তবে এর মুখ বন্যশুকরের চেয়ে খানিকটা সরু এবং পেছনের দিকটা বন্যশুকুরের চেয়ে অনেক বেশি স্থুলাকৃতির। এরা সাধারণত পচা জীবজন্তুর মাংস খেয়ে থাকে। এমনকি কবর খুঁড়ে মানুষের মরদেহও ভক্ষণ করে থাকে। এ কারণে এদের গোরখোদক বলা হয়ে থাকে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App