×

সারাদেশ

মাগুরায় গাও গেরামের ঐতিহ্য লাঠি খেলা ধরে রাখার চেষ্টা এলাকাবাসীর

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০১ নভেম্বর ২০২৩, ১১:২০ পিএম

মাগুরায় গাও গেরামের ঐতিহ্য লাঠি খেলা ধরে রাখার চেষ্টা এলাকাবাসীর

ছবি: ভোরের কাগজ

মাগুরায় গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য জনপ্রিয় লাঠি খেলা উপভোগ করতে হাজারো মানুষের উপচে পড়া ভিড়। নানা বয়সী মানুষের উপস্থিতিতে জমজমাট ও উৎসবমূখর পরিবেশের সৃষ্টি হয় এলাকাজুড়ে। বুধবার (১ নভেম্বর) বিকেলে আবহমান গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী এই লাঠি খেলার জমজমাট আসর বসেছিল মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার বাবুখালি ইউনিয়নের ডুমুরশিয়া ডি.সি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের খেলার মাঠে।

গাও গেরামের ঐতিহ্য ধরে রাখার চেষ্টায় ডুমুরশিয়া বাজার বণিক সমিতি এই খেলার আয়োজন করে। শতবছরের দৃষ্টিনন্দন এই আয়োজন দেখতে হাজির হয়েছিল পার্শ্ববর্তী শালিখা, শ্রীপুর ও মধুখালী উপজেলাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা নানা বয়সের অসংখ্য দর্শক। নারী দর্শকদের উপস্থিতিও ছিলো চোখে পড়ার মতো। বার্ষিক এই লাঠি খেলা ও গ্রামীণ মেলা বসে প্রতিবছর বাংলা মাসের ১৬ই কার্তিক, এবছর ১০৩তম। মেলায় নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীসহ নানা ধরণের পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেছে বাজার ও খেলার মাঠ এলাকাজুড়ে।

আবহমান গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী জনপ্রিয় খেলাগুলোর মধ্যে অন্যতম লাঠিখেলা। তবে কালের পরিক্রমায় দিনদিন হারিয়ে যেতে বসে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য জনপ্রিয় এই খেলাটি। একই সঙ্গে এই খেলার সাথে সংশ্লিষ্ট যারা তাদেরও জীবন-জীবিকা হুমকির মুখে পড়েছে। অনেকেই এ পেশা পরিবর্তন করে ঝুকে পড়েছে অন্য পেশায়। ছেড়ে দিয়েছে ঐতিহ্যবাহী পূর্বপুরুষের এ পেশা। তারপরেও অনেকেই ধরে রাখার চেষ্টা করে চলেছেন।

সংস্কৃতির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এক বৈচিত্র্যময় দেশ। এ দেশে রয়েছে হাজার রকমের গ্রামীণ সংস্কৃতি। লাঠিখেলা যার মধ্যে অন্যতম একটি গ্রামীণ সংস্কৃতি। আর এই খেলাকেই আয়ের অবলম্বন হিসেবে বেঁচে নিয়ে ছিল কিছু পরিবার। মানুষকে আনন্দ দিয়ে উপার্জন করে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করতো। কিন্তু এখন বিলুপ্তের পথে প্রায় এ খেলাটি।

তবুও শত প্রতিকূলতার মাঝেও এলাকার অনেকেই বাঙালির গ্রামীণ সংস্কৃতি আর ঐতিহ্যকে লালন করার চেষ্টা করে। তারই ধারাবাহিকয়তায় প্রাচীন এই ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রাখতে উপজেলার ডুমুরশিয়া বাজার বণিক সমিতি প্রতিবছর ঐতিহ্যবাহী এই লাঠি খেলার আয়োজন করে থাকে।

বর্ণিল সাজে লাঠি হাতে ১৩টি দল অংশ নেয় এই খেলায়। ঢাকঢোল আর বাঁশির তালে লাঠিয়ালদের লাঠির চক্রে আনন্দে উল্লাসে মেতে উঠে আমুদে দর্শক। নানা রঙের লাঠি ও রং-বেরঙের পোশাক পরে মাঠে নামেন লাঠিয়ালেরা। প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে চলে লাঠির ব্যবহার। ত্বকে মুখে ছিল ঠেকাও লাঠি। আঘাত লাগবেনা কিন্তু পয়েন্ট পেতে হবে এটায় খেলা। উপস্থিত দর্শকদের উচ্ছাস প্রমাণ করে দেয় লাঠি খেলা নিয়ে মানুষের আগ্রহ এখনো অটুট।

তবে লাঠি খেলার নতুন দল তৈরী করা সম্ভব হচ্ছে না। এ জন্য লাঠি খেলার আয়োজন করা যায় না। কিন্তু যারা লাঠি খেলেন, তাদের এই গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য ধরে রাখার আগ্রহ আছে বলে মন্তব্য করেন আয়োজক কমিটির সভাপতি ও ডুমুরশিয়া বাজার বণিক সমিতির সভাপতি মোঃ আব্দুর রশিদ ভুলু।

লাঠিয়াল গফুর সরদার বলেন, ছোট বেলা পূর্বপুরুষদের খেলা দেখে লাটি খেলায় আগ্রহ হয়। তারপর থেকে এই ঐতিহ্যকে ধরে রাখার চেষ্টা করি। কিন্তু এখন আর এ খেলার তেমন আয়োজন করা হয় না। তবে প্রতিবছর কার্তিক মাসের ১৬ তারিখে এখানে এসে ভালো লাগে। এতে নতুন প্রজন্মের মধ্যেও আগ্রহ সৃষ্টি হয়।

বাবুখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মীর সাজ্জাদ আলী জানান, বর্তমান ক্রিকেট ও ফুটবলের জনপ্রিয়তায় কোণঠাসা হয়ে পড়েছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী লাঠিখেলা। আমাদের পুরনো এই ঐতিহ্য ৬০-এর দশক থেকে প্রচলিত ও জনপ্রিয়। এই লাঠি খেলাকে আজও গ্রাম বাংলার বুকে ধরে রাখতে স্থানীয়দের পাশাপাশি সরকারকেও এগিয়ে আসার আহবান।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App